বেক্সিট পরবর্তীতে ব্রিটেনের সামনে কী অপেক্ষা করছে?

একটি সাহসী নতুন পৃথিবী কিংবা একটি বিপজ্জনক লাফ—ব্রিটেনের সামনে আসলে কী অপেক্ষা করছে, এখনো তা অজানা। ইউরোপের সঙ্গে প্রায় ৫০ বছর ধরে চলার পর ব্রিটেন গত ১ জানুয়ারি থেকে একটি অনিশ্চিত নতুন অধ্যায় শুরু করেছে। গত জানুয়ারিতে ব্রিটেন ইউরোপীয় ইউনিয়ন ত্যাগ করলেও ট্রানজিশন পিরিয়ডে তার সব নিয়ম প্রতিপালন করছে। খবর এএফপি।

এই যাত্রাও আগামী ৩১ ডিসেম্বর লন্ডন সময় রাত ১১টায় শেষ হবে। সুতরাং ২০২১ থেকে দেশটি নিজের পায়ে দাঁড়াবে। হতে পারে এটা আরো ভালো কিংবা খারাপ পদক্ষেপ। এই বাকি সময়ের মধ্যে উভয় পক্ষ যদি একটি নতুন বাণিজ্য চুক্তিতে পৌঁছতে পারে তাহলে ক্রস চ্যানেল পণ্যগুলোর জন্য শুল্ক ছাড় ও কোটা সুবিধা আগামীর পথকে সহজ করে তুলবে। তবে তারা যদি কোনো চুক্তিতে পৌঁছতে না পারে, তবে কয়েক দশক ধরে অস্তিত্বহীন বাধাগুলো হঠাৎ সামনে আসার ফলে আমদানি ও রফতানি মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত হবে।

চুক্তি ছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়ন ত্যাগ ব্রিটেনের জন্য নির্দিষ্ট কিছু খাবার ও ওষুধ সংকট সৃষ্টি করতে পারে। আর আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, চুক্তি করেই যে ব্রিটেনের ভবিষ্যৎ নির্বিঘ্ন হবে, তাও কিন্তু নয়। ইউরোপীয় রফতানিকারকদের ব্রিটেনের বাজারে প্রবেশের অনুমোদনের জন্য জিনিসপত্র প্রমাণ করার জন্য এখন নতুন শুল্ক কাগজপত্র পূরণের প্রয়োজন হবে।

ব্রিটেন যেকোনো উপায়ে ব্যবসা খাত প্রস্তুত করার আহ্বান জানিয়েছে। তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, সরকার সময়মতো গুরুত্বপূর্ণ আইটি সিস্টেম সরবরাহ করতে এবং কর্মীদের সহায়তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। আর এ বিশৃঙ্খলাগুলো আগামী জানুয়ারির পর আরো বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের ফেব্রুয়ারিতে দেয়া বক্তব্য অনুযায়ী, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ব্রিটেনকে কঠোর নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রেখেছে এবং বিশ্বজুড়ে অবাধ বাণিজ্যকে সমর্থন করার জন্য যুক্তরাজ্যের এখন নতুন পদক্ষেপ নেয়ার সময় এসেছে। তবে জনসনের এই বক্তব্যের এক মাস পরই নভেল করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে ব্রিটেন লকডাউনে চলে যেতে বাধ্য হয়। বিশ্ব যদি কখনো স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে, তবে ধারণা করা হয় ব্রিটেন অভ্যন্তরীণ দিকে সংকুচিত হবে না। তবে দেশটির প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশগুলোর সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তিতে পৌঁছানোও সহজ হবে না।

রফতানির বিষয়টি উল্লেখ করে দেশটির আন্তর্জাতিক বাণিজ্যবিষয়ক সচিব লিজ ট্রস বলেছিলেন, এখন বৈশ্বিক ব্রিটেন ফিরে এসেছে। আমাদের সবচেয়ে উত্তেজনাপূর্ণ অধ্যায়টি লিখতে সহায়তা করার জন্য নির্মাতা, কর্মকর্তা ও উদ্ভাবকদের এখনই সময়। ট্রস জাপানের সঙ্গে ব্রেক্সিট-পরবর্তী বাণিজ্য চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছেন এবং যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, নিউজিল্যান্ডসহ অন্যান্য দেশের সঙ্গে আলোচনা করছেন। সরকার জানিয়েছে, ২০২২ সালের মধ্যে পাইপলাইনে থাকা চুক্তিগুলোর মাধ্যমে বিশ্ববাণিজ্যের ৮০ শতাংশ সম্পূর্ণ হবে।

গত ডিসেম্বরের সাধারণ নির্বাচনে ভোটারদের কাছে জনসনের মূল বার্তাই ছিল ব্রেক্সিটকে সম্পন্ন করা এবং লন্ডনের প্রবৃদ্ধি থেকে লাভবান হতে ব্যর্থ দেশের বিভিন্ন অংশের প্রতি অর্থ ও মনোযোগ দেয়া। উত্তর ইংল্যান্ডে উচ্চগতির রেলের মতো নতুন বিনিয়োগ আনার সমতলকরণ এজেন্ডাটি মহামারী দ্বারা বাধাপ্রাপ্ত হয়েছে। তবে সরকার জোর দিয়ে বলছে, তার দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্যগুলো স্থির রয়েছে।

কিছু ব্রেক্সিটপন্থী ব্রিটেনের অর্থনৈতিক মডেলটির ঢেলে সাজানো দেখতে চান এবং দেশকে সিঙ্গাপুরের মতো পরিণত করার স্বপ্ন দেখেন। তবে সরকার জানিয়েছে, মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির মাধ্যমে তারা রাষ্ট্রীয়ভাবে পরিচালিত জাতীয় স্বাস্থ্য পরিষেবা, খাদ্যমান ও কৃষিকাজকে উৎসর্গ করবে না।

এদিকে আবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে জো বাইডেনের জয়ী হওয়ার বিষয়টি জানুয়ারির পরে উত্তর আয়ারল্যান্ডকে যুক্তরাজ্যের অভ্যন্তরীণ বাজারে আবদ্ধ করার জনসনের পরিকল্পনাকে সীমাবদ্ধ করতে পারে। সুতরাং ব্রিটেনের সামনে আসলে কী অপেক্ষা করছে তা পুরোপুরি অনিশ্চিত। সময়ই বলে দেবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ছেড়ে ব্রিটেনের সফল কিংবা ধাক্কা খাওয়ার গল্পটি।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *