পার্বত্য চট্টগ্রামে ৩ হাজার পরিবারে হচ্ছে পুষ্টি বাগান

নভেল করোনাভাইরাসের (কভিড-১৯) প্রভাবে প্রান্তিক কৃষকদের যেন খাদ্য সংকটে পড়তে না হয় সেজন্য পারিবারিক কৃষির আওতায় বসতবাড়ির এক শতক জমিতে সবজি ও পুষ্টি বাগান স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। করোনাকালীন সরকারের প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় যেসব প্রান্তিক কৃষক এক শতক জমিতে শাকসবজি চাষাবাদ করবেন তাদের বিনা মূল্যে বীজ-চারা ও প্রণোদনা বাবদ নগদ অর্থ সহায়তা করা হবে। এরই মধ্যে এর আওতায় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলা রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানের ৩ হাজার ১৯০ জন প্রান্তিক কৃষকের নামের তালিকা পাঠানোর কার্যক্রম চলছে।

মাঠ পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, সরকারের এ উদ্যোগের ফলে করোনাভাইরাসের এ মহামারী সময়ে প্রান্তিক কৃষকদের খাদ্য সংকটে পড়তে হবে না। একদিকে যেমন প্রান্তিক কৃষকরা ভেজালবিহীন শাকসবজি উৎপাদন ও পুষ্টি বাগান স্থাপন করে নিজেদের খাদ্যের জোগান দেবেন, অন্যদিকে সামান্য শাকসবজির জন্য বাজারে হাটবাজারে যেতে হবেন না। এতে পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকার প্রান্তিক কৃষক উপকারভোগী হবেন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর রাঙ্গামাটি অঞ্চল (ডিএই) সূত্রে জানা গেছে, পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় যারা বসতবাড়িতে এক শতক জায়গায় শাকসবজি চাষাবাদ করতে আগ্রহী এমন ৩ হাজার ১৯০ জন কৃষকের তালিকা প্রস্তুত করার কার্যক্রম চলছে। প্রান্তিক এলাকার স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে প্রস্তুত করা তালিকায় কৃষকের নাম, মোবাইল ব্যাংকিং নম্বরসহ অন্যান্য তথ্য সংযুক্ত করা হয়েছে। এ প্রণোদনা প্যাকেজের তালিকায় রাঙ্গামাটির ১ হাজার ৪৩০, খাগড়াছড়ির ৯৬০ ও বান্দরবানের ৮০০ কৃষক উপকারভোগী হবেন।

ডিএই রাঙ্গামাটি অঞ্চল সূত্রে জানা গেছে, তিন পার্বত্য জেলার মধ্যে রাঙ্গামাটির ৪৫, খাগড়াছড়ির ৩০ ও বান্দরবানের ২৫টি ইউনিয়ন থেকে প্রত্যেক ইউনিয়নের ৩২টি কৃষক পরিবার এ সহায়তা পাবেন। তারা প্রত্যেকেই স্থানীয় কৃষি অফিস থেকে বিনা মূল্যে বীজ ও চারা সহায়তা পাবেন। এছাড়া জনপ্রতি জৈব ও অজৈব সার বাবদ ৪৩৫ টাকা, শাকসবজি ক্ষেতে বেড়া তৈরির খরচ বাবদ ১ হাজার টাকা ও পরিচর্যা বাবদ ৫০০ টাকাসহ নগদ মোট ১ হাজার ৯৩৫ টাকা পাবেন। সে হিসেবে পার্বত্য তিন জেলার ৩ হাজার ১৯০ জন প্রান্তিক কৃষক প্রণোদনা প্যাকেজের ৬১ লাখ ৭২ হাজার ৬৫০ টাকা নগদ অর্থ ব্যাংক ও মোবাইল ব্যাংকিংয়ের (বিকাশ ও নগদ) মাধ্যমে হাতে পাবেন। প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় মাঠ পর্যায়ের কৃষকের হাতে এ টাকা পৌঁছেছে কিনা কিংবা তালিকা প্রস্তুতকরণে কোনো ধরনের অনিয়ম হয়েছে কিনা তা সরাসরি কৃষি মন্ত্রণালয় অথবা অতিরিক্ত কার্যালয়ের কর্মকর্তারা মাঠ পর্যায়ে তদারকি করে নিশ্চিত হবেন।

খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা উমকার বিশ্বাস বলেন, করোনার এ সময়ে কৃষককে যাতে খাদ্য সংকটে পড়তে না হয় সেজন্যই মূলত সরকার এ প্রণোদনা দিচ্ছে। খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলা থেকে পারিবারিক কৃষির আওতায় চার ইউনিয়নের ১২৮ জন কৃষক এ প্রণোদনায় উপকারভোগী হবেন। প্রান্তিক কৃষকদের এ তালিকা করা হয়েছে উপজেলা কৃষি পুনর্বাসন কমিটির মাধ্যমে।

বান্দরবানের লামা ও আলীকদম উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাজিদা বিনতে সালাম জানিয়েছেন, লকডাউনের প্রভাবে স্থানীয় হাটবাজারগুলো বসতে না পারায় অনেক কৃষকই ক্ষেতে উৎপাদিত শাকসবজি বাজারে বিক্রয় করতে পারছেন না। আবার হাটবাজারে বিক্রেতারা কম আসায় অন্যরাও শাকসবজি তেমনটা পাচ্ছেন না। তাই মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে পারিবারিক কৃষির আওতায় প্রান্তিক কৃষকদের বাড়ির আশপাশের এক শতক জায়গায় শাকসবজি চাষাবাদের জন্য এ প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। প্রকল্পটির আওতায় আমার দায়িত্বপ্রাপ্ত লামা ও আলীকদম উপজেলা থেকে প্রায় তিনশ কৃষক উপকারভোগী হবেন। এতে প্রান্তিক কৃষকরা বাড়ির আঙিনায় পুষ্টি বাগান স্থাপনের ফলে অল্প শাকসবজির জন্য বাজারে যেতে হবে না।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর রাঙ্গামাটি অঞ্চলের (রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান) অতিরিক্ত পরিচালক মো. ফজলুর রহমান বণিক বার্তাকে বলেন, পারিবারিক কৃষির মাধ্যমে এক শতক জমিতে সবজি ও পুষ্টি বাগান স্থাপনের আওতায় পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলার ১০০টি ইউনিয়ন থেকে ৩২ জন কৃষক এ প্রণোদনার টাকা ব্যাংক কিংবা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে হাতে পাবেন। সার, পরিচর্যা ও সবজি বাগানের ঘের বাবদ এ টাকা দেয়া হচ্ছে। এছাড়া স্থানীয় কৃষি অফিস থেকে বিনা মূল্যে বীজ ও চারা দেয়া হবে। এ কার্যক্রমের মাধ্যমে প্রান্তিক কৃষকরা করোনার এ সময়ে শাকসবজির সংকটে পড়বেন না।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *