ভারতী এয়ারটেলের ৫ শতাংশ নিয়ন্ত্রণে নিচ্ছে অ্যামাজন

আকস্মিক মার্কিন প্রযুক্তি জায়ান্টগুলোর বিনিয়োগের নতুন কেন্দ্রস্থল হয়ে উঠেছে ভারতের টেলিকম খাত। ডিজিটাল অর্থনীতির দিকে দেশটির অগ্রযাত্রায় টেলিকম প্রতিষ্ঠানগুলোর ইতিবাচক ভূমিকা এমন আগ্রহের প্রধান কারণ বলে মনে করা হচ্ছে। ফেসবুক, গুগল ও মাইক্রোসফটের মতো প্রযুক্তি জায়ান্টগুলোর একের পর এক ভারতীয় টেলিকম প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগের ঘোষণা কিছুটা অবাক করার মতোই। সর্বশেষ ভারতী এয়ারটেলে বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করেছে বৈশ্বিক ই-কমার্স জায়ান্ট অ্যামাজন। ভারতের অন্যতম বৃহৎ টেলিকম প্রতিষ্ঠানটির কমপক্ষে ৫ শতাংশ মালিকানা নিয়ন্ত্রণে নিতে চায় অ্যামাজন। ভারতী এয়ারটেলের শেয়ার ক্রয়ে ২০০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করতে আগ্রহী প্রতিষ্ঠানটি। বিষয়টি নিয়ে উভয় প্রতিষ্ঠানের মধ্যে আলোচনা এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। সংশ্লিষ্ট তিনটি সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে রয়টার্স।

ভারতী এয়ারটেল ভারতের তৃতীয় বৃহৎ টেলিকম কোম্পানি। দেশটিতে এর ৩০ কোটির বেশি গ্রাহক রয়েছে। ভারতের টেলিকম বাজারে মুকেশ আম্বানির রিলায়েন্স জিও ইনফোকম কার্যক্রম শুরুর পর চাপে পড়ে ভারতী এয়ারটেল। ভারতের টেলিকম বাজারে শীর্ষ অবস্থান হারায় প্রতিষ্ঠানটি। জিওর আগ্রাসী ব্যবসা নীতির কারণে চাপে রয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

ভারতীয় টেলিকম কোম্পানি রিলায়েন্স জিওর ৯ দশমিক ৯ শতাংশ মালিকানা কিনেছে সোস্যাল মিডিয়া জায়ান্ট ফেসবুক। গত এপ্রিলে প্রতিদ্বন্দ্বী ফেসবুকের এ অধিগ্রহণের পর থেকে ভারতের টেলিকম খাতে অংশীদারিত্ব প্রতিষ্ঠায় মরিয়া হয়ে কাজ করছে প্রযুক্তি জায়ান্ট গুগল ও মাইক্রোসফট। এবার এ তালিকায় যুক্ত হলো ই-কমার্স কোম্পানি অ্যামাজন।

বৈশ্বিক সার্চ জায়ান্ট গুগল ভারতের টেলিকম খাতে অংশীদারিত্ব প্রতিষ্ঠায় ভোডাফোন-আইডিয়া লিমিটেডের অন্তত ৫ শতাংশ মালিকানা ক্রয়ের বিষয়ে ভাবছে। অন্যদিকে সফটওয়্যার জায়ান্ট মাইক্রোসফট ভারতীয় ধনকুবের মুকেশ আম্বানি নিয়ন্ত্রিত রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের (আরআইএল) আওতাধীন রিলায়েন্স জিও প্লাটফর্মে ২০০ কোটি ডলারের বেশি বিনিয়োগের বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। রিলায়েন্সের ডিজিটাল সেবা বিভাগ হলো জিও প্লাটফর্ম। আর জিও প্লাটফর্মের আওতাধীন টেলিকম কোম্পানি হলো রিলায়েন্স জিও ইনফোকম লিমিটেড।

গুগল ভোডাফোন-আইডিয়া লিমিটেড ছাড়াও ভারতে সাড়ে তিন বছর আগে কার্যক্রম শুরু করা টেলিকম কোম্পানি রিলায়েন্স জিওর কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনায় অংশ নিয়েছে। রিলায়েন্স জিও গত কয়েক সপ্তাহে ফেসবুক, প্রাইভেট ইকুইটি ফার্ম সিলভার লেক, জেনারেল আটলান্টিক ও ভিস্তার মতো একাধিক প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ১ হাজার ৩০ কোটি ডলার তহবিল সংগ্রহে সক্ষম হয়েছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভারতী এয়ারটেল ও অ্যামাজনের মধ্যে আলোচনা এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে আছে। এ অধিগ্রহণের চূড়ান্ত চুক্তিতে পরিবর্তনও আসতে পারে। বিষয়টি নিয়ে সর্বোচ্চ গোপনীয়তা রক্ষা করছে উভয় প্রতিষ্ঠান। তবে আলোচনা ফলপ্রসূ হলে শিগগিরই এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসতে পারে বলে নিশ্চিত করেছে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র।

অ্যামাজনের এক মুখপাত্র বলেন, অনুমাননির্ভর কোনো বিষয় নিয়ে তারা মন্তব্য করেন না। এমন কোনো বিষয় আলোচনার মাধ্যমে চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছালে আনুষ্ঠানিকভাবে বিস্তারিত জানানো হবে।

অন্যদিকে ভারতী এয়ারটেল জানায়, ভারতীয় টেলিকম সেবা ব্যবহারকারীদের অভিজ্ঞতা উন্নত করতে তারা নিয়মমাফিক ডিজিটাল কোম্পানিগুলোর সঙ্গে আলোচনায় অংশ নিচ্ছে। বিভিন্ন ডিজিটাল প্রতিষ্ঠানের সহায়তায় সেবা ব্যবহারকারীদের জন্য নতুন পণ্য, কনটেন্ট ও সেবা আনতে নিয়মিত কাজ চলছে। এর বাইরে ক্রয়-বিক্রয়সংক্রান্ত কোনো বিষয় প্রক্রিয়াধীন থাকলে তা যথাসময়ে জানানো হবে।

ভারত বিশ্বের সবচেয়ে বড়, সাশ্রয়ী ও দ্রুত প্রবৃদ্ধির টেলিকম বাজার। তবে দেশটির টেলিকম খাত টানা কয়েক বছর নজরকাড়া সব অর্জনের পর এখন অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা নিয়ে সংকটপূর্ণ সময় পার করছে, যা একটি বাজারের সমগ্র চিত্র বদলে দিতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে। একদিকে সেলফোন অপারেটরগুলো বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ঋণের বোঝা, অন্যদিকে তীব্র প্রতিযোগিতা মোকাবেলা করে কার্যক্রম পরিচালনা করতে হিমশিম খাচ্ছে। এতে বাড়তি অনিশ্চয়তা যোগ করেছে অ্যাডজাস্টেড গ্রস রেভিনিউর (এজিআর) সংজ্ঞা নিয়ে ভারতের সর্বোচ্চ আদালতে চলমান মামলার রায় ডিপার্টমেন্ট অব টেলিকমিউনিকেশনের (ডিওটি) পক্ষে যাওয়া।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *