প্রাকৃতিক গ্যাসের বৈশ্বিক চাহিদায় উল্লম্ফন

জলবায়ু পরিবর্তন ঠেকাতে অপরিচ্ছন্ন জ্বালানি কয়লার ব্যবহার থেকে সরে আসার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ। ফলে জ্বালানি পণ্যটির বাজার দখল করে নিচ্ছে প্রাকৃতিক গ্যাস। পণ্যটির বৈশ্বিক চাহিদায় উল্লম্ফন দেখা দিয়েছে। আগামী দিনগুলোয় চাহিদা আরো বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ক্রমবর্ধমান চাহিদায় প্রধান ভূমিকা রাখছে এশিয়া ও ইউরোপের দেশগুলো।

ডানা গ্যাসের প্রধান নির্বাহী প্যাট্রিক অ্যালমন-ওয়ার্ড এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল প্ল্যাটসের মিডল ইস্ট এক্সিকিউটিভ পেট্রোলিয়াম কনফারেন্সে বলেন, এশিয়া ও ইউরোপ বিশ্বের বৃহৎ দুটি প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানিকারক অঞ্চল। পণ্যটির চাহিদা দুই অঞ্চলেই ব্যাপক হারে বেড়েছে। চাহিদা পূরণে আমদানি বাড়িয়েছে এ অঞ্চলের দেশগুলো।

তিনি আরো বলেন, ২০১৫-২০ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছরে এশিয়ার দেশগুলোয় প্রাকৃতিক গ্যাসের চাহিদা ধারাবাহিকভাবে ৪০ শতাংশ করে বেড়েছে। প্রবৃদ্ধির গতিও ছিল দ্রুত। এ অঞ্চলের মধ্যে চীনে সবচেয়ে দ্রুতগতিতে চাহিদা বেড়েছে। বৃদ্ধির হার ছিল ৭৫ শতাংশ। ইউরোপেও চাহিদা অন্য যেকোনো অঞ্চলের তুলনায় বেশি ছিল। তবে চাহিদা বৃদ্ধির হার ছিল অত্যন্ত সহনীয়। পাঁচ বছরে ইউরোপে প্রাকৃতিক গ্যাসের চাহিদা বেড়েছে গড়ে ৬ শতাংশ করে।

বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, চীন ও ভারতসহ জ্বালানি ব্যবহারকারী দেশগুলোয় সাম্প্রতিক বছরগুলোয় প্রাকৃতিক গ্যাসের চাহিদা অভাবনীয় বেড়েছে। কারণ এসব দেশ নিজেদের পরিবেশ সুরক্ষায় তুলনামূলক বেশি অপরিচ্ছন্ন জ্বালানি ব্যবহার কমিয়ে আনার জোর প্রয়াস চালাচ্ছে।

অ্যাংলো-ডাচ এনার্জি জায়ান্ট শেল গত বছর একটি বার্ষিক প্রতিবেদনে জানায়, আগামী ২০৪০ সালের মধ্যে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) দীর্ঘমেয়াদি চাহিদা দ্বিগুণ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। চাহিদার পরিমাণ দাঁড়াতে পারে ৭০ কোটি টনে। প্রতিবেদনে বলা হয়, দূষণযোগ্য জ্বালানি কয়লার ব্যবহার কমে এলে বিকল্প হিসেবে কদর বাড়বে প্রাকৃতিক গ্যাসের।

অ্যালমন ওয়ার্ড বলেন, ২০০১-২০ সাল পর্যন্ত প্রাকৃতিক গ্যাসের বৈশ্বিক চাহিদা ৮০ শতাংশ করে বেড়েছে। চাহিদার পরিমাণ ২ লাখ ৫০ হাজার কোটি ঘনফুট থেকে বেড়ে ৪ লাখ ৫০ হাজার ঘনফুটে উন্নীত হয়েছে। পাশাপাশি আমদানীকৃত গ্যাসের বাজার হিস্যা ১২৫ শতাংশ বেড়ে ১ লাখ ২৪ হাজার ৪০০ কোটি ঘনফুটে উন্নীত হয়েছে। অন্যদিকে পরিচ্ছন্ন জ্বালানি চাহিদা বাড়ায় প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানিকারক দেশের সংখ্যাও ১২ থেকে বেড়ে ৪৩টিতে পৌঁছেছে।

তিনি বলেন, এশিয়া ও ইউরোপে সবচেয়ে দ্রুত প্রসারমাণ তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) বাজার। ইউরোপে এলএনজি উৎপাদন গত পাঁচ বছরে প্রায় ২০ শতাংশ করে কমেছে। তবে আমদানীকৃত গ্যাসের পরিমাণ বেড়েছে প্রায় ৪০ শতাংশ করে। সে হিসাবে এলএনজিই এখনো বাজারে আধিপত্য বিস্তার করে আছে।

তিনি বলেন, আমরা দেখেছি, এশিয়ার বাজারে নাটকীয়ভাবে বেড়েছে প্রাকৃতিক গ্যাসের চাহিদা। বিপরীতে ইউরোপে জ্বালানি পণ্যটির উত্তোলন বেড়েছে ৪০ শতাংশ। একইভাবে বেড়েছে আমদানীকৃত গ্যাসের সরবরাহও। এক্ষেত্রেও এলএনজির আধিপত্য বজায় ছিল।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে এলএনজির চাহিদায় উল্লস্ফন দেখা দিলেও উৎপাদন সে অনুপাতে বাড়েনি। কারণ এ খাতে বিনিয়োগের পরিমাণ করোনা মহামারীর পর আশঙ্কাজনক হারে কমেছে। ফলে বাজারে সরবরাহ ও চাহিদায় ভারসাম্যহীনতা তৈরি হচ্ছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, দ্রুত বিনিয়োগ না বাড়ালে জ্বালানি বাজারে যে সংকট চলছে তা আগামী এক দশকেও শেষ হবে না।

জ্বালানি পণ্যের বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান ভরটেক্সা সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে জানায়, চলতি বছরের নভেম্বরে বৈশ্বিক এলএনজি রফতানি বেড়ে আট মাসের সর্বোচ্চে পৌঁছেছে। মার্চের পর সবচেয়ে গতিশীলও ছিল রফতানি। বিশ্বের দ্বিতীয় শীর্ষ রফতানিকারক কাতারের রফতানি কমে গেলেও তাতে ভারসাম্য এনেছে যুক্তরাষ্ট্র ও মালয়েশিয়ান উৎপাদন। তবে বাজারে চলমান অস্থিতিশীলতা না কাটলে রফতানি বছরের মাঝামাঝি সময়ের মতো নিম্নমুখী হয়ে উঠতে পারে।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *