আঞ্চলিক প্লাটফর্ম, অরিজিনাল শো, ভালো সাবটাইটেল ভারতে স্ট্রিমিং ট্রেন্ডকে বিকশিত করছে। জানুয়ারিতে মুক্তি পায় থালাপতি বিজয় ও বিজয় সেতুপতি অভিনীত মাস্টার। ছবিটির মুক্তির মধ্য দিয়ে ভারতের সিনেমা হলগুলোতে মহামারীজনিত খরা কিছুটা কেটে যায়। হাউজফুল শো দিয়ে প্রথম দিনই ৫০ কোটি রুপি আয় করে মাস্টার। এর পরই দেখা যায় একেবারে নতুন ধরনের এক পদক্ষেপ। ছবিটি দুই সপ্তাহের মধ্যে অ্যামাজন প্রাইম ভিডিওতেও মুক্তি দেয়া হয়। চলচ্চিত্র সমালোচক ভারদ্বাজ রঙ্গন বলেন, ‘মাস্টারের ওটিটি প্লাটফর্মে যাওয়ার মাধ্যমে আগামী দিনের লক্ষণ বাস্তব হয়ে উঠেছে। এটা প্রমাণ করেছে যে একটা ছবি সিনেমা হলে জমজমাট ব্যবসা করেও প্রায় তাত্ক্ষণিকভাবে স্ট্রিমিং সাইটেও সফল হতে পারে।’
অন্যদিকে ২০১৩ সালের হিট ক্রাইম ড্রামা, মোহনলালের দৃশ্যমের সিকুয়াল দৃশ্যম টু গত মাসের শেষভাগে সরাসরি মুক্তি দেয়া হয় অ্যামাজন প্রাইমে। ঘটনাগুলোকে ভারতীয় চলচ্চিত্রের পর্যবেক্ষকরা তাত্পর্যপূর্ণ বলে বিবেচনা করছেন। কারণ মহামারীর আগে কোনো বিশেষ ব্যতিক্রম ছাড়া ভারতের প্রায় সব ছবিই প্রথমে হলে মুক্তি পেত। কিন্তু ২০২০ সালে সবকিছু ১৮০ ডিগ্রি উল্টে যায়। লকডাউনের মধ্যে ফ্রন্টলাইনে চলে আসে ওটিটি প্লাটফর্ম। বাড়তে থাকে সাবস্ক্রিপশন। ২০২০ সালের জুনে ভারতে স্ট্রিমিং সাইটের সাবস্ক্রিপশন পৌঁছে প্রায় তিন কোটিতে। এ সময় মার্চ থেকে জুনে সাবস্ক্রিপশন সংখ্যায় প্রবৃদ্ধি দেয়া যায় ৩১ শতাংশ। এখানে আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের নকশা দেয়া যায়। সাবস্ক্রাইবার মেট্রোশহরগুলো থেকে গ্রামীণ এলাকাগুলোতে বেশি বাড়ে।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটেছে ভারতের চলচ্চিত্র শিল্পে। আঞ্চলিক অনেক ভাষার নিজস্ব ওটিট প্লাটফর্ম গড়ে উঠেছে। এগুলোর মধ্যে আছে আহা (তেলেগু), রিলড্রামা (আসামিজ), প্লানেট মারাঠি ও লেটসফ্লিক্স (মারাঠি ও ভোজপুরী), নিস্ট্রিম (মলয়ালম), টকিজ (টুলু), সিটিশোর (গুজরাটি)।
আহার সিইও অজিত ঠাকুর মনে করেন, ‘আমরা এখন যা দেখছি তা হলো ওটিটি প্রবৃদ্ধির প্রথম পর্ব, মহামারী কেবল এর গতি বাড়াচ্ছে।’ ভারতে বর্তমানে ৪০টির বেশি ওটিটি প্লাটফর্ম সক্রিয়। অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় তাদের দর্শক সংখ্যা বাড়ছে। মুক্তি পাচ্ছে বিপুল পরিমাণ অরিজিনাল কন্টেন্ট, হচ্ছে সরাসরি ডিজিটাল প্রিমিয়ার। বলিউডে ডিজিটাল প্রিমিয়ার হওয়া উল্লেখযোগ্য কয়েকটি ছবির মধ্যে আছে গুলাবো সিতাবো, শকুন্তলা দেবী ও কুলি নাম্বার ওয়ান।
গত বছর এক অনুষ্ঠানে অ্যামাজন প্রাইম ভিডিও ইন্ডিয়ার পরিচালক ও কান্ট্রি ম্যানেজার গৌরব গান্ধী বলেছিলেন, ‘ওটিটি মূলধারার নয় এটা বলা ভুল হবে।’ তিনি জানান, তাদের কোনো কন্টেন্টের ডিজিটাল রিলিজের এক সপ্তাহের মধ্যে সেটি বিশ্বের চার হাজার শহরে দেয়া হয়।
ভারতে দর্শকরা যে শুধু মহামারীর কারণেই স্ট্রিমিং প্লাটফর্মে ঝুঁকছেন তেমনটা নয়, বরং বিভিন্ন ধরনের ভালো কন্টেন্টই দর্শক টানছে। সুস্মিতা সেন অনেকদিন পর পর্দায় ফিরেছেন আর্যা সিরিজ দিয়ে, যা প্রচারিত হয়েছে ওটিটি প্লাটফর্মে। স্পেশাল অপস, অসুর থেকে মির্জাপুর ফ্র্যাঞ্চাইজি—অনেকে বলছেন, গত বছর ভারতীয় বিনোদনজগতে অনেক ভালো কাহিনী দর্শকরা দেখেছেন স্ট্রিমিং সাইটেই।