নাহিদকে কারা কুপিয়েছে?

ঢাকা কলেজ ও নিউ মার্কেটের ব্যবসায়ীদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর এখনো পর্যন্ত সহিংসতাকারীদের আইনের আওতায় আনতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। হামলায় অংশ নেয়া দুই পক্ষেরই অনেকেই প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। অথচ হামলায় ও প্রকাশ্যে মারধরে অংশ নেয়া দুর্বৃত্তদের ছবি ও ভিডিও ফুটেজ সারা দেশে হয়েছে ভাইরাল। আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে তারা হামলায় অংশ নিয়েছে। বিশেষ করে কুরিয়ার সার্ভিসের কর্মী নাহিদকে কোপানোর ভিডিও সারা দেশে তোলপাড় সৃষ্টি করেছে। ওই হামলার ঘটনায় নিউমার্কেট থানা বিএনপির সাবেক সভাপতিকে গ্রেপ্তার এবং আরও ২৪ নেতাকর্মীকে ঢালাওভাবে আসামি করায় নানা প্রশ্ন ওঠে। অবশ্য পুলিশ জানিয়েছে, তারা হামলায় উস্কানি দিয়েছেন। ইন্ধন জুগিয়েছেন বলে আশপাশের সাক্ষ্য প্রমাণ তারা পেয়েছে।
এ কারণে বিএনপির নেতা মকবুলকে গ্রেপ্তার ও অন্যদের আসামি করা হয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, ওই ঘটনার শুরু কারা করেছে তাদের চিহ্নিত করা গেছে। যে ৬ জন নিউমার্কেটের দোকানের মধ্যে গেছেন তার মধ্যে ৫ জনই হচ্ছে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী। বাকি একজন বহিরাগত। ওই বহিরাগতেরও নাম পুলিশ জানতে পেরেছে। সোমবার রাতের বেলায় দুই পক্ষের মধ্যে একটি হট্টগোল হওয়ার পর পুলিশ ভেবেছিল যে, বিষয়টি রাতেই মিটমাট হয়ে যাবে। কিন্তু, সকালে আবার সহিংসতা শুরু হয় এবং তা চলে দিনভর। কারা সকালে আবার ঘটনার সূত্রপাত ঘটিয়েছে তাদেরও চিহ্নিত করতে পেরেছে পুলিশ। হামলার বিষয়টি চারদিকে ছড়িয়ে দেয়ার জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একাধিক পেজ খুলে প্রচারণা চালিয়েছে একটি গ্রুপ। সেই পেজগুলোকে চিহ্নিত করা গেছে।
ওই পেজের কারণে গুজবের ডালপালা বিস্তার লাভ করে। এছাড়াও আশপাশের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ, গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়া খবর ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার হওয়া ভিডিও ফুটেজ থেকে যারা প্রত্যক্ষ হামলায় অংশ নিয়েছে এমন প্রায় ৮০ জনকে চিহ্নিত করেছে পুলিশ। ওই ফুটেজগুলো গভীরভাবে চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে। স্থানীয় ব্যবসায়ী, প্রথাগত সোর্স ও সাধারণ ছাত্রদের কাছ থেকে হামলাকারীদের নাম ও ঠিকানা সংগ্রহ করছে পুলিশ। ওই হামলায় তৃতীয় কোনো পক্ষ সুবিধা নেয়ার জন্য অংশ নিয়েছে কী-না তাও খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
সোমবার রাত ১২টার দিকে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিউমার্কেটের ব্যবসায়ী ও কর্মচারীদের সংঘর্ষ হয়। প্রায় আড়াই ঘণ্টা চলে এ সংঘর্ষ। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। কিন্তু, পরদিন সকালে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন করতে গেলে ব্যবসায়ীরা হামলা চালায়। এরপর শুরু হয় দিনভর রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ।
সংঘর্ষে উভয়পক্ষের প্রায় ৫০ জন আহত হন। এ সংঘর্ষে ২ জন নিহত হয়েছেন। প্রায় ৭ জন সাংবাদিক উভয় পক্ষের হামলার শিকার হয়েছেন। জানা গেছে, সোমবার রাতে শুরু হওয়া পরদিন মঙ্গলবার দিনভর সংঘর্ষের ঘটনায় নিউমার্কেট থানায় মোট ৩টি মামলা হয়েছে। এরমধ্যে দুটি মামলার বাদী পুলিশ এবং অপর মামলার বাদী নিহত নাহিদের চাচা। ৩ মামলার মধ্যে ২টি মামলার তদন্তের ভার পেয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। দুইটি মামলার এজাহারে আসামিদের নাম উল্লেখ করা থাকলেও বাকি দুইটিতে আসামিদের নাম উল্লেখ নেই।
এ বিষয়ে পুলিশের নিউমার্কেট বিভাগের এসি শরীফ মোহাম্মদ ফারুকুজ্জামান গতকাল সন্ধ্যায় মানবজমিন জানান, ‘নিউমার্কেটের ঘটনায় একজনকে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। বাকিগুলোকে আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে।
মামলার তদন্তের সঙ্গে সম্পৃক্ত একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তার সূত্রে জানা গেছে, দুটি খাবারের দোকানের চেয়ার স্থাপনকে কেন্দ্র করে হট্টগোল হলেও উভয় পক্ষ একে অপরের প্রতি গুজব ছড়িয়ে মারামারিতে জড়িয়েছে। এতে দিনভর চলে সংঘর্ষ। মামলার পর ওই ঘটনার ৯০টি ভিডিও ফুটেজ ও স্কিন শর্ট সংগ্রহ করেছে ডিবি পুলিশ। ওই ফুটেজগুলোতে অনেকের চেহেরা স্পষ্ট দেখা গেছে। তাদের নাম ও পরিচয় জানতে পেরেছে মামলার তদন্তকারীরা। তাদের ধরতে অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ। তবে এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তারের তথ্য জানাতে পারেনি পুলিশ।
কুরিয়ার কর্মী নাহিদকে কোপানোর যে ভিডিও প্রকাশ হয়েছে তাতে হেলমেট পরা বেশ কয়েকজনকে হামলায় অংশ নিতে দেখা গেছে। তাদের কারও কারও চেহারাও স্পষ্ট দেখা গেছে। এছাড়া যারা নাহিদকে কুপিয়েছে তাদের ছবিও অনেকটা স্পষ্ট। কিন্তু এখন পর্যন্ত ওই হামলাকারী কাউকে আটক বা গ্রেপ্তার না করায় নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *