নিজেদের নিরাপত্তা নিয়েই শঙ্কিত বন কর্মীরা

বন বিভাগের বিভিন্ন রেঞ্জে বনের আয়তনের তুলনায় নিরাপত্তারক্ষীর সংখ্যা অপ্রতুল। তার ওপর পর্যাপ্ত নিরাপত্তা সরঞ্জামের অভাব। এ অবস্থায় বন রক্ষা করতে গিয়ে প্রায় প্রতি বছর চোরকারবারিসহ দুর্বৃত্তদের হামলার শিকার হচ্ছেন বন কর্মীরা। এতে প্রাণও দিতে হয়েছে অনেককে। সম্প্রতি কক্সবাজারের মহেশখালীতে এমন এক হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন সহকারী রেঞ্জ কর্মকর্তা ইউসুফ উদ্দিন। এ ঘটনার পর নিজেদের নিরাপত্তা নিয়েই শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন বন বিভাগের নিরাপত্তা কর্মীরা।

বন বিভাগের তথ্যমতে, বন বিভাগের ভূমি উদ্ধারে গিয়ে দুর্বৃত্তদের হামলায় ৬ আগস্ট মারা যান মহেশখালীর সহকারী রেঞ্জ কর্মকর্তা ইউসুফ উদ্দিন। এর আগে ২০১৮ চট্টগ্রামের উত্তর ফটিকছড়ির হাসনাবাদ রেঞ্জের বাগান মালিক আবদুস সালাম স্থানীয় দখলদারদের হামলায় মারা যান। এছাড়া ১৯৭৭ সালে বাড়বকুণ্ডে হাজারীখিল বিট অফিসার, ১৯৮৫ সালে ফরেস্টার আমিনুল হক এবং বনপ্রহরী ইয়ার আহম্মদ মারা গিয়েছিলেন দুর্বৃত্তদের হামলায়। প্রায় প্রতি বছরই বন কর্মকর্তারা হামলার শিকার হচ্ছেন। সর্বশেষ ২৭ জুলাই সাভারের বিরুলিয়া ইউনিয়নে বন বিভাগের বেদখল হওয়া সরকারি সম্পত্তি উদ্ধার করতে গেলে বন বিভাগের কর্মীদের ওপর হামলা চালায় ভূমিদস্যুরা। এ সময় সহকারী বন সংরক্ষক মোহাম্মদ সাজেদুল হক, ফরেস্টার দিলীপ কুমারসহ পাঁচজন আক্রান্ত হন।

বন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, বনের নিরাপত্তার জন্য বন বিভাগ থেকে নিরাপত্তারক্ষীদের বন্দুক, এসএলআর রাইফেল, থ্রি-নট-থ্রি কিংবা কাটা রাইফেল ব্যবহারের জন্য দেয়া হয়। এ অস্ত্রগুলো এখন পুলিশও ব্যবহার করে না। অথচ এসব অস্ত্র দিয়েই বন রক্ষার দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে।

বন বিভাগের আর্মস আইন অনুযায়ী, বনের নিরাপত্তা রক্ষায় বন বিভাগের বিভিন্ন রেঞ্জের ডিউটি অফিসার থেকে শুরু করে প্রধান বন সংরক্ষকের অস্ত্র ব্যবহারের অনুমতি আছে। বনের নিরাপত্তার স্বার্থে কাউকে গ্রেফতার কিংবা আগ্নেয়াস্ত্রসহ গ্রেফতারের অনুমতি রয়েছে বনের নিরাপত্তারক্ষীদের। এমনকি অস্ত্র পরিচালনার জন্য চাকরিতে যোগদানের পর বনের নিরাপত্তারক্ষীদের রাজশাহীর সারদায় পুলিশের মতো ট্রেনিং দেয়া হয়ে থাকে। তবে যেখানে অস্ত্রের নিরাপত্তা কম থাকে সেখানে অস্ত্র ব্যবহারে শিথিলতার কথা উল্লেখ করা আছে আইনে।

লোকবলের পরিসংখ্যান পর্যালোচনা করে দেখা যায়, চট্টগ্রামের উত্তর বন বিভাগের মঞ্জুরীকৃত অফিসার পদমর্যাদার ২৫টি পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন মাত্র আটজন এবং কর্মচারী পদে ৩৭০ জনের বিপরীতে ২৬৯ জন কর্মরত আছেন। সবমিলিয়ে ৩৯৫টি পদের বিপরীতে ১১৮টি পদ এখন শূন্য। এদিকে চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগে প্রায় ৩৫ শতাংশ পদ শূন্য রয়েছে। একই অবস্থা কক্সবাজারের উত্তর, দক্ষিণ এবং উপকূলীয় বন বিভাগের। সেখানে মোট পদের প্রায় ৩৫ শতাংশের বেশি পদ এখনো শূন্য অবস্থায় আছে।

এদিকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করলেও কোনো ঝুঁকিভাতা পান না বনপ্রহরীরা। এ ঝুঁকিভাতা নিয়ে চট্টগ্রাম বন বিভাগ থেকে ২০১৭ সালে মন্ত্রণালয়ে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছিল।

বাংলাদেশ ফরেস্ট গার্ড কর্মচারী সমিতির চট্টগ্রাম অঞ্চলের সভাপতি মোস্তফা জামাল উদ্দিন তালুকদার বণিক বার্তাকে জানান, কক্সবাজারের কর্মকর্তার মৃত্যুর পর আমরা আমাদের নিরাপত্তা নিয়ে চরমভাবে শঙ্কিত হয়ে পড়েছি। এর আগে চট্টগ্রামে দুই বছর আগেও এক বাগান মালিক দুর্বৃত্তদের হামলায় মারা গিয়েছিলেন। বড় বড় রেঞ্জে আমরা মাত্র তিন-চারজন নিরাপত্তা দিচ্ছি, তাও আবার সাবেকি আমলের অস্ত্র দিয়ে। এত ঝুঁকি নিয়ে কাজ করলেও আমরা কোনো ঝুঁকি ভাতা পাচ্ছি না সরকার থেকে। লোকবল না থাকার কারণে আমরা দখলদার কিংবা কাঠ পাচারকারীদের সঙ্গে পেরে উঠছি না।

চট্টগ্রাম অঞ্চলের প্রধান বন সংরক্ষক মোহাম্মদ আবদুল আউয়াল সরকার বণিক বার্তাকে বলেন, কক্সবাজারের মহেশখালীর সহকারী রেঞ্জ কর্মকর্তা দুর্বৃত্তদের হামলায় মারা যাওয়ার ঘটনা খুবই দুঃখজনক। আমি নিজে আমার বন সংরক্ষক এবং পুলিশ-প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলেছি। তারাও বিষয়টি নিয়ে কাজ করছেন। তবে এ ঘটনার পর সবাই একটু হলেও আতঙ্কিত অবস্থায় আছেন। আমরা সবার সঙ্গে কথা বলেছি। প্রশাসন যেকোনো ঘটনায় আমাদের সহায়তা করবেন বলে জানিয়েছেন।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *