বিশ্ববাজারে পণ্যের সরবরাহ সংকট বাড়াচ্ছে ইন্দোনেশিয়া

দেশীয় খনিজ সম্পদকে কাজে লাগিয়ে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি আরো জোরদার করতে চায় ইন্দোনেশিয়া। এ কারণে বিভিন্ন ধরনের কাঁচামাল পণ্য রফতানি কমিয়ে আনছে দেশটির সরকার। এক পর্যায়ে এসব পণ্য রফতানি পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়ার লক্ষ্যে এগোচ্ছে এ দেশ। এ কারণে বিশ্ববাজারে বেশকিছু পণ্যের দাম ব্যাপক হারে বেড়েছে। বাড়ছে সরবরাহ সংকটের উদ্বেগ। খবর এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল প্ল্যাটস।

স্থানীয় বাজারে কাঁচামাল পণ্যের ঊর্ধ্বমুখী দামে লাগাম টানার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। অন্যদিকে পরিশোধন ও প্রক্রিয়াকরণ শিল্পের উন্নয়নও করা হচ্ছে, যা দেশীয় অর্থনীতিতে বড় মাত্রায় মূল্য সংযোজন করবে। এ বিষয়গুলো কয়লা, তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি), ধাতব পণ্য ও কৃষিপণ্যের আন্তর্জাতিক বাজার অস্থিতিশীলতার দিকে ঠেলে দিচ্ছে।

বিশ্বের ধাতব ও এলএনজি উৎপাদক দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম ইন্দোনেশিয়া। এছাড়া তাপীয় কয়লা ও পাম অয়েল উৎপাদনে দেশটি শীর্ষস্থানীয়।

সর্বশেষ পদক্ষেপ অনুযায়ী, ২৭ জানুয়ারি ইন্দোনেশিয়া সরকার পাম অয়েল রফতানিকারকদের মোট রফতানির ২০ শতাংশ স্থানীয় বাজারে সরবরাহের নির্দেশ দিয়েছে। কয়লা রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপের তিন সপ্তাহের মাথায় এ নির্দেশনা জারি করা হলো। এদিকে ফেরো নিকেল ও নিকেল পিগ আকরিকের ওপর উচ্চমাত্রার শুল্ক আরোপের পরিকল্পনাও রয়েছে সরকারসংশ্লিষ্টদের। এটি শিল্প অংশীজনদের মাঝে উদ্বেগ বাড়াচ্ছে। পাশাপাশি বিশ্বজুড়ে পণ্যগুলোর দাম বাড়াতেও সহায়তা করছে।

নিকেল রফতানি নীতিমালায় কড়াকড়ি আরোপ করায় ক্ষতির মুখে পড়তে পারে চীনের স্টেইনলেস ইস্পাত কারখানাগুলো। এর মধ্যে বেশকিছু কারখানা চলতি বছরই তাদের কার্যক্রম শুরু করবে বলে জানা গেছে।

বিদায়ী বছরের ৩১ ডিসেম্বর ইন্দোনেশিয়া কয়লা রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। কারণ জ্বালানি পণ্যটির মজুদ কমে যাওয়ায় দেশটির বিভিন্ন অঞ্চলে ভয়াবহ বিদ্যুৎ সংকটের আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল। ইন্দোনেশিয়ান কয়লার শীর্ষ ক্রেতা দেশ চীন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, মালয়েশিয়া ও ফিলিপাইন। এসব দেশ ইন্দোনেশিয়াকে নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে নিতে অনুরোধ জানায়।

চলতি মাসে ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট জোকো উইদোদো ফের ধাতব পণ্যের আকরিক রফতানি বন্ধ করার সিদ্ধান্তের কথা জানান। উদ্দেশ্য পরিশোধন ও প্রক্রিয়াকরণ শিল্পের প্রসার ঘটানো। পাশাপাশি বেশি দামে আধা পরিশোধিত ও পরিশোধিত পণ্যের রফতানি বাড়ানো। এদিকে চীন ইন্দোনেশিয়ার ফেরো নিকেলের ওপর অনেক বেশি নির্ভরশীল। পণ্যটির রফতানি বন্ধ হলে চীনের ধাতব পণ্য খাত বিপাকে পড়বে।

ইন্দোনেশিয়া বিশ্বের সপ্তম শীর্ষ এলএনজি রফতানিকারক। চলতি বছর জ্বালানি সংকট মোকাবেলায় দেশটি রফতানির পরিবর্তে বেশির ভাগ এলএনজি স্থানীয় বাজারে সরবরাহ করবে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র। ফলে রফতানি প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

এদিকে নতুন নীতিমালার অধীনে দেশটির পাম অয়েল রফতানিকারকদের ২০ শতাংশ পণ্য স্থানীয় বাজারে সরবরাহ করতে হবে। তারা কতখানি অপরিশোধিত পাম অয়েল, পরিশোধিত, ব্লিচড ও সুগন্ধি পাম অলিন স্থানীয় বাজারে বিক্রি করছে তা সরকারকে হিসাব দিতে হবে। সরকারি দায়বদ্ধতা মানতে সক্ষম হলে তাদের ছয় মাসের জন্য রফতানির অনুমতি দেয়া হবে।

তথ্য বলছে, চলতি মাসে ইন্দোনেশিয়া কয়লা রফতানি নিষেধাজ্ঞা আরোপের পরই আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যটির দাম বেড়ে যায়। অব্যাহত বিধিনিষেধ এ পরিস্থিতিকে আরো অস্থিতিশীল করে তুলবে। এদিকে ২০ জানুয়ারি নিকেলের দাম বেড়ে এক দশকের সর্বোচ্চে পৌঁছবে। সম্প্রতি পাম অয়েলের দাম বেড়ে অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *