ফ্রান্সে ৫ কোটি ইউরো জরিমানার বিরুদ্ধে গুগলের আপিল খারিজ

সময়টা গত বছরের শুরুর দিকের। বৈশ্বিক সার্চ জায়ান্ট গুগলের বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত তথ্যের নিরাপত্তা লঙ্ঘনের অভিযোগ তোলে ফ্রান্স। বিশেষ করে গ্রাহককে কেন্দ্র করে দেয়া গুগলের বিজ্ঞাপনে কীভাবে তাদের ব্যক্তিগত তথ্য ব্যবহার করা হচ্ছে, সেটি বোঝাতে ব্যর্থ হয় জায়ান্ট প্রতিষ্ঠানটি। এর ফলে বড় জরিমানার মুখে পড়ে মার্কিন প্রতিষ্ঠানটি। ফ্রান্সের ডাটা সুরক্ষাবিষয়ক সংস্থার সিএনআইএল এ সময় গুগলকে ৫ কোটি ইউরো বা ৫ কোটি ৬০ লাখ ডলার জরিমানা করে, যার বিরুদ্ধে আপিল করে প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানটি। তবে দীর্ঘদিন শুনানির পর গত শুক্রবার গুগলের সে আপিল খারিজ করে দিল ফ্রান্সের বিচার বিভাগীয় সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ। এর ফলে এখন এ জরিমানা দেয়া ছাড়া গুগলের জন্য বিকল্প কোনো পথ রইল না। খবর এএফপি।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের ডাটা সুরক্ষা ও ব্যক্তিগত গোপনীয়তার রক্ষাকবচ হলো জেনারেল ডাটা প্রটেকশন রেগুলেশন ( জিডিপিআর)। আর গ্রাহকদের ব্যক্তিগত তথ্য ব্যবহারের এ নীতিমালা ভঙ্গের অভিযোগে গুগলকে এ জরিমানা করা হয়। যার বিরুদ্ধে গুগল দেশটির বিচারসংক্রান্ত বিষয়ের সর্বশেষ প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষ কাউন্সিল অব স্টেটে আপিল করে। তবে দীর্ঘ শুনানির পর এটি সিএনআইএলের দেয়া রায়কে সমর্থন দিয়েছে।

সিএনআইএলের দেয়া রায়কে সমর্থন করে কাউন্সিল অব স্টেটও মনে করে, জিডিপিআর অনুযায়ী গ্রাহকদের যে তথ্য সরবরাহ করা হয়েছে, সেটির স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে পারেনি গুগল। এমনকি বিজ্ঞাপনের স্বার্থে ব্যবহারকারীদের যেসব তথ্য গুগল ব্যবহার করেছে, সেটিও অনধিকারপ্রবেশমূলক চর্চা।

সিএনআইএলের করা বড় অংকের এ জরিমানার বিষয়ে ফ্রান্সের সর্বোচ্চ বিচার বিভাগীয় এ কর্তৃপক্ষ বলছে, ডাটা সুরক্ষার মতো এমন গুরুতর একটি নীতিমালা ভঙ্গ করা, এটির ব্যাপ্তি, জিডিপিআরের অবস্থা এবং গুগলের আর্থিক অবস্থা বিবেচনা করে সিএনআইএলের এ জরিমানার পরিমাণ মোটেই বেশি নয়।

অন্যদিকে এক বিবৃতিতে মার্কিন জায়ান্ট প্রতিষ্ঠানটি বলছে, এখন এ নীতিমালার আলোকে কোন ধরনের পরিবর্তন নিয়ে আসা দরকার, সেটি পর্যবেক্ষণ করবে তারা।

২০১৮ সালের মাঝামাঝি কার্যকর হওয়া জিডিপিআরের অধীনে গুগলের বিরুদ্ধে প্রথম সিএনআইএলে অভিযোগ করে দুটি অ্যাডভোকেসি গ্রুপ। এর একটি হলো ফ্রান্স কোয়াডরেচার নেট গ্রুপ, যারা প্রায় ১০ হাজার ব্যক্তির স্বাক্ষরসহ সিএনআইএলে অভিযোগ করে। অন্যটি হলো নান অব ইউর বিজনেস, যেটির প্রতিষ্ঠাতা গোপনীয়তা রক্ষায় কাজ করা অস্ট্রিয়ান নাগরিক ম্যাক্স স্কিম।

এর মধ্যে ম্যাক্স স্কিম তার অভিযোগে বলেন, গুগল অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল অপারেটিং সফটওয়্যারের মাধ্যমে ব্যবহারকারীকে কিছু ব্যক্তিগত তথ্য দিতে বাধ্য করছে। যেটি অনলাইনেও করা হচ্ছে। আবার এটির অ্যাপ ব্যবহারেরও এমন ব্যক্তিগত তথ্য চাওয়া হচ্ছে, যা সরবরাহ করা না হলে ব্যবহারকারীর অ্যাকসেস দেয়া হচ্ছে না।

এদিকে গুগলের বিরুদ্ধে ফ্রান্সের ডাটা সুরক্ষাবিষয়ক সংস্থা সিএনআইএলের এটিই প্রথম জরিমানা না। এর আগে ২০১৪ সালে ব্যক্তিগত গোপনীয়তা নীতিমালা ভঙ্গের অভিযোগে জায়ান্ট প্রতিষ্ঠানটিকে দেড় লাখ ইউরো জরিমানা করা হয়। এছাড়া ২০১৬ সালেও গুগলকে ১ লাখ ইউরো জরিমানা করে সিএনআইএল। গুগলকে ধারাবাহিক এমন জরিমানা করার কারণেই সম্ভবত এবারের রুলে গ্রাহকদের ব্যক্তিগত তথ্য কীভাবে সংরক্ষণ করতে হবে এবং বিভিন্ন ওয়েব পেজে সেটি কীভাবে ব্যবহার করা যাবে, তা বিস্তারিত উল্লেখ করেছে সিএনআইএল।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *