ভারতে উজ্জ্বল ভবিষ্যতের আশা দেখাচ্ছে সৌরশক্তি

সৌরশক্তি ব্যবহারে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় ১০টি দেশের অন্যতম ভারত। দেশটি বিকল্প বায়ু ও সৌরশক্তির উেসর দিকে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। দেশটিতে কম সৌর শুল্ক ও ২০৪০ সালের মধ্যে চাহিদা দ্বিগুণ হয়ে যাওয়ার মতো বিশাল সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে চাইছেন বিনিয়োগকারীরা। মহামারীর কারণে প্রকল্প বিলম্বিত হওয়া, দুর্বল বিদ্যুৎ বিতরণ সেক্টর ও জমি প্রাপ্তিতে বিভিন্ন সমস্যার মতো চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও এ খাত এশিয়ার তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতিকে উজ্জ্বল ভবিষ্যতের আশা দেখাচ্ছে। খবর দ্য ন্যাশনাল।

ভারত বিশ্বের অন্যতম দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির দেশ। ভারতকে পরিচ্ছন্ন ও সবুজ করে তুলতে বায়ু ও সৌরজাতীয় শক্তির মতো বিকল্প উৎসগুলো গ্রহণ করা একমাত্র উপায় হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকরা।

নবায়নযোগ্য জ্বালানি পরামর্শক সংস্থা ইমারজেন্ট ভেনচারসের প্রতিষ্ঠাতা বিনোদ কালা বলেন, নবায়নযোগ্য জ্বালানির জন্য ভারত বিশ্বজুড়ে বৃহত্তম বাজারগুলোর একটি এবং বড় বিনিয়োগকারীদের কাছে আকর্ষণীয়। কিছু চ্যালেঞ্জ থাকা সত্ত্বেও এখানে বিনিয়োগের পরিবেশ অত্যন্ত ইতিবাচক। বিস্তৃত জায়গা, প্রচুর বায়ু এবং বিশেষত সৌর উেসর সংমিশ্রণে ভারতকে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ ও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ নবায়নযোগ্য জ্বালানি বাজারের একটি করে তুলেছে।

আগামী বছরের মধ্যে ভারত সরকার নবায়নযোগ্য জ্বালানি সক্ষমতা প্রায় দ্বিগুণ করার এবং ২০৩০ সালের মধ্যে এটিকে পাঁচ গুণ বাড়িয়ে ৪৫০ গিগাওয়াটে উন্নীত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। দেশটি প্যারিস জলবায়ু চুক্তির অধীনে আগামী দশকে অ-জীবাশ্ম জ্বালানি উৎস থেকে তার বিদ্যুতের ৪০ শতাংশ চাহিদা পূরণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। পাশাপাশি দেশটির জন্য বিশ্বজুড়ে সমালোচনার শিকার হওয়া ব্যয়বহুল তেল ও কয়লা আমদানির ওপর নির্ভরতা কমিয়ে কার্বন নির্গমন হ্রাস করার জন্যও নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে মনোযোগ দেয়া জরুরি হয়ে পড়েছে।

দেশটি জ্বালানির তৃতীয় বৃহত্তম ভোক্তা দেশ। যেখানে চাহিদার ৪৫ শতাংশই আসে কয়লা থেকে। আন্তর্জাতিক জ্বালানি সংস্থা জানিয়েছে, পেট্রোলিয়াম ও অন্যান্য তরল জ্বালানি ব্যবহারেও দেশটি তৃতীয় বৃহত্তম ভোক্তা। গ্রিনহাউজ গ্যাসের তৃতীয় বৃহত্তম নির্গমনকারী, চতুর্থ বৃহত্তম তেল পরিশোধক এবং পরিশোধিত পণ্যের নিট রফতানিকারকও ভারত।

এমন পরিস্থিতিতে ভারত যেমন সৌর ও বায়ুশক্তির মতো পরিবেশবান্ধব জ্বালানির উৎসগুলোর ভূমিকা বাড়াতে সচেষ্ট রয়েছে, তেমনি বিনিয়োগকারীরা বাজারে আরো সুযোগের দিকে নজর রাখছেন।

মার্কিন ইনস্টিটিউট ফর এনার্জি ইকোনমিকস অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল অ্যানালাইসিসের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৪ সাল থেকে ভারতের নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাত ৪ হাজার ২০০ কোটি ডলারেরও বেশি বিনিয়োগ পেয়েছে এবং ২০৩০ সালের মধ্যে দেশটির ৪৫০ গিগাওয়াট লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য আরো ৫০ হাজার কোটি ডলার বিনিয়োগের প্রয়োজন হবে।

মহামারীতে কয়েকটি সৌর ও বায়ুবিদ্যুৎ প্রকল্প স্থগিত হয়ে যাওয়ায় ভারতের অ-জীবাশ্ম জ্বালানি শিল্পের বিকাশে চাপ পড়েছে। ব্রিজ টু ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২০ সালে সৌর ও বায়ুবিদ্যুতের ক্ষমতা মোট ৪ হাজার ৯০৮ মেগাওয়াট যোগ হয়েছে, যা গত পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। শ্রম ও সরঞ্জামের ঘাটতি এবং সরকারের অনুমোদনের ক্ষেত্রে বিলম্বসহ কঠোর লকডাউনের পর আর্থিক ও পরিচালনা চ্যালেঞ্জের কারণে এমনটা ঘটেছে।

তবে মহামারী সত্ত্বেও বিনিয়োগকারীদের দৃঢ় আস্থার লক্ষণ দেখা গেছে। গত মাসে ফরাসি তেল জায়ান্ট টোটাল ভারতের আদানি গ্রিন এনার্জিতে ২৫০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করেছে। ফলে টোটাল গ্রিন এনার্জির ২০ শতাংশ শেয়ার এবং সংস্থার সৌর সম্পদের ৫০ শতাংশের মালিকানা পেয়েছে।

আন্তর্জাতিক জ্বালানি সংস্থার হিসাবে, ভারত তার জ্বালানি সক্ষমতা বাড়িয়ে ২০৪০ সালের মধ্যে প্রতি বছর প্রায় ১৯ হাজার ডলার সাশ্রয় করতে পারে এবং প্রতি বছর ৮৭৫ টেরাওয়াট ঘণ্টা বিদ্যুৎ উৎপাদন এড়াতে পারে।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *