বোতলজাত ভোজ্যতেল সরবরাহ কমিয়েছে কোম্পানিগুলো

দেশে এখন সবচেয়ে আলোচিত ভোগ্যপণ্য ভোজ্যতেল। নভেল করোনাভাইরাসের কারণে উৎপাদক দেশের সংকট, বিশ্ববাজারে দাম বৃদ্ধি, বৈশ্বিক যুদ্ধ পরিস্থিতিতে শিপিং চার্জ বেড়ে যাওয়ায় দেশের বাজারে রেকর্ড পরিমাণ বেড়ে যায় পণ্যটির দাম। সম্প্রতি সরকার ভোজ্যতেল আমদানিতে শুল্কে বড় ধরনের ছাড়ও দিয়েছে। তবে সরকারি নির্দেশনার পরও বোতলজাত ভোজ্যতেল উৎপাদন ও বিক্রিতে ধীরগতি দেখাচ্ছে কোম্পানিগুলো। পাইকারি ও খুচরা বাজারে বোতলজাত ভোজ্যতেল সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে ডিলাররা।

দেশে ভোগ্যপণ্যের সবচেয়ে বড় পাইকারি খাতুনগঞ্জে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এরই মধ্যে ভোজ্যতেলের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে। পাইকারিতে খোলা সয়াবিন লিটারপ্রতি ১৩৬ টাকা ও খুচরায় লিটারপ্রতি ১৩৯ টাকা। এছাড়া খোলা পাম অয়েলের পাইকারি দাম লিটারপ্রতি ১২৭ ও খুচরায় ১৩০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। কয়েক দিন ধরে ভোজ্যতেলের পাইকারি দাম ফের বাড়তে শুরু করেছে। মূলত সরকার নির্ধারিত দামে ভোজ্যতেল মোড়কজাত ও বিক্রি করলে ব্যবসায়ীরা অধিক লাভ করতে পারবেন বলেই বাজারে সরবরাহ কমিয়ে কৃত্রিম সংকট তৈরির চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছেন ভোজ্যতেল ব্যবসাসংশ্লিষ্টরা।

বিভিন্ন পাইকারি ও খুচরা বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশে ভোজ্যতেলের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে। তা সত্ত্বেও শুল্ক ছাড় দিতে সরকারি ঘোষণার পর বাজারে হঠাৎ করেই বোতলজাত ভোজ্যতেলের সরবরাহ সংকট দেখা দেয়। এরপর দেশের বিভিন্ন বোতলজাত সয়াবিন পরিশোধন ও মোড়কজাতকারী কারখানায় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন সরকারি সংস্থার অভিযানে সক্ষমতা ও চাহিদার চেয়েও কম উৎপাদনের প্রমাণ পায়। এরই মধ্যে চট্টগ্রামের এস আলম ভোজ্যতেল রিফাইনারিতে সয়াবিনের মোড়কজাত প্লান্ট বন্ধ অবস্থায় পায় ভোক্তা অধিকার কর্তৃপক্ষ। এছাড়া নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকায় একাধিক ভোজ্যতেল পরিশোধন কারখানায় মোড়কজাত নিয়ে অনিয়ম পায়।

চট্টগ্রামের রিয়াজউদ্দিন বাজারের ব্যবসায়ী মো. ইলিয়াস হোসেন বণিক বার্তাকে বলেন, কিছুদিন আগেও কোম্পানিগুলো ভোজ্যতেল সরবরাহ করতে বিভিন্ন শর্ত জুড়ে দিত। প্রশাসনের তত্পরতা ও সরকারের শুল্ক কমানোর পর কয়েক দিন ধরে কোম্পানিগুলো বোতলজাত সয়াবিন সরবরাহ শুরু করেছে। তবে সরবরাহ শুরু হলেও ব্যবসায়ীদের চাহিদা অনুযায়ী ভোজ্যতেল দিচ্ছে না। কোম্পানিগুলোর ভোজ্যতেল সরবরাহ কমিয়ে দেয়ার বিষয়ে ডিলার প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা কোনো তথ্যই জানাতে চাইছে না। খুচরা পর্যায়ে সরবরাহ কমিয়ে দেয়া হলে দাম কমানোর উদ্যোগ সত্ত্বেও বাজারে এর প্রভাব পড়বে না বলে মনে করছেন তিনি।বাজার সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে বিভিন্ন কোম্পানি খুচরা বিক্রয় প্রতিষ্ঠানে ভোজ্যতেল সরবরাহ করছে সরকার নির্ধারিত দামের চেয়েও বেশি দামে। বুধবার খুচরা দোকানিদের লিটারপ্রতি বোতলজাত সয়াবিন সরবরাহ করেছে ১৬৩ টাকায়। এছাড়া দুই লিটারের সয়াবিন ৩২৪ টাকা এবং পাঁচ লিটারের সয়াবিন সরবরাহ করছে ৭৮০ টাকায়। অন্যদিকে বোতলজাত পাম অয়েল সরবরাহ করেছে ১৪৪ দশমিক ৫০ টাকায় (পলিব্যাগ), যা সরকার নির্ধারিত দামের চেয়েও বেশি। অপরদিকে খাতুনগঞ্জে বুধবার পাইকারি পর্যায়ে সয়াবিন লেনদেন হয়েছে মণপ্রতি ৫ হাজার ৮৫০ টাকায়, পাইকারি পর্যায়ে ৬ হাজার টাকায়। এছাড়া পাম অয়েলের ডিও লেনদেন হয়েছে ৫ হাজার ১৩০ টাকায়, সুপার পাম অয়েল ৫ হাজার ৩৫০ টাকায়। তবে পাম অয়েল ও সুপার পাম অয়েল পাইকারি পর্যায়ে লেনদেন হয়েছে ডিও দামের চেয়েও ১০০ টাকা বেশি।

খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ ছগীর আহমেদ বণিক বার্তাকে বলেন, কোম্পানিগুলো ভোজ্যতেলের দাম কমিয়েছে। কিন্তু বর্তমান বাজারে সরকার নির্ধারিত দামের চেয়েও কম দামে সয়াবিন ও পাম অয়েল বিক্রি হচ্ছে। যার কারণে কয়েক দিন ধরে ভোজ্যতেলের পাইকারি দাম কিছুটা বেড়েছে। কোম্পানিগুলো চাহিদা অনুযায়ী পর্যাপ্ত ভোজ্যতেল সরবরাহ না করলে বাজারে সংকট থাকবে, যা আসন্ন রমজানে দেশের ভোজ্যতেলের বাজারকে ফের অস্থিরতার দিকে নিয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তিনি।

ভোজ্যতেল ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, সরকার ভোজ্যতেল আমদানিতে শুল্ক কমানোর পর বাজারে মোড়কজাত ভোজ্যতেলের সরবরাহ কমে গেছে। আসন্ন রোজায় বাজারে চাহিদা বাড়লেও সরকারিভাবে ভোজ্যতেলের দাম কমানোর ঘোষণা সত্ত্বেও কোম্পানিগুলো দাম কমাতে আগ্রহী নয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে সরবরাহ কমিয়ে বাজারে সংকট তৈরির মাধ্যমে দেশে ভোজ্যতেলের বাজারকে ফের বাড়াতে তত্পর মোড়কজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। যার কারণে খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছে চাহিদা থাকলেও পর্যাপ্ত ভোজ্যতেল সরবরাহ দেয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ তাদের।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *