নভেল করোনাভাইরাস মহামারীর ফলে সৃষ্ট অর্থনৈতিক সংকটে সবচেয়ে বড় ধাক্কা খেয়েছেন কর্মজীবী নারীরা। বিশেষ করে সেবা খাতে নারীরা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। খবর এএফপি।
প্রাদুর্ভাবের প্রকৃতিটাই এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে যে বার, সম্মেলন কেন্দ্র, হেয়ারড্রেসিং সেলুন, হোটেল, পাব ও রেস্তোরাঁগুলোর মতো ঝুঁকিপূর্ণ কম বেতনের কর্মক্ষেত্রে পুরুষদের চেয়ে নারীদের চাকরি হারানো বা ছেড়ে দেয়ার বেশি সম্ভাবনা রয়েছে।
লকডাউন চলাকালীন স্কুল বন্ধ হওয়ায় পরিস্থিতি আরো খারাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ বাসায় অবস্থানকালে কর্মজীবী পুরুষদের চেয়ে নারীরা সন্তানের দেখাশোনার দায়িত্ব বেশি পালন করেন।
কভিড-১৯ রোগের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকার কর্তৃক লকডাউন কার্যকরে আতিথেয়তা ও অবকাশের মতো সেবা খাতগুলো মারাত্মকভাবে আক্রান্ত হয়েছে।
ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের প্রভাষক ক্রিস্টোফার রাউ বলেন, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রে নারীদের চাকরি হারানোর সম্ভাবনা বেশি, কারণ তারা বেশির ভাগই সেবা খাতে কাজ করছেন। তিনি এএফপিকে বলেন, আপনি যখন চাকরি হারিয়ে ফেলেন তখন কেবল বর্তমানের জন্যই আপনার উপার্জন বন্ধ হচ্ছে না, ভবিষ্যতের জন্যও বন্ধ হচ্ছে।
বিশ্বজুড়ে লকডাউন যখন শিথিল হচ্ছে এবং সংক্রমণের হার ও মৃত্যুহার হ্রাস পাচ্ছে তখন অন্যান্য খাতের চেয়ে সেবা খাতই সবার শেষে খুলবে। কারণ এ খাত অল্প দূরত্বের মধ্যে অধিকসংখ্যক গ্রাহকের সেবার ওপর নির্ভর করে।
ব্রিটেনে ঘরে অবস্থানের নীতিমালা চলতি মাসের শুরুতে শিথিল হতে শুরু করছে। এতে অনেকেই ঘর থেকে বের হচ্ছেন। কিন্তু পাব, বার ও রেস্তোরাঁ কেবল আগামী ৪ জুলাই থেকে আবার খোলা হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ব্রিটেনে ধাপে ধাপে ব্যবসায়িক কার্যক্রম শুরুর অংশ হিসেবে খোলাবাজার ও গাড়ির শোরুমগুলো চালু হচ্ছে। কিছু শিশু স্কুলে ফিরতেও শুরু করেছে। তবে বেশির ভাগ প্রাথমিক বিদ্যালয়ই দীর্ঘ গ্রীষ্মকালীন ছুটির আগে খুলবে না। ব্রিটেনে জুলাইয়ের মাঝামাঝি থেকে সেপ্টেম্বরের শুরু নাগাদ গ্রীষ্মকালীন ছুটি থাকে।
থিংকট্যাংক প্রতিষ্ঠান ইনস্টিটিউট অব ফিসকাল স্টাডিজের মতে, চলমান এ সংকটে পারিবারিক পর্যায়ে বাবাদের চেয়ে মায়েদের চাকরি ছেড়ে দেয়া বা হারানোর সম্ভাবনা ১ দশমিক ৫ গুণ বেশি। সাময়িক ছাঁটাই বা যুক্তরাজ্য সরকারের কর্মসংস্থান বহাল রাখা প্রকল্পের আওতায় অস্থায়ীভাবে কিছু অর্থপ্রাপ্তিতে পুরুষদের বেলায় নারীদের সম্ভাবনা বেশি বলেও মনে করছে থিংকট্যাংকটি। আর মায়েরা ঐতিহ্যগতভাবেই বেতনবিহীন গৃহস্থালি কাজের বড় অংশ সম্পন্ন করেন।
লন্ডনের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে কর্মরত সারাহ নামের এক নারীকে তার ছেলেমেয়ে ঘুমাতে যাওয়ার পরও অফিসের ডেডলাইন পূরণ করতে রাত ১টা নাগাদ কাজ করে যেতে হয়।
তিনি এএফপিকে বলেন, আমি আমার বসকে বিশেষ কাজের ব্যবস্থা করতে বলার সাহস করিনি। কারণ আমি চাইনি তারা যাতে ভাবতে পারেন যে আমি ঠিকমতো কাজ করতে পারি না। আর যারা সিঙ্গেল প্যারেন্টস, তাদের সমস্যা আরো বেশি। কারণ ঘরে একজনের অনুপস্থিতি সবসময়ই অনেক কষ্টের। প্যারিসের ওষুধ শিল্পে কাজ করা এক সিঙ্গেল মাদার জানান, ঘরে সন্তান দেখা ও রান্নাবান্নার পাশাপাশি তাকে অফিসের ম্যারাথন কাজ করতে হয়। তিনি আসলে নিশ্চিত নন সন্ধ্যায় ঠিক কখন অফিসের কাজ শেষ করতে হবে। বহুমুখী এ চাপে হাঁফ ছেড়ে বাঁচার সুযোগ পাচ্ছেন না বলে জানান নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই সিঙ্গেল মাদার।