বিশ্বকে যেভাবে বদলে দিতে পারে ফাইভজি

ডিজিটাল প্রযুক্তির ওপর ভর করে বর্তমান বিশ্ব এগিয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে পঞ্চম প্রজন্মের ইন্টারনেট (ফাইভজি) সামনে আসার পর নতুন এক দিগন্তের উন্মোচন ঘটেছে। এই যেমন ভারতেই ২০২৫ সালের মধ্যে ডিজিটাল অর্থনীতির মূল্য দাঁড়াবে ১ ট্রিলিয়ন ডলার। যদিও এর জন্য দেশটির বিস্তৃত ডিজিটাল অবকাঠামোর প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। ভারতের মতো এখন একইভাবে অন্য উন্নয়নশীল দেশগুলোরও উচিত এ বিষয়ে মনোযোগ দেয়া, যা কিনা ভবিষ্যতে ডিজিটালি শক্তিশালী হওয়ার পথকে আরো বিস্তৃত করবে।

যে কোনো স্থানে বসে শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ তৈরি করে দিয়ে ফাইভজি মুহূর্তের মধ্যে শিক্ষা ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন নিয়ে আসতে পারে। যেমন দক্ষিণ এশিয়া ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে সব জায়গাতে স্কুলে গিয়ে শিক্ষালাভ করা সহজ নয়। বিশেষত গ্রামীণ অঞ্চলগুলোর জন্য এ কথাটি বিশেষভাবে সঠিক।

কিন্তু ফাইভজির মাধ্যমে উচ্চমাত্রার মিথস্ক্রিয়াসম্পন্ন ভার্চুয়াল ক্লাসরুম তৈরি করা যেতে পারে এবং দেশের যেকোনো স্থান থেকে যেকোনো কনটেন্ট স্ট্রিমিং করা যেতে পারে, যা কিনা সহজেই গ্রাম ও শহর এলাকার ব্যবধানকে কমিয়ে দিতে পারে। এর ফলে যা হবে তা হলো, দূরবর্তী অবস্থানে বসে শিক্ষকদের ভিডিও দেখার পরিবর্তে শিক্ষার্থীরা রিয়েল টাইমেই ক্লাসগুলোতে অংশগ্রহণ করতে পারবে।

পাশাপাশি ফাইভজির মধ্য দিয়ে নির্ভরযোগ্য স্বাস্থ্যসেবা খাত তৈরি করা সম্ভব, যেখানে দূরবর্তী অঞ্চলগুলো থেকেও প্রবেশ করা যাবে। এর মধ্য দিয়ে স্বানীয় একটি ফোন বুথকে সরাসরি যুক্ত করা যেতে পারে বিশ্বের যেকোনো দেশের সঙ্গে। ফলে রিমোট ডায়াগনস্টিক এবং টেলিসেবা গ্রামীণ স্বাস্থ্যসেবার লক্ষ্য পূরণ করতে পারবে।

বর্তমান সময়ে যে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির কথা বলা হচ্ছে, সেখানে কৃষি খাতকে এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। ফাইভজির মধ্য দিয়ে কৃষিকে ডিজিটালাইজেশন করে প্রযুক্তির উন্মোচন ঘটাতে পারলে তা সামগ্রিক উৎপাদন ক্ষমতাকে কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিতে পারে। একটি স্মার্ট সেন্সর খামারে স্থাপন করার মধ্য দিয়ে রিয়েল টাইমেই মাটির অবস্থা, আর্দ্রতা ও তাপমাত্রা পরিমাপ সম্পর্কিত তথ্য বিশেষজ্ঞদের সরবরাহ করা যায়। বিপরীতে মুহূর্তের মধ্যে কৃষকরা জানতে পারবে নিজেদের শস্যের উৎপাদন ও গুণাগুণ ঠিক রাখতে কী কী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবে।

এদিকে সেন্সর সজ্জিত ডিভাইসগুলো একে অপরের সঙ্গে কথা বলছে। এটি আগামী দিনে স্মার্ট বাসা এবং শহরের গুরুত্বপূর্ণ মানদণ্ড হয়ে উঠবে। বিশেষ করে আবাসন খাতে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের নতুন এক যুগ দেখা যাবে। যেমন, অপটিমাইজড বিদ্যুতের ব্যবহার, স্বয়ংক্রিয় মুদি বাজারের তালিকা এবং বৈদ্যুতিক ডিভাইসগুলোকে ট্র্যাক করার কাজ এর মাধ্যমে সম্পন্ন করা যাবে। স্মার্ট শহরগুলোতে ফাইভজি অত্যাধুনিক বৈদ্যুতিক গ্রিড এবং মিটারিং ব্যবস্থা শুরু করতে পারে। পাশাপাশি অত্যাধুনিক ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা এবং বর্জ্য নিষ্কাশনের কাজও এর মাধ্যমে করা যেতে পারে।

ফাইভজি বিনোদন অভিজ্ঞতার ক্ষেত্রেও নতুন এক দিকের উন্মোচন ঘটাতে পারে। ভার্চুয়াল বিশ্বে খেলা ক্লাউড গেম আমরা গেমিং কনসোলের অভিজ্ঞতার সঙ্গেও মিলে যেতে পারে। এটা এমন না যে কেবল দ্রুত ডাউনলোড এবং স্ট্রিমিং করা যাবে। বরং এটি গেমিং মুডের ক্ষেত্রে বড় ধরনের পরিবর্তন নিয়ে আসবে। এছাড়া নতুন ব্যবসায়ী মডেল ও শিল্প খাতগুলোতেও ব্যাপক পরিবর্তন নিয়ে আসতে পারবে ফাইভজি।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *