প্রভাব সামলানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় কোম্পানিগুলো

ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনের প্রভাব টের পেতে শুরু করেছে দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশগুলোর ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। কৃষি খাত থেকে শুরু করে পর্যটন সব জায়গাতেই পড়েছে এর অভিঘাত। পরিস্থিতি সামলানোর জন্য জরুরি প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় কোম্পানিগুলো। খবর নিক্কেই এশিয়া।

সংঘাত দীর্ঘায়িত হলে ব্যবসা খাতে কেমন প্রভাব পড়তে পারে তার প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলো। চলমান সংঘাতে বেশ ধাক্কা খেয়েছে থাইল্যান্ডের চ্যারোইন পকফান্ড ফুডস বা সিপি ফুডস। ২০২১ সালে তারা ২ হাজার ২০০ কোটি রুবল বা ৩০ কোটি ডলারে দুটি রুশ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান অধিগ্রহণ করেছিল। চিকেন ও পশুখাদ্য খাতে ২০০৬ সালে রাশিয়ায় একটি ইউনিট চালু করেছিল থাই কনগ্লোমারেটটি। ওয়েবসাইটে প্রাপ্ত তথ্যে দেখা গেছে ২০১৬ সালে রাশিয়ার ষষ্ঠ বৃহৎ মাংস উৎপাদক কোম্পানি ছিল এটি।

২০২০ সালে ৫৯ হাজার কোটি বাত আয়ের ৭০ শতাংশ এসেছে থাইল্যান্ডের বাইরে থেকে। রাশিয়াকে কেন্দ্র ধরে ইউরোপের বাজারে সম্প্রসারণের চেষ্টা করছিল সিপি ফুডস। স্থানীয় বাজারে অনেক প্রতিদ্বন্দ্বী কোম্পানি থাকায় এটা সিপি ফুডসের সম্প্রসারণ পরিকল্পনায় গুরুত্বপূর্ণ জায়গা নিয়েছিল। কিন্তু মস্কোর ওপর যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ), জাপান ও অন্যান্য প্রধান অর্থনীতির নিষেধাজ্ঞায় ওই পরিকল্পনা নিয়ে পুনরায় হিসাব কষতে হচ্ছে সিপি ফুডসের।

থাই অ্যানালিটিকস কোম্পানি এম কর্প রিভিউর বিশ্লেষক আথাপর্ন আরাইয়াসান্তিপার্ব মনে করেন, সিঙ্গাপুর ও থাইল্যান্ডের বাজারে এখন জোর দেবে সিপি ফুডস। কিন্তু এ দুটো দেশের জনসংখ্যা ৬ কোটি ৬০ লাখ, যা ইউরোপের জনসংখ্যার চেয়ে নয় গুণ কম।

শস্য ও ভোজ্য তেলের অন্যতম উৎপাদক দেশ হচ্ছে রাশিয়া ও ইউক্রেন। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর ওডেসায় উৎপাদন বন্ধ করে দেয় উইলমার ইন্টারন্যাশনাল। এক বিবৃতিতে সিঙ্গাপুরভিত্তিক পাম তেল উৎপাদক কোম্পানিটি জানায়, কর্মীদের নিরাপত্তা আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। আমরা গভীরভাবে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি।

বন্দর বন্ধ হয়ে যাওয়া ও মাল খালাস স্থগিত হওয়ায় অঞ্চলটির বাণিজ্য নেটওয়ার্ক বাধাগ্রস্ত হয়েছে। সিঙ্গাপুরের ওলাম ইন্টারন্যাশনাল এখন ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার মতো বিকল্প বাজার থেকে অধিক গম সংগ্রহের চেষ্টা চালাচ্ছে।

সামনের দিনগুলোয় খাদ্যদ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধির দিকে ইঙ্গিত করে ওলাম গ্রুপের সিইও সানি ভার্গিজ বলেন, রাশিয়া ও ইউক্রেনের শস্যবাজারে প্রভাব মানে বৈশ্বিক গম ও ভোজ্য তেলের বাজারে অস্থিরতা।

গত সোমবার মস্কোর সঙ্গে সব ধরনের ফ্লাইট বন্ধ ঘোষণা করে সিঙ্গাপুর এয়ারলাইনস। এছাড়া লন্ডনের পথে রাশিয়ার আকাশসীমা এড়িয়ে যাচ্ছে কান্তাস এয়ারওয়েজ। ১ ঘণ্টা অধিক সময় নিয়ে বরং মধ্যপ্রাচ্যের আকাশসীমা ব্যবহার করছে তারা। থাই এয়ারওয়েজ ইন্টারন্যাশনালের আশঙ্কা অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধিতে পরিবহন ব্যয় বাড়তে পারে। এভিয়েশন খাত বাদ দিয়েও পুরো পর্যটন খাতে পড়বে ইউক্রেন-রাশিয়া সংকটের প্রভাব।

করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে ২০২১ সালে লোকসান গুনেছে থাইল্যান্ডভিত্তিক হোটেল ও রেস্টুরেন্ট গ্রুপ মাইনর ইন্টারন্যাশনাল। চলতি বছরে পুনরুদ্ধারের আশাবাদ থাকলেও ইউক্রেন সংকট মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত জানুয়ারিতে থাইল্যান্ডে ১ লাখ ৩৪ হাজারের মতো বিদেশী পর্যটক এসেছে, যার ১৮ শতাংশই রাশিয়ার। দ্য থাই চেম্বার অব কমার্সের পূর্বাভাস, ইউক্রেন সংকটের কারণে থাইল্যান্ডে রুশ পর্যটক আগমন ৫০ শতাংশ কমে যাবে। থাই পর্যটন নগরী ফুকেট উন্মুক্ত হওয়ার পর থেকে সর্বোচ্চ পর্যটক এসেছে রাশিয়া থেকে।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *