প্রথম তিন মাসে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি রাজস্ব হিলি স্থলবন্দরে

দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দরে চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৫৪ কোটি ৫১ লাখ টাকা বেশি রাজস্ব আয় হয়েছে। আলোচ্য সময়ে বন্দর থেকে রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত ছিল ৩০ কোটি ২৭ লাখ টাকা। বিপরীতে আহরণ হয়েছে ৮৪ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। বন্দরসংশ্লিষ্টরা বলছেন, পণ্য আমদানিতে বিরাজমান জটিলতা দূর করা হলে লক্ষ্যমাত্রার কয়েক গুণ বেশি রাজস্ব আহরণ করা যাবে।

হিলি স্থল শুল্কস্টেশন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে বন্দর থেকে ৬ কোটি ৭৬ লাখ টাকা রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর)। বিপরীতে আহরণ হয়েছে ৪৩ কোটি ২৮ লাখ টাকা। আগস্টে ১৩ কোটি ৫৪ লাখ টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আহরণ হয়েছে ২০ কোটি ৮৬ লাখ টাকার রাজস্ব। আর সেপ্টেম্বরে ৯ কোটি ৯৭ লাখ টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে এসেছে ২০ কোটি ৬৩ লাখ টাকা।

হিলি স্থলবন্দরের আমদানিকারক রিপন হোসেন বলেন, বেনাপোল, সোনামসজিদ ও বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে পাথর আমদানির ক্ষেত্রে রাজস্ব পরিশোধের পর আমদানিকারকরা সেসব পাথর বন্দর থেকে তাদের নিজ নিজ ডাম্পে নিয়ে যায়। আমরা সেই সুবিধা পাই না। ভারত থেকে পাথর আমদানির সব শুল্ক পরিশোধ করে বন্দরের ভেতরেই সেসব পাথর রাখতে হয়। ফলে আমাদের বন্দরের বাড়তি মাশুল গুনতে হয়। পাথর বাইরে রাখতে পারলে আমাদের খরচ বাঁচত। পাশাপাশি সব সময় পণ্য বিক্রিও করতে পারতাম। এমনটি হলে বন্দর দিয়ে পাথর আমদানি আরো বাড়বে। আমরা যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ জানাই, যেন অন্যান্য বন্দরের মতো পাথর বাইরে রাখার সুবিধা হিলি স্থলবন্দরে দেয়া হয়।

মোটরগাড়ির যন্ত্রাংশ আমদানিকারক জুয়েল হোসেন জানান, আমরা আগে হিলি স্থলবন্দর দিয়ে মোটরসাইকেল, ট্রাক, ট্রাক্টর ও মোটরগাড়ির পার্টস আমদানি করতাম। কিন্তু বর্তমানে বিভিন্ন সমস্যার কারণে আমরা হিলি স্থলবন্দর ছেড়ে বেনাপোল বন্দর দিয়ে এসব পণ্য আমদানি করছি। হিলি স্থলবন্দরে এসি পোস্টিং রয়েছে, এ কারণে মালামাল ছাড়করণে দেরি হয়। বেনাপোল স্থলবন্দরে কাস্টমস কমিশনারের কার্যালয় রয়েছে, ফলে সেখান থেকে দ্রুত পণ্য ছাড় দেয়া যায়। এছাড়া হিলি স্থলবন্দর দিয়ে বর্তমানে এসব পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে কিছু বাধা রয়েছে, এ কারণেও এ বন্দর দিয়ে আমদানি করতে পারছি না।

আমদানিকারক শাহিনুর রেজা বলেন, হিলি স্থলবন্দর দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম স্থলবন্দর। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো হওয়ায় ও আমদানীকৃত পণ্য দুয়েকদিনের মধ্যেই ছাড়করণ করে বাজারজাত করতে পারার কারণে আমদানিকারকরা হিলি স্থলবন্দর ব্যবহারে উৎসাহ বোধ করেন। এ কারণে বিভিন্ন প্রতিকূল অবস্থার মধ্যেও হিলি স্থলবন্দর থেকে লক্ষ্যমাত্রার বেশি রাজস্ব আহরণ হয়ে আসছে। যদি আমাদের এ বন্দরকে বেনাপোল, ভোমরাসহ অন্যান্য বন্দরের মতো পণ্যের শুল্কায়নসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দেয়া হয়, তাহলে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার কয়েক গুণ বেশি রাজস্ব আহরণ সম্ভব। বিশেষ করে বন্দর দিয়ে ফল আমদানির ক্ষেত্রে ট্রাকের চাকা অনুযায়ী শুল্কায়নের যে প্রথা চালু করা রয়েছে, সেই প্রথার কারণে একজন আমদানিকারক ছয় চাকার ট্রাকে পাঁচ টন ফল আমদানি করলেও তাকে ১৪ টনের শুল্ক পরিশোধ করতে হচ্ছে। এ কারণে এ বন্দর দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ফল আমদানি বন্ধ রয়েছে। এ নিয়ম বাতিল করা হলে ফল আমদানি শুরু হবে। একই সঙ্গে অধিক শুল্কযুক্ত পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে বেনাপোল বন্দরের সঙ্গে মিল রেখে ভ্যালু নির্ধারণ করে শুল্কায়ন করা হলে অনেক আমদানিকারক এ বন্দর ব্যবহারে আগ্রহী হবেন। এতে করে বন্দরের আমদানির পরিমাণ যেমন বাড়বে, তেমনি রাজস্ব আহরণও বাড়বে।

হিলি স্থল শুল্কস্টেশনের ডেপুটি কমিশনার সাইদুল আলম বলেন, চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে বন্দর থেকে রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩০ কোটি ২৭ লাখ টাকা। আর এ সময়ে আমাদের আহরণ হয়েছে ৮৪ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। অথচ আগের অর্থবছরের একই সময়ে রাজস্ব আহরণ হয়েছিল ৩৪ কোটি ৪১ লাখ টাকা। চলতি অর্থবছরে বন্দর দিয়ে বেশি পাথর আমদানি হওয়ায় রাজস্ব আহরণ বেশি হয়েছে। আশা করছি, করোনাকালীন অবস্থা কেটে গেলে বন্দর দিয়ে বাণিজ্য আরো বাড়বে, একই সঙ্গে রাজস্ব আহরণও বাড়বে।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *