নিউজিল্যান্ডে নতুন বল ‘ফ্যাক্টর’

ক্রাইস্টচার্চে টেস্ট আর নেলসনে ওয়ানডে অভিষেক হয়েছিল নূরুল হাসান সোহানের। নিউজিল্যান্ডের কঠিন কন্ডিশনে আন্তর্জাতিক টেস্ট ক্যারিয়ার শুরু ৪৭ রানের ইনিংস দিয়ে। যে কন্ডিশনে দলের অভিজ্ঞ ও পরীক্ষিতরা ব্যর্থ সেখানে দুই ওয়ানডে ম্যাচে ৭ ও ৮ নম্বর পজিশনে ব্যাট হাতে সোহান খেলেছিলেন ২৪ ও ৪৪ রানের ইনিংস। যদিও আর আন্তর্জাতিক ওয়ানডে ম্যাচ খেলার সুযোগ পাননি তিনি। তবে ৫ বছরের আগের সেই অভিজ্ঞতা এখনো এই উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যানের স্মৃতিতে জ্বলজ্বলে। এবার তার সতীর্থরা রয়েছে নিউজিল্যান্ড সফরে। আর তিনি নিজেকে ফিট রাখতে ঘাম ঝাড়াচ্ছেন মিরপুর শেরেবাংলা মাঠে। তারই এক ফাঁকে দৈনিক মানবজমিনের সঙ্গে জানিয়েছেন ব্ল্যাকক্যাপদের সঙ্গে লড়াইয়ের কৌশল।
তিনি বলেন, ‘নিউজিল্যান্ডের ওয়েদার ও কন্ডিশনে খেলাটা আসলেই কঠিন। নতুন বলটা যদি মানিয়ে নিতে পারি, ধরেন প্রথম ১০ ওভারে একটার বেশি উইকেট না দিই, তাহলে ব্যাটসম্যানদের জন্য রান করা অনেক সহজ হয়ে যাবে। আমার ওয়ানডে ও টেস্ট অভিষেক নিউজিল্যান্ডেই হয়েছিল। পুরাতন বলে ব্যাটিং করে মজা পাওয়া যায়। বলটা সুন্দর দেখা যায়। আমাদের দেশে যেমন বলটা পিচে পড়লে আমরা দোমনায় থাকি যে কী হবে। আর সেখানে (নিউজিল্যান্ড) ট্রু বাউন্স থাকে। টি-টোয়েন্টি বা ওয়ানডে যাই বলেন নতুন বল খেলাটা চ্যালেঞ্জিং হবে আমাদের জন্য। শুরুতেই যদি আমরা উইকেট হারিয়ে ফেলি ঐ জায়গা থেকে ঘুরে দাঁড়ানো কঠিন হয়ে যায়। তাই উইকেট হাতে রেখে যদি পরের দিকে যাই তাহলে ব্যাটসম্যানরা শট খেলার সুযোগ পাবে।’

বাংলাদেশ দলের সামনে এবার শুধু নিউজিল্যান্ডে কন্ডিশনই চ্যালেঞ্জ নয়। তাদের সেখানে মোকাবিলা করতে হচ্ছে করোনা নিয়ন্ত্রণে কঠিন কোয়ারেন্টিন ব্যবস্থারও। ২৪শে ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ দল সেখানে পৌঁছানোর পর ২৪ ঘণ্টা রুমে বন্দি ছিল। এরপর করোনার প্রথম রিপোর্ট নেগেটিভ আসায় দিনে মাত্র ৩০ মিনিট মুক্তি মিলছে। প্রথম ৭টি দিন এভাবেই কাটাতে হবে। এখানেই শেষ নয়, পরের সাত দিনও কোয়ারেন্টিনে থেকেই অনুশীলন করতে হবে। এই ১৪ দিনের প্রভাব যে পড়তে পারে টাইগারদের মানসিকতায় তা নিয়ে আছে ভয় ও শঙ্কা। সোহান মনে করেন এখান থেকে বের হওয়া কঠিন। তারপরও যোগ্যতা আছে বাংলাদেশ দলের নিজেদের কঠিন পরিস্থিতিতে মানিয়ে নেয়ার। তিনি বলেন, ‘এভাবে থাকা (সেলফ আইসোলেশন) আসলেই কঠিন। তবে আমরা যেহেতু পেশাদার ক্রিকেটার যত দ্রুত সম্ভব আমাদের এটার সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারলে আমাদের জন্যই ভালো। আর যেহেতু দল মানসিকভাবে আগেই প্রস্তুতি নিয়ে গিয়েছে, আমার মনে হয় কোয়ারেন্টিন শেষে অনুশীলন শুরু হলে এটা কাটিয়ে উঠবে। এর আগে যতবার আমরা নিউজিল্যান্ড সফর করেছি, আমার কাছে মনে হয় এর চাইতে এবার বেটার রেজাল্ট হবে। সত্যিকার অর্থে ব্যাটসম্যানদের জন্য নতুন বলটা একটু কঠিন হয়ে থাকে। নতুন বলটা সামলে নিতে পারলে পুরাতন বলে ব্যাটিং করা সহজ হয়ে যায়।’ ২০১৫, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পা রাখেন সোহান। নিজ শহর খুলনাতেই তার টি-টোয়েন্টি অভিষেক হয় জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। এরপর ২০১৬-২০১৭, ২৩ বছর বয়সেই নিউজিল্যান্ডের কন্ডিশনে খুব দ্রুতই বাকি ক্রিকেটের দুই ফরম্যাটে তার খেলার স্বপ্ন পূরণ হয়ে যায়। পরের বছরই নিজের তৃতীয় ও সবশেষ টেস্ট ম্যাচ খেলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে। দুই টেস্টের সিরিজে একটি ফিফটিও হাঁকান। কিন্তু কে জানতো পরের ৪ বছর জাতীয় দলে খেলাই হবে না! তার এভাবে জাতীয় দলে সুযোগ না পাওয়া সরাসরি বিসিবির নির্বাচন প্রক্রিয়াকে নিয়ে প্রশ্ন তৈরি করেই যাচ্ছে! যদিও সোহান এসব নিয়ে ভাবছেন না। খেলে যাচ্ছেন ঘরোয়া ক্রিকেটে। অপেক্ষায় আছেন, হয়তো সুযোগ আসবে। তিনি বলেন, ‘এর আগে জাতীয় দলে যখন খেলেছি তখন থেকে চেষ্টা করছি নিজের কিভাবে আরও উন্নতি করা যায়, পরিণত করা যায়। যদি সুযোগ আসে এই আশাতে যেখানেই খেলছি, চেষ্টা করছি নিজের সেরাটা দিয়ে। জাতীয় দলেও যদি সুযোগ আসে চেষ্টা করবো নিজের সেরাটা দিতে। আমার কাছে মনে হয় সবার সুযোগ এক রকম আসবে না। অনেক সময় আমি ভালো খেলেও দল থেকে বাদ পড়তে পারি টিম কম্বিনেশনের কারণে। এভাবেই মাথায় সেট করেছি। দলের জন্য যেটা ভালো হবে। অনেক সময়ই হয় কেউ ভালো খেলেও বাদ পড়ছে। এটা টিম কম্বিনেশনের কারণে হতে পারে।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *