বিএনপির হাতে মানুষের রক্তের দাগ —প্রধানমন্ত্রী

বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান, তার স্ত্রী খালেদা জিয়া ও ছেলে তারেক রহমানের হাতে মানুষের রক্তের দাগ উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন. ইনডেমনিটি দিয়ে জিয়া যেমন বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচার না করে পুরস্কৃত করেছিল, ঠিক একইভাবে খালেদা জিয়াও ক্লিনহার্ট অপারেশনের নামে মানুষ হত্যায় জড়িতদের ইনডেমনিটি দিয়ে পুরস্কৃত করেছিলেন। এরা দেশে খুনের রাজত্ব তৈরি করেছিল, আগুন সন্ত্রাসের মাধ্যমে দেশের মানুষকে পুড়িয়ে পুড়িয়ে হত্যা করেছে। এদের হাতে মানুষের রক্তের দাগ। একটি জাতিকে ধ্বংস করতে যা যা করার তার সবই করে গেছে জিয়াউর রহমান।

গতকাল জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে ছাত্রলীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে অবস্থিত আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এ আলোচনা সভায় প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যোগ দেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোনো আত্মত্যাগই কখনো বৃথা যায় না। ত্যাগের মধ্যেই শান্তি, ভোগের মধ্যে নয়। একজন রাজনীতিবিদের মধ্যে দেশপ্রেম ও ত্যাগের আদর্শ না থাকলে তারা দেশকে কিছু দিতে পারে না। কী পেলাম বা পেলাম না সেটা বড় কথা নয়, মানুষের জন্য কী করে যেতে পারলাম সেটাই বড় কথা। দেশের মানুষ অবশ্যই তা একদিন মূল্যায়ন করবে।

বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের ঘটনা তুলে ধরে তিনি বলেন, বিএনপি যতই গলাবাজি করুক, সত্যকে অস্বীকার করবে কীভাবে? বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনি কর্নেল ফারুক-রশিদরা বিবিসিতে নিজেরাই সাক্ষাত্কার দিয়ে বলেছে, এ হত্যাকাণ্ডে (বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড) জিয়া তাদের সঙ্গে ছিল। আর এ কারণেই অবৈধভাবে খুনি মোশতাক রাষ্ট্রপতি হয়ে জিয়াউর রহমানকে সেনাপ্রধান করে। কিন্তু বেইমান-মীরজাফররা বেশি দিন টিকে থাকতে পারে না, মোশতাকও পারেনি। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী এই জিয়া সেনাবাহিনীতে থাকা মুক্তিযোদ্ধা অফিসার-সৈনিকদের নির্মমভাবে হত্যা করেছে। ছাত্রদের হাতে অস্ত্র-অর্থ তুলে দিয়ে বিপথে নিয়ে গেছে এবং হজের জন্য বঙ্গবন্ধুর কেনা হিযবুল বাহার জাহাজকে প্রমোদতরী বানিয়ে এই জিয়া ছাত্রদের চরিত্রকে ধ্বংস করেছে। একটি জাতিকে ধ্বংস করতে যা যা করার তার সবই করে গেছে এই জিয়াউর রহমান। আর স্ত্রী খালেদা জিয়াও ক্ষমতায় এসে বলেছিল, আওয়ামী লীগকে শায়েস্তা করতে নাকি তার ছাত্রদলই যথেষ্ট।

বাংলাদেশে গুম-খুনের রাজনীতি জিয়াউর রহমানই শুরু করেছে মন্তব্য করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, অবৈধ ক্ষমতাকে নিষ্কণ্টক করতে পুরো দেশকেই রক্তাক্ত করেছে এই জিয়া। ১৮-১৯টি ক্যুর ঘটনায় হাজার হাজার সেনা অফিসার-সৈনিককে হত্যা করেছে এই জিয়া। এটাই নাকি তার গণতন্ত্র! এ দেশে গুম-খুনের শুরু করেছে এই জিয়াই। অনেক সেনাপরিবার জিয়ার আমলে লাশটুকুও ফেরত পাননি। ক্ষমতাকে নিষ্কণ্টক করতে শত শত মানুষকে হত্যা করে, আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মীকেও হত্যা করে তাদের লাশ গুম করে ফেলা হয় ওই সময়ে।

বঙ্গবন্ধুর আদর্শ নিয়ে নিজেদের গড়ে তোলার জন্য ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, দেশের মানুষকে উন্নত জীবন দিতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু সারাটা জীবন লড়াই-সংগ্রাম করে গেছেন, শেষ পর্যন্ত নিজের জীবনটাও দিয়ে গেছেন। বঙ্গবন্ধুর সেই স্বপ্ন ছিল দেশের মানুষকে সুন্দর জীবন উপহার দেয়া, সেটাই আমার একমাত্র লক্ষ্য। দেশের একটি মানুষ গৃহহারা থাকবে না, প্রতিটি মানুষের ঘরে আমরা বিদ্যুৎ পৌঁছে দেব। আমরা ক্ষমতায় এসে প্রতিশোধ নিতে যাইনি, দেশের উন্নয়নের দিকে নজর দিয়েছি। মিথ্যার পরিবর্তে আজ সত্য উদ্ভাসিত হয়েছে। তিনি প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষা করতে দলের চলমান বৃক্ষরোপণ অভিযান অব্যাহত রাখার জন্যও তিনি ছাত্রলীগের প্রতিটি নেতাকর্মীর প্রতি আহ্বান জানান।

ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়ের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *