বাইডেনের আগমনে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে ফ্রান্স-জার্মানির ফাটল

প্রতিরক্ষায় ইউরোপের স্বনির্ভরতার ‘বিভ্রান্তি’ নিয়ে জার্মানির প্রতিরক্ষামন্ত্রীর সতর্কবাণীতে বেশ নড়েচড়ে বসেছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ। তিনি এতটাই ধাক্কা খেয়েছেন যে গত এক মাসে ফ্রান্সের মন্ত্রিসভার বৈঠকে নিয়মিত উঠে আসছে এ বিষয়টি। খবর রয়টার্স।

ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের দপ্তর এলিসি প্রাসাদে অনুষ্ঠিত বৈঠকে উপস্থিত এক কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানান, আমরা এটাকে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা হিসেবে দেখছি এবং তা চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মেরকেলের নীতির সঙ্গে যায় না।

গত ২ নভেম্বর পলিটিকোতে প্রকাশিত এক কলামে জার্মান প্রতিরক্ষামন্ত্রী অ্যানাগ্রে ক্রাম্প-কারেনবাউয়ার লেখেন, প্রতিরক্ষার জন্য অনাগত দিনগুলোতেও ইউরোপকে ওয়াশিংটনের ওপর নির্ভর করতে হবে।

ইউরোপের ‘কৌশলগত স্বনির্ভরতার’ প্রবক্তা মাখোঁ এ অবস্থানের তীব্র বিরোধিতা করেন এবং তিনি যুক্তি দেখান, প্রতিরক্ষায় অধিকতর স্বনির্ভর ইউরোপকেই সম্মান করবে যুক্তরাষ্ট্র।

এ ঘটনার মধ্য দিয়ে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে আড়ালে-আবডালে ইউরোপের দুই ক্ষমতাধর দেশের মধ্যে ফাটল কতটা তীব্র হয়েছে। ওয়াশিংটনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের উপস্থিতিতে মাখোঁ যেভাবে ইউরোপীয় স্বনির্ভরতার ধারণা গত চার বছরে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন, বাইডেনের জয়ে তা বড় একটা ধাক্কা খেল।

বাইডেনের জয়ে ইইউ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে পুরনো উষ্ণ সম্পর্ক ফিরে আসবে, স্থিতিশীল ট্রান্স-আটলান্টিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দাঁড়াবে এমনটা আশা করা হলেও মাখোঁর ঘনিষ্ঠজনরা বলছেন, ট্রাম্পের ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতির কারণে ইউরোপীয় কৌশলগত স্বনির্ভরতার ধারণা এগিয়ে নিয়ে যেতে পেরেছিলেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মাখোঁর ঘনিষ্ঠ ওই কূটনীতিক বলেন, নিশ্চিতভাবে ট্রাম্প আমাদের সহায়তা করেছেন তার কথা ও কাজের মাধ্যমে। ট্রাম্পের অসহযোগিতা ও একলা চলো নীতির কারণে ইইউর প্রতিরক্ষা যন্ত্র মাখোঁর দিকে এগিয়েছে এবং ইইউ প্রতিরক্ষা সহযোগিতা জোরদার হয়েছে। বৃহস্পতিবার তিনি আরো জানান, একটি সামরিক ডকট্রিনের প্রায় কাছাকাছি সামরিক কৌশলপত্রের খসড়া তৈরির কাছাকাছি রয়েছে ইইউ।

কিন্তু জার্মানির প্রতিরক্ষামন্ত্রীর ভিন্নতর দৃষ্টিভঙ্গি প্যারিস ও বার্লিনের ফাটলটা স্পষ্ট করে তুলেছে। হোয়াইট হাউজে বাইডেনের মতো একজন আন্তঃআটলান্টিক নীতির সমর্থক আসায় মাখোঁর পরিকল্পনা কতদূর এগোয় তা প্রশ্নসাপেক্ষ। জার্মানি মনে করে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ প্রতিরক্ষা সম্পর্কেই ইউরোপের নিরাপত্তা স্বার্থ সুরক্ষিত হয়।

এক জার্মান কর্মকর্তা বলেন, বাইডেনের জয়ে একদিন সুপ্ত থাকা জার্মানি-ফ্রান্স ভিন্নমত স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। আপনি সহজেই ট্রাম্পকে প্রত্যাখ্যান করতে পারেন, কারণ তিনি ইইউ নিয়ে মাথা ঘামানোর প্রয়োজন বোধ করেননি কিন্তু বাইডেনের মাধ্যমে ওয়াশিংটনের দৃষ্টিভঙ্গিই পাল্টে যাবে।

ফরাসি কর্মকর্তারা বলছেন, বাইডেনের জয়ের আগে ও পরে আন্তঃআটলান্টিক সম্পর্কের ভবিষ্যৎ নিয়ে নিয়মিত কথা বলেছেন মাখোঁ ও মেরকেল। দুজনের ঐকমত্যের প্রসঙ্গ টেনে মাখোঁ নাকি বলেছিলেন, মেরকেল প্যারিসের সঙ্গেই আছেন।

এদিকে জার্মান কর্মকর্তারা বলছেন, মেরকেল তার প্রতিরক্ষামন্ত্রীর অবস্থানকে সমর্থন করেন। উল্লেখ্য, আগামী বছর মেরকেল দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়াবেন। সেক্ষেত্রে মাখোঁ-মেরকেলের রসায়ন ততটা দীর্ঘায়িত হচ্ছে না।

জার্মান প্রতিরক্ষামন্ত্রীর ওয়াশিংটনের সঙ্গে কাজ করার আগ্রহের মাধ্যমে মাখোঁর প্রতি বার্লিনের সন্দেহ ভূমিকা রাখছে বলে মনে করেন উলরাইকে ফ্রাঙ্ক। থিংকট্যাংক ইসিএফআরের এ বিশ্লেষক মনে করেন মাখোঁ গোপনে ন্যাটোকে দুর্বল করার চেষ্টা করছেন, এমন আশঙ্কা রয়েছে বার্লিনের।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *