মহামারীতে ধস নামতে যাচ্ছে বৈশ্বিক উত্তোলনে

কয়েক বছর ধরে প্রাকৃতিক গ্যাসের বৈশ্বিক উত্তোলন দ্রুতগতিতে বাড়ছিল। নভেল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের আগ পর্যন্ত খাতসংশ্লিষ্টরা ধারণা করছিলেন, এ বছরও তা অব্যাহত থাকতে পারে। তবে মহামারীর পর অপরিশোধিত জ্বালানি তেলসহ অন্যান্য জ্বালানি পণ্যের মতো প্রাকৃতিক গ্যাসের বাজারও বড় ধাক্কা খেয়েছে। মহামারীর জের ধরে চলতি বছর প্রাকৃতিক গ্যাসের বৈশ্বিক উত্তোলন ২ দশমিক ৬ শতাংশ কমে আসতে পারে। নরওয়েভিত্তিক জ্বালানি বাজার বিশ্লেষণকারী প্রতিষ্ঠান রাইস্টার্ড এনার্জি সম্প্রতি এ পূর্বাভাস দিয়েছে। খবর রাইস্টার্ড এনার্জি।

নভেল করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের আগে রাইস্টার্ড এনার্জি প্রাক্কলন করেছিল, চলতি বছর প্রাকৃতিক গ্যাসের বৈশ্বিক উত্তোলন রেকর্ড বেড়ে ৪ লাখ ২৩ হাজার ৩০০ কোটি ঘনমিটারে উন্নীত হতে পারে। যেখানে ২০১৯ সালে বিশ্বজুড়ে মোট ৪ লাখ ৬ হাজার ৯০০ কোটি ঘনমিটার প্রাকৃতিক গ্যাস উত্তোলন হয়েছিল। তবে পরিস্থিতি পাল্টেছে। কভিড-১৯ প্রাকৃতিক গ্যাসের বাজারে দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলতে যাচ্ছে বলে মনে করছেন খাতসংশ্লিষ্টরা। ফলে সম্প্রতি আগের পূর্বাভাসে সংশোধন এনেছে প্রতিষ্ঠানটি।

নতুন পূর্বাভাসে ২০২০ সালে প্রাকৃতিক গ্যাসের বৈশ্বিক উত্তোলন পূর্বাভাস কমিয়ে ৩ লাখ ৯৬ হাজার ২০০ কোটি ঘনমিটারে নামিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। শুধু এ বছর নয়, আগামী বছরও জ্বালানি পণ্যটির বৈশ্বিক উত্তোলন তুলনামূলক বাড়লেও ২০১৯ সালের সমপর্যায়ে উন্নীত হবে না বলে জানিয়েছে রাইস্টার্ড এনার্জি। তথ্যমতে, ২০২১ সালে পণ্যটির বৈশ্বিক উত্তোলন দাঁড়াতে পারে ৪ লাখ ১ হাজার ৫০০ কোটি ঘনমিটারে। তবে ২০২২ সালে পণ্যটির উত্তোলন বেড়ে ৪ লাখ ৯ হাজার ৪০০ কোটি ঘনমিটার উন্নীত হতে পারে।

প্রাকৃতিক গ্যাস ক্ষেত্র ও অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের খনি উভয় স্থান থেকেই পণ্যটির উত্তোলন কমে আসতে পারে। মহামারীর আগে ধারণা করা হয়েছিল, প্রাকৃতিক গ্যাস ক্ষেত্রগুলো থেকে এবার মোট ৩ লাখ ৬৮ হাজার ৭০০ কোটি ঘনমিটার প্রাকৃতিক গ্যাস উত্তোলন হতে পারে। তবে সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে রাইস্টার্ড এনার্জি জানিয়েছে, এ খাতটি থেকে চলতি বছর পণ্যটির উত্তোলন দাঁড়াতে পারে ৩ লাখ ৪৪ হাজার ৫০০ কোটি ঘনমিটার। ২০১৯ সালে যার পরিমাণ ছিল ৩ লাখ ৫২ হাজার ১০০ কোটি ঘনমিটার। ২০২১ ও ২০২২ সালে পণ্যটির উত্তোলন বেড়ে যথাক্রমে ৩ লাখ ৪৮ হাজার ৫০০ ও ৩ লাখ ৫৫ হাজার ১০০ কোটি ঘনমিটারে উন্নীত হতে পারে।

সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের খনি থেকে উত্তোলিত প্রাকৃতিক গ্যাসের উত্তোলন। রাইস্টার্ড এনার্জির তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর এ খাতটি থেকে মোট ৫১ হাজার ৭০০ কোটি ঘনমিটার প্রাকৃতিক গ্যাস উত্তোলন হতে পারে, আগের বছরের তুলনায় যা ৫ দশমিক ৫ শতাংশ কম। ২০১৯ সালে জ্বালানি তেলের কূপ থেকে পণ্যটির উত্তোলনের পরিমাণ ছিল ৫৪ হাজার ৭০০ কোটি ঘনমিটার। ২০২১ ও ২০২২ সালে এ খাত থেকে প্রাকৃতিক গ্যাসের বৈশ্বিক উত্তোলন দাঁড়াতে পারে যথাক্রমে ৫৩ হাজার ও ৫৪ হাজার ২০০ কোটি ঘনমিটার। এরপর ২০২৩ সালে গিয়ে পণ্যটির উত্তোলন ২০১৯ সালের সমপর্যায়ে উঠতে পারে।

রাইস্টার্ড এনার্জির গ্যাস অ্যান্ড পাওয়ার মার্কেটের প্রধান কার্লোস টরেস-ডিয়াজ বলেন, কভিড-১৯ অপরিশোধিত জ্বালানি তেল, প্রাকৃতিক গ্যাসসহ সব ধরনের জ্বালানি পণ্যের বাজার ধসিয়ে দিয়েছে। এ পরিস্থিতিতে জ্বালানি তেলের উত্তোলন রেকর্ড কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে শীর্ষ উত্তোলনকারী দেশগুলো। এতে এ খাত থেকে উত্তোলিত প্রাকৃতিক গ্যাসের উত্তোলনও কমে আসতে পারে। তিনি বলেন, এ খাতটি থেকে প্রাকৃতিক গ্যাসের উত্তোলন নির্ভর করবে জ্বালানি তেলের দামের ওপর। প্রতিষ্ঠানটি ধারণা করছে ২০২৫ সালে জ্বালানি তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি গড়ে ৬০ ডলারে উন্নীত হতে পারে। ওই সময় এ খাতটি থেকে প্রাকৃতিক গ্যাসের বৈশ্বিক উত্তোলন বেড়ে ৫৯ হাজার ৬০০ কোটি ঘনমিটারে উন্নীত হতে পারে। তবে যদি জ্বালানি তেলের দাম বর্তমানের স্তরে (প্রতি ব্যারেল ৪০ ডলার) স্থিতিশীল থাকে, তবে পণ্যটির উত্তোলন ৫০ হাজার কোটি ঘনমিটারের নিচে নামতে পারে। অন্যদিকে জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে ব্যারেলপ্রতি ১২০ ডলারে উঠলে খাতটি থেকে প্রাকৃতিক গ্যাসের উত্তোলন বেড়ে ৮০ হাজার কোটি ঘনমিটারের রেকর্ড ছাড়াতে পারে।

এদিকে উত্তোলনের সঙ্গে প্রাকৃতিক গ্যাসের বৈশ্বিক চাহিদার পূর্বাভাসও কমিয়ে এনেছে রাইস্টার্ড এনার্জি। প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, ২০২০ সালে বিশ্বজুড়ে প্রাকৃতিক গ্যাসের চাহিদা কমে ৩ লাখ ৮৮ হাজার ৩০০ কোটি ঘনমিটারে নামতে পারে। তবে পরের বছরগুলোতে পণ্যটির বৈশ্বিক চাহিদায় ফের চাঙ্গা ভাব ফিরতে পারে।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *