বেতন বৃদ্ধি আটকানোর খবরে তোপের মুখে ব্রিটিশ সরকার

কভিড-১৯ মহামারীর অর্থনৈতিক প্রভাব কমাতে বিশ্বের অন্য সব দেশের মতো সরকারি ব্যয় বাড়ানোর দিকে নজর দিয়েছে যুক্তরাজ্যও। সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির অংশ হিসেবে কর্মহীনদের আর্থিক সহায়তা প্রদান, সংকটে থাকা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোর মূলধন ঘাটতি মোকাবেলায় প্রণোদনা দেয়াসহ রাষ্ট্রীয় সহায়তার বিভিন্ন প্যাকেজে সরকারি কোষাগার থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ বেরিয়ে গেছে। এখন সেই রাষ্ট্রীয় তহবিলের অবস্থান শক্তিশালী করার উদ্যোগ নেয়ার কথা ভাবছেন ব্রিটিশ অর্থমন্ত্রী ঋষি সুনাক। এর অংশ হিসেবে তিনি সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন বৃদ্ধি আটকে দেয়ার কথা ভাবছেন বলে ওয়াকিবহাল বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। খবর বিবিসি।

ব্রিটিশ অর্থমন্ত্রী যদি সত্যিই এ পথে হাঁটেন, তবে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকায় এমন বেশ কয়েকটি খাতের পেশাজীবীরা থাকবেন, যারা করোনা সংকটের সময়ে সেবা দিয়ে প্রশংসা কুড়িয়েছেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন পুলিশ, শিক্ষক, সশস্ত্র বাহিনী ও বেসামরিক সরকারি চাকরিজীবীরা। তবে ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসের (এনএইচএস) সম্মুখযোদ্ধা কর্মীরা হয়তো এ পদক্ষেপের বাইরে থেকে যাবেন।

ব্রিটিশ অর্থ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে অবশ্য এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে নিশ্চিত করে কিছু জানানো হয়নি। তবে গত জুলাইয়ে নিজের ব্যয় পর্যালোচনার পরিকল্পনা সম্পর্কে ধারণা দিতে গিয়ে ঋষি সুনাক জানিয়েছিলেন, সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন বৃদ্ধি রাষ্ট্রীয় কোষাগারের জন্য আসলেই মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সে সময় অর্থ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, বর্তমানে সরকারি ও বেসরকারি খাতের কর্মীদের বেতনে যথেষ্ট সামঞ্জস্য রয়েছে। এটি নষ্ট করতে চায় না তারা।

অর্থাৎ সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন বৃদ্ধি আটকে দেয়ার সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছে না। আর এ বিষয়টিই মেনে নিতে পারছে না ইউনিয়নগুলো। তারা পরিকল্পনাটিকে রীতিমতো ‘অপমানজনক’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে।

আগামী অর্থবছরের ব্যয় পরিকল্পনার বিস্তারিত বিষয় আগামী সপ্তাহে প্রকাশ করার কথা রয়েছে। সে সময়েই জানা যাবে, কোন কোন দপ্তরের জন্য কী পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ রাখা হবে।

যুক্তরাজ্যের ইউনিয়নগুলোর জোট ইউনাইট দ্য ইউনিয়ন বলছে, ‘পেশাজীবীদের বেতন বৃদ্ধি আটকে দেয়ার অর্থ হলো, যারা করোনা মহামারীর মধ্যে জীবন বাজি রেখে সমাজের কল্যাণে কাজ করেছেন, সেইসব সরকারি চাকরিজীবীদের অপমান করা। প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন নিজের জীবন বাঁচানোর জন্য ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসের ভূয়সী প্রশংসা করেছিলেন। কিন্তু এনএইচএস যেন তাদের কার্যক্রম স্বাভাবিকভাবে চালিয়ে যেতে পারে, সেটি নিশ্চিত করতে যারা কঠোর পরিশ্রম করেছেন, সেসব সরকারি চাকরিজীবীর ক্ষেত্রে কৃতজ্ঞতা প্রকাশের চেয়ে নগদ অর্থই সরকারের কাছে বড় হয়ে গেল।’

ইউনিসনের মহাসচিব ডেভ প্রেন্টিস বলেছেন, ‘এনএইচএসের যেসব কর্মী ফ্রন্টলাইনে কাজ করেননি, তারা সরকারের এ সিদ্ধান্তের কারণে বেতন বৃদ্ধি থেকে বঞ্চিত হবেন। কিন্তু সরকার একটা কথা ভুলে যাচ্ছে যে এনএইচএসের এসব কর্মীসহ সরকারি সব পেশাজীবীই করোনা মহামারী মোকাবেলার যুদ্ধে প্রাণভোমরা হয়ে ছিলেন।’

ফায়ার ব্রিগেড ইউনিয়নের মহাসচিব ম্যাট র্যাক সরকারকে আক্রমণ করেছেন তীব্র কটাক্ষের মাধ্যমে। তিনি বলেন, ‘আমরা মন্ত্রীদের সতর্ক করে বলেছিলাম, কেবল হাততালি দিলেই করোনাযোদ্ধাদের পেটের ভাত জুটবে না। কিন্তু মনে হচ্ছে সরকারের স্মৃতিশক্তি অনেক দুর্বল। তাদের নৈতিকতাবোধেও ঘাটতি রয়েছে।’

ব্রিটিশ সরকার আর্থিকভাবে কতটা চাপের মধ্যে রয়েছে, তা সাম্প্রতিক একটি পরিসংখ্যানেই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। করোনা মোকাবেলায় প্রণোদনার অর্থ জোগান দিতে গিয়ে চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে রেকর্ড ২১ হাজার ৫০০ কোটি পাউন্ড ঋণ করেছে যুক্তরাজ্য। এছাড়া পুরো অর্থবছরের জন্য মোট ৪০ হাজার কোটি পাউন্ডের ঋণ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে ব্রিটিশ সরকার, যা দেশটির অর্থনীতির আকারের অনুপাতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সর্বোচ্চ।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *