ফেসিয়াল রিকগনিশন সিস্টেম বন্ধ করছে ফেসবুক

ক্রমবর্ধমান উদ্বেগের মুখে ফেসিয়াল রিকগনিশন সিস্টেম বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সোস্যাল মিডিয়া জায়ান্ট ফেসবুক। এ সিস্টেম মূলত স্বয়ংক্রিয়ভাবে ছবি ও ভিডিওতে থাকা ব্যবহারকারীদের শনাক্ত করত। খবর রয়টার্স।

এক ব্লগপোস্টে ফেসবুকের প্যারেন্ট কোম্পানি মেটার কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) বিভাগের ভাইস প্রেসিডেন্ট জেরোম প্যাজেন্টি বলেন, ফেসিয়াল রিকগনিশন ব্যবহার নিয়ন্ত্রণের পরিষ্কার নীতিমালা প্রণয়নে নিয়ন্ত্রকরা এখনো কাজ করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, আমরা বিশ্বাস করি চলমান অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেসিয়াল রিকগনিশনের সীমিত ব্যবহার নিশ্চিতে পরিষ্কার নীতি প্রণয়ন করাই উপযুক্ত।

গত কয়েক বছর ধরে এ প্রযুক্তি ব্যবহারের নৈতিকতার বিষয়ে বিভিন্ন সময় তদন্ত পরিচালিত হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে সোস্যাল মিডিয়া জায়ান্টটি এ প্রযুক্তি ব্যবহার বন্ধের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।

প্রযুক্তি খাতের সমালোচকরা জানান, নিরাপত্তার জন্য খুচরা বিক্রেতা, হাসপাতাল ও অন্যান্য ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ফেসিয়াল রিকগনিশন প্রযুক্তি ব্যবহারে বেশি আগ্রহী। কিন্তু এ প্রযুক্তির ব্যবহার নিরাপত্তায় বিঘ্ন ঘটানোর পাশাপাশি প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে হামলার শিকারে পরিণত করতে এবং অনুপ্রবেশকারীদের নজরদারিতে সুবিধা করে দিতে পারে। এসব আইবিএম ফেসিয়াল রিকগনিশন পণ্য বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছে। অন্যদিকে মাইক্রোসফট ও অ্যামাজন যাচাইয়ের কাজে পুলিশের কাছে এ প্রযুক্তি বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছে। ব্যবহারকারীদের নিরাপত্তা ও প্লাটফর্মে বিস্তৃত অপব্যবহারের বিষয়ে বিভিন্ন দেশের নিয়ন্ত্রক ও আইনপ্রণেতারা দীর্ঘদিন থেকে ফেসবুকের কড়া সমালোচনা করে আসছিলেন।

ফেসবুক জানায়, তাদের প্লাটফর্মে দৈনিক ব্যবহারকারীদের এক-তৃতীয়াংশ ফেসিয়াল রিকগনিশন পদ্ধতি বেছে নিয়েছেন। নতুন সিদ্ধান্তের ফলে ১০০ কোটি ব্যবহারকারীর অ্যাকাউন্ট থেকে ফেসিয়াল রিকগনিশন টেমপ্লেট ডিলেট করে দেয়া হবে। ফেসবুকের এক মুখপাত্র জানান, বিশ্বব্যাপী এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা হবে। আশা করা হচ্ছে ডিসেম্বরের মধ্যে এটি সম্পন্ন হবে। প্রাইভেসি অ্যাডভোকেসি ও ডিজিটাল রাইটস গ্রুপ ফেসবুকের এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে।

ইলেকট্রনিক প্রাইভেসি ইনফরমেশন সেন্টারের নির্বাহী পরিচালক অ্যালান বাটলার বলেন, ফেসবুকসহ অন্য প্লাটফর্মগুলোর লোভের কারণে দীর্ঘদিন থেকে ব্যবহারকারীরা ব্যক্তিগত তথ্যের নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছিলেন। ২০১১ সালে এপিক প্রথম এ প্রোগ্রাম বন্ধের ঘোষণা দেয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রে এখনো ব্যাপক তথ্য সুরক্ষা ব্যবস্থা প্রয়োজন বলেও জানান তিনি।

ইলেকট্রনিক ফ্রন্টিয়ার ফাউন্ডেশনের সিনিয়র স্টাফ অ্যাটর্নি অ্যাডাম শোয়ার্টজ বলেন, অন্যান্য প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর পর ফেসবুক এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলেও এটি জাতীয় পর্যায়ে প্রযুক্তিটির ব্যবহার থেকে সরে আসার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সোস্যাল জায়ান্টটি জানায়, আনুষ্ঠানিকভাবে ফেসিয়াল রিকগনিশন ব্যবস্থা বন্ধ করে দিলেও দৃষ্টিহীনদের জন্য স্বয়ংক্রিয় অল্ট টেক্সট টুলের বাকি কার্যক্রম চলবে। এ টুলস যেকোনো ছবির বিস্তারিত বর্ণনা তৈরি করত। রিকগনিশন টুল অপসারণের পর থেকে এ টুল কোনো ছবিতে থাকা ব্যক্তিদের পরিচয় প্রকাশ করবে না। ছবি ছাড়া অন্য পণ্যে এ প্রযুক্তি ব্যবহারের বিষয়টি স্বীকার করেছে ফেসবুক। পরিচয় যাচাইয়ের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানটি এ টুলসকে এখনো অধিক কার্যকর বলে মনে করে।

অনেক আগে থেকেই ফেসবুকের ফেসিয়াল রিকগনিশন টুল সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল। ২০১৯ সালে ব্যবহারকারীদের গোপনীয়তা লঙ্ঘনের অভিযোগে ফেসবুককে ৫০০ কোটি ডলার জরিমানা করেছিল যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ট্রেড কমিশন (এফটিসি)। সে সময়ই এ প্রযুক্তিকে উদ্বেগের বিষয় হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *