চীন থেকে ভিয়েতনামে স্থানান্তরের খবর সত্য নয়: স্যামসাং

স্যামসাং ডিসপ্লে নিজেদের উৎপাদন কার্যক্রমের সিংহভাগ চীন থেকে ভিয়েতনামে স্থানান্তরের পরিকল্পনা নিয়েছে, যা চলতি বছরই বাস্তবায়ন করা হতে পারে। চীন থেকে স্যামসাং ডিসপ্লের উৎপাদন কার্যক্রম ভিয়েতনামের হো চি মিন সিটিতে নিজস্ব কারখানায় স্থানান্তরে কার্যক্রম চলমান রয়েছে। গত শুক্রবার প্রকাশিত ভিয়েতনামের রাষ্ট্রীয় সংবাদ মাধ্যমের এমন খবর সত্য নয় বলে দাবি করেছে স্যামসাং। খবর এনডিটিভি ও জিনিউজ।

ভিয়েতনামের রাষ্ট্রীয় সংবাদ মাধ্যম দৈনিক টুই ট্রয়ের প্রতিবেদনে ভিয়েতনামের ওয়েবসাইটের একটি ঘোষণার উদ্ধৃতি দিয়ে স্যামসাং ডিসপ্লের উৎপাদন চীন থেকে সরানোর খবর প্রকাশ করা হয়েছে। যদিও সিউলে স্যামসাং ডিসপ্লের মূল প্রতিষ্ঠান দাবি করছে, এমন তথ্যের কোনো ভিত্তি নেই। ভিয়েতনামের কিছু অনলাইন সংবাদ মাধ্যমেও চীন থেকে স্যামসাং ডিসপ্লের উৎপাদন সরানোর খবর এসেছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভিয়েতনামে সবচেয়ে বৃহৎ একক বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান স্যামসাং। দেশটিতে স্যামসাংয়ের মোট বিনিয়োগ ১ হাজার ৭০০ কোটি ডলার ছাড়িয়েছে। ছয়টি কারখানা ও দুটি গবেষণা ও উন্নয়ন কেন্দ্রের (আরঅ্যান্ডডি) পাশাপাশি ভিয়েতনামে ডিসপ্লে উৎপাদন কারখানাও রয়েছে স্যামসাংয়ের। চীনে নভেল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর বড় ধরনের বিপর্যয়ের মুখে পড়ে সরবরাহ চেইন। এরপর থেকেই সরবরাহ চেইনে বৈচিত্র্য আনতে কাজ করতে পরিকল্পনা করছে অনেক প্রতিষ্ঠান। ভিয়েতনামের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়, ভিয়েতনামের ব্যবসায়িক হাব খ্যাত হো চি মিন সিটির স্যামসাং ইলেকট্রনিকস কমপ্লেক্সে ডিসপ্লে উৎপাদন কার্যক্রম পরিচালনা করবে প্রতিষ্ঠানটি।

স্যামসাং ডিসপ্লে উৎপাদন কার্যক্রম ভিয়েতনামে সরিয়ে নেয়ার খবর অস্বীকার করলেও গত এপ্রিলে রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘লিকুইড ক্রিস্টাল ডিসপ্লে’ বা এলসিডি প্যানেল উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ করতে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। চলতি বছরের শেষ নাগাদ দক্ষিণ কোরিয়া ও চীনে নিজেদের এলসিডি প্যানেল উৎপাদনের সব কার্যক্রম বন্ধ করবে স্যামসাং বলে দাবি করা হয়।

‘স্যামসাং ডিসপ্লে’ স্যামসাং ইলেকট্রনিকস কোম্পানি লিমিটেডের ডিসপ্লে নির্মাণ বিভাগ। গত বছর অক্টোবরে দক্ষিণ কোরিয়ায় নিজেদের একটি এলসিডি প্যানেল উৎপাদন কারখানা বন্ধ করেছিল প্রতিষ্ঠানটি। বিশ্বজুড়ে এলসিডি প্যানেলের চাহিদা হ্রাস এবং সরবরাহ আধিক্যের কারণে উৎপাদন বন্ধের সিদ্ধান্তের কথা বলা হয়।

আইফোন নির্মাতা অ্যাপল ইনকরপোরেশনের অন্যতম এলসিডি প্যানেল সরবরাহকারী স্যামসাং ডিসপ্লে। গত অক্টোবর প্রতিষ্ঠানটি জানায়, নতুন আঙ্গিকের আরো উন্নত ‘কোয়ান্টাম ডট’ ডিসপ্লে উৎপাদনে বিদ্যমান কারখানা এবং একটি উৎপাদন লাইন হালনাগাদে ১ হাজার ৭২ কোটি ডলার (১৩ দশমিক ১ ট্রিলিয়ন ওন) বিনিয়োগের পরিকল্পনা রয়েছে। আগামী পাঁচ বছরে এ অর্থ বিনিয়োগ করা হবে।

স্যামসাং ডিসপ্লে আইফোনসহ অ্যাপলের বিভিন্ন ডিভাইসের অন্যতম ডিসপ্লে সরবরাহকারী। টেলিভিশন এবং স্মার্টফোনের মতো ইলেকট্রনিকস ডিভাইসের ডিসপ্লের বৈশ্বিক চাহিদা পূরণে ডিসপ্লে কারখানার উৎপাদন সক্ষমতা বাড়াতে নতুন বিনিয়োগের কার্যক্রম শুরু করতে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। ২০২৫ সালের মধ্যে এ বিনিয়োগের কার্যক্রম সম্পন্ন হবে বলে জানানো হয়েছে।

মোবাইল ডিভাইস, বিশেষ করে সেলফোন ও পরিধেয় প্রযুক্তিপণ্যের গুরুত্বপূর্ণ একটি অনুষঙ্গ ডিসপ্লে। বিভিন্ন প্রযুক্তিপণ্যে এখন অর্গানিক লাইট এমিটিং ডায়োড (ওএলইডি) ডিসপ্লে বেশি ব্যবহার হচ্ছে। তবে এলসিডি ডিসপ্লের চাহিদা এখন অনেকটা কমেছে। এছাড়া এলসিডি ডিসপ্লে নির্মাতা বেড়ে যাওয়ায় খুব বেশি ভালো ব্যবসা করতে পারছে না স্যামসাং ডিসপ্লে। ওএলইডি কিংবা এলসিডি যে ধরনের হোক আল্ট্রা-ক্লিয়ার ডিসপ্লে ব্যবসাকে ভবিষ্যতে বড় ধরনের ব্যবসার সুযোগ হিসেবে দেখছে স্যামসাং। যে কারণে বিদ্যমান কারখানায় ডিসপ্লে প্যানেল উৎপাদন সক্ষমতা বাড়াতে নতুন বিনিয়োগের এ পরিকল্পনা।

স্যামসাং এরই মধ্যে চীন থেকে স্মার্টফোন উৎপাদন কার্যক্রম শতভাগ ভিয়েতনাম ও ভারতে সরিয়ে ফেলেছে। চীনের স্মার্টফোন বাজারে স্যামসাংয়ের দখল এখন ১ শতাংশের নিচে নেমেছে। দেশটিতে স্থানীয় প্রতিদ্বন্দ্বীদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হিমশিম খাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। যে কারণে সরবরাহ চেইন ঢেলে সাজাতে নতুন করে ভাবছে প্রতিষ্ঠানটি।

কভিড-১৯ মহামারীর কারণে স্যামসাং ডিসপ্লের উৎপাদন কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। গত এপ্রিলের দ্বিতীয় সপ্তাহে স্যামসাং ডিসপ্লে উৎপাদন কারখানার একটি বিভাগের কর্মীদের কোয়ারেন্টিনে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছিল উত্তর ভিয়েতনামের কর্তৃপক্ষ। দেশটিতে অবস্থিত প্রতিষ্ঠানটির একটি বৃহৎ ডিসপ্লে কারখানার এক কর্মীর শরীরে নতুন করে কভিড-১৯ শনাক্ত হওয়ায় এমন নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল।

ওই সময় ভিয়েতনামের ব্যাক গিয়াং প্রভিন্সের অ্যান্টি-কভিড-১৯ টাস্কফোর্সের পক্ষ থেকে বলা হয়, স্যামসাং ডিসপ্লের কারখানার ইকিউসি-এসআই বিভাগের ২৫ বছর বয়সী এক কর্মীর শরীরে নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। ওই কর্মী স্যামসাং ডিসপ্লে কারখানার যে বিভাগে কাজ করতেন, সে বিভাগের সব কর্মীকে কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয়েছে।

চলতি বছরের শুরুতে ভারতে নতুন ডিসপ্লে কারখানা নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছিল স্যামসাং। এক সময় ভারতের স্মার্টফোন বাজারে শীর্ষ অবস্থানে ছিল প্রতিষ্ঠানটি। তবে চীনা ব্র্যান্ডগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে বাজারটিতে স্যামসাংয়ের অবস্থান নড়বড়ে হয়ে পড়েছে। নিজেদের অবস্থান পুনরুদ্ধারের অংশ হিসেবে ভারতের নয়ডায় একটি ডিসপ্লে উৎপাদন কারখানা স্থাপনের ঘোষণা দিয়েছিল প্রতিষ্ঠানটি।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *