বৈশ্বিক স্টেইনলেস ইস্পাত উৎপাদনে ধসের আশঙ্কা

২০১৯ সালে অপরিশোধিত স্টেইনলেস ইস্পাতের বৈশ্বিক উৎপাদন বেড়ে ইতিহাসের সর্বোচ্চে উঠেছিল। চলতি বছরের শুরুর দিকেও এ ধারা অব্যাহত ছিল। তবে এর মধ্যে বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে মাহামারী, যার প্রভাব অন্যান্য পণ্যের মতো স্টেইনলেইস ইস্পাতের বাজারেও পড়েছে। ফলে এবার ধাতব পণ্যটির উৎপাদনে ধস নামতে পারে। ২০২০ সালে আগের বছরের তুলনায় পণ্যটির বৈশ্বিক উৎপাদন ১০ শতাংশ কমে যেতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে খাতসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান এমইপিএস ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড। খবর রয়টার্স ও মাইনিংডটকম।

এমইপিএস ইন্টারন্যাশনালের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০২০ সালে বিশ্বজুড়ে সব মিলিয়ে ৪ কোটি ৬৮ লাখ টন অপরিশোধিত স্টেইনলেস ইস্পাত উৎপাদন হতে পারে, আগের বছরের তুলনায় যা ১০ শতাংশ কম। প্রতিষ্ঠানটির এ পূর্বাভাস সত্যি হলে তা হবে ২০১৬ সালের পর বিশ্বজুড়ে পণ্যটির সর্বনিম্ন বার্ষিক উৎপাদন।

২০১৯ সালে বিশ্বজুড়ে মোট ৫ কোটি ২২ লাখ টন অপরিশোধিত স্টেইনলেস ইস্পাত উৎপাদন হয়েছিল, যা ছিল এ-যাবত্কালের মধ্যে পণ্যটির সর্বোচ্চ উৎপাদনের রেকর্ড এবং এমইপিএসের প্রাক্কলনের তুলনায় ৩ শতাংশ বেশি। সে হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে ধাতব পণ্যটির বৈশ্বিক উৎপাদন ৫৪ লাখ টন কমে যেতে পারে।

চলতি বছরের শুরটা চাঙ্গাভাবেই শুরু হয়েছিল স্টেইনলেস ইস্পাত খাতের। উৎপাদন, চাহিদা, সরবরাহ, আমদানি, রফতানি সব খাতই বাড়তির দিকে ছিল। তবে চীনের গণ্ডি পেরিয়ে নভেল করোনাভাইরাস বৈশ্বিক মহামারীতে পরিণত হওয়ার পর খাতটিতে মন্দা ভাব শুরু হয়। মার্চের শুরুতেই পণ্যটির বৈশ্বিক সরবরাহ ও চাহিদা উভয় খাতই নিম্নমুখী হতে শুরু করে। মহামারী প্রতিরোধে এ সময়ে বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশই লকডাউনসহ নানা ধরনের পদক্ষেপ নিতে শুরু করে। এর জের ধরে স্টেইনলেস ইস্পাত উৎপাদনকারী থেকে শুরু করে প্রান্তিক ভোক্তা সবাই তাদের কর্মকাণ্ড থেকে সরে আসতে অথবা সীমিত করে আনতে বাধ্য হয়। এতে চলতি বছর শেষে পণ্যটির বৈশ্বিক উৎপাদন কমে আসতে পারে বলে মনে করছেন খাতসংশ্লিষ্টরা।

এরই মধ্যে ২০২০ সালের প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) অপরিশোধিত স্টেইনলেস ইস্পাতের বৈশ্বিক উৎপাদন কমে এসেছে বলে ধারণা করছে এমইপিএস। প্রতিষ্ঠানটির প্রাক্কলন অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ধাতব পণ্যটির বৈশ্বিক উৎপাদন ৯ শতাংশ কমে যেতে পারে।

এর মধ্যে চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুন) স্টেইনলেস ইস্পাতের বৈশ্বিক উৎপাদনে খাড়া পতন দেখা দিতে পারে বলে পূর্বাভাস  দিয়েছে এমইপিএস। কেননা এ সময় থেকেই নভেল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বৈশ্বিক পরিসরে ছড়িয়ে পড়েছে। ফলে চলতি প্রান্তিকে পণ্যটির উৎপাদন ব্যাপক হারে কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

এছাড়া মহামারীর কারণে বৈশ্বিক অর্থনীতির শ্লথ গতি অপরিশোধিত স্টেইনলেস ইস্পাতের চাহিদা কমাতে প্রভাবক হিসেবে কাজ করেছে। এর বাইরে লকডাউনের কারণে এ সময়ে পণ্যটির কাঁচামালের সরবরাহ ব্যাহত হয়েছে। চাহিদা হ্রাস ও কাঁচামালের স্বল্পতাও ধাতুটির উৎপাদন হ্রাসে অন্যতম প্রভাবক হিসেবে কাজ করেছে। ফলে বছরের শুরুর দিকে পণ্যটির বৈশ্বিক উৎপাদনে যে পূর্বাভাস দিয়েছিল এমইপিএস, বছর শেষে তার তুলনায় ২০ শতাংশের বেশি কমে যেতে পারে।

এদিকে মন্দা ভাব বজায় রয়েছে অপরিশোধিত ইস্পাতের বৈশ্বিক উৎপাদনেও। ওয়ার্ল্ড স্টিল অ্যাসোসিয়েশনের (ডব্লিউএসএ) সর্বশেষ মাসভিত্তিক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে,  চলতি বছরের জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে সংস্থাভুক্ত ৬৪ দেশে সব মিলিয়ে ৪৪ কোটি ৩০ লাখ টন অপরিশোধিত ইস্পাত উৎপাদন হয়েছে, যা আগের বছরের একই প্রান্তিকের তুলনায় ১ দশমিক ৪ শতাংশ কম। এ সময় চীন, ভারত, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়াসহ এশিয়ার দেশগুলোয় সব মিলিয়ে ৩১ কোটি ৫২ লাখ টন ইস্পাত উৎপাদন হয়েছে। এক বছরের ব্যবধানে এশিয়ার দেশগুলোয় পণ্যটির উৎপাদন কমেছে দশমিক ৩ শতাংশ।

এর মধ্যে এপ্রিলে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৩ শতাংশ কমে পণ্যটির বৈশ্বিক উৎপাদন ১৩ কোটি ৭১ লাখ টনে নেমেছে। তবে বৈশ্বিক পরিসরে কমলেও বিশ্বের শীর্ষ ইস্পাত উৎপাদনকারী দেশ চীনে উল্টো চিত্র দেখা গেছে। গত এপ্রিলে দেশটি ৮ কোটি ৫০ লাখ টন অপরিশোধিত ইস্পাত উৎপাদন করেছে, আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় যা দশমিক ২ শতাংশ বেশি। খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, জানুয়ারির শুরু থেকে মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়েছে চীন। মার্চের শেষ নাগাদ দেশটিতে করোনা পরিস্থিতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আসে। ধীরে ধীরে তুলে নেয়া হয় লকডাউন। এ কারণে এপ্রিলে চীনের ইস্পাত উৎপাদন খাত গতি ফিরে পেয়েছে। বেড়েছে শিল্প ধাতুটির উৎপাদন।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *