পূর্ব ভূমধ্যসাগরের শান্তি হুমকিতে ফেলেছে তুরস্কের জাহাজ: গ্রিস

একটি গ্রিক দ্বীপের কাছে নতুন করে তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান শুরু করেছে তুরস্ক। তবে আঙ্কারার এ পদক্ষেপ মোটেই ভালোভাবে নিচ্ছে না গ্রিস। এরই মধ্যে এ বিষয়ে সামরিক সভা ডেকেছে দেশটির সরকার। গ্রিসের অভিযোগ, তেল ও গ্যাস অনুসন্ধানে তুরস্কের এ জাহাজ মোতায়েন পূর্ব ভূমধ্যসাগরের শান্তি হুমকিতে ফেলছে। খবর এএফপি।

গ্রিসের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, ভূমধ্যসাগরে অনুসন্ধানকারী জাহাজ অরুক রেইস মোতায়েনের মধ্য দিয়ে তুরস্কের ‘অস্থির ভূমিকা’ প্রকাশিত হয়ে গেছে। মূলত গ্যাসসমৃদ্ধ পূর্ব ভূমধ্যসাগরে জ্বালানি অনুসন্ধান নিয়ে তুরস্কের সঙ্গে প্রতিবেশী গ্রিসসহ সাইপ্রাস ও ইসরায়েলের দ্বন্দ্ব লেগেই আছে। এ অবস্থায় গ্রিক মন্ত্রণালয় ঘোষণা দিয়েছে, এথেন্স এক্ষেত্রে কোনো ধরনের ব্ল্যাকমেইল সহ্য করবে না। একই সঙ্গে সার্বভৌমত্ব ও সার্বভৌমিক অধিকার রক্ষায় প্রয়োজনীয় সবকিছু করবে। গ্রিক প্রধানমন্ত্রী কিরিয়াকোস মিতসোতাকিস দেশটির সামরিক প্রধান ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করার পরই এ ঘোষণা দেয়া হয়।

মিতসোতাকিসের কার্যালয় থেকে জানানো হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে ইইউ কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট চার্লস মাইকেল ও ন্যাটো সেক্রেটারি জেনারেল জেনস স্টলটেন্টবার্গের সঙ্গে কথা বলেছেন। পরবর্তী সময়ে স্টলটেনবার্গ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টুইটারে বলেন, পূর্ব ভূমধ্যসাগরের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আমি গ্রিক প্রধানমন্ত্রীর (মিতসোতাকিস) সঙ্গে কথা বলেছি। উদ্ভূত পরিস্থিতি জোটগত সংহতি ও আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি সম্মান জানিয়ে নিরসন করতে হবে।

এদিকে রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা এএনএ (এথেন্স নিউজ এজেন্সি) জানিয়েছে, তুরস্কের জাহাজ অরুক রেইস এরই মধ্যে গ্রিসের সমুদ্রসীমার সর্ব-পূর্ব অংশে পৌঁছে গেছে। গ্রিসের এক জ্যেষ্ঠ মন্ত্রী জানান, নৌবাহিনীর জাহাজ তুরস্কের অনুসন্ধানকারী জাহাজটির গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করছে। এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জর্জ জেরাপেত্রিতিস রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনকে বলেন, আমরা রাজনৈতিক ও প্রায়োগিকভাবে সম্পূর্ণ প্রস্তুত রয়েছি। প্রয়োজন অনুযায়ী যে কোনো স্থানে আমাদের নৌবহর মোতায়েন করা হবে।

এর আগে তুরস্কের জ্বালানিমন্ত্রী ফাতিহ দোনমেজ টুইটারে বলেছিলেন, অরুক রেইস প্রয়োজনীয় অনুসন্ধান পরিচালনায় তার গন্তব্যস্থল কাসতেল্লোরিজো দ্বীপের কাছে পৌঁছে গেছে। এ বিষয়ে তুরস্ক দি ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম নেভিগেশনাল টেলেক্স সিস্টেম নাভটেক্সে একটি বার্তাও পাঠায়। তাতে ঘোষণা দেয়া হয়, কাসতেল্লোরিজো দ্বীপে তাদের জাহাজ ১০ থেকে ২৩ আগস্টের মধ্যে কার্যক্রম পরিচালনা করবে।

গত মাসেও জাহাজ অরুক রেইসের আরেকটি অনুসন্ধান পরিচালনার কথা ছিল। কিন্তু তুরস্ক গ্রিস ও জার্মানির সঙ্গে আলোচনাকে সামনে রেখে ওই অনুসন্ধান অভিযান স্থগিত করে। তবে গত সপ্তাহে গ্রিস ও মিসর ওই এলাকায় একটি অর্থনৈতিক অঞ্চল গঠনের বিষয়ে চুক্তিতে স্বাক্ষর করার পরই পরিস্থিতি তিক্ত হতে শুরু করে।

এর পরই তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, তথাকথিত এ সমুদ্র চুক্তির কোনো মানে নেই। এটি একেবারেই অন্তঃসারশূন্য। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগান বলেন, গ্রিস ও মিসরের মধ্যকার এ নতুন চুক্তি পূর্ব ভূমধ্যসাগরে অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোয় কোনো প্রভাব ফেলেনি। এ চুক্তি সত্ত্বেও ওই এলাকায় তুরস্ক ফের তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান শুরু করবে।

উল্লেখ্য, এর আগে তুরস্কের আপত্তি সত্ত্বেও জানুয়ারিতে গ্রিস, সাইপ্রাস ও ইসরায়েল পূর্ব ভূমধ্যসাগর থেকে ইউরোপে গ্যাস সরবরাহের জন্য একটি বৃহৎ পাইপলাইন স্থাপনের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *