গত ঈদে আরটিভিতে প্রচার হয় বাংলা নাটকের জনপ্রিয় মুখ মেহজাবীন চৌধুরীর লেখা নাটক ‘আলো’। এটি নির্মাণ করেছেন মাহমুদুর রহমান হিমি। এতে মেহজাবীনের বিপরীতে অভিনয় করেন মনোজ প্রামাণিক। আর এই বিশেষ নাটকের জন্য বাংলাদেশ পুলিশ উইমেন নেটওয়ার্কের পক্ষ থেকে বিশেষ সম্মাননা পেলেন নাট্যকারের খাতায় নাম লেখানো অভিনেত্রী মেহজাবীন। কারণ নাটকটির গল্প পুলিশের একজন অনবদ্য নারী সদস্যকে ঘিরে। রচনার পাশাপাশি চরিত্রটিতে মেহজাবীন নিজেই অভিনয় করেছেন।
উচ্ছ্বসিত মেহজাবীন এ স্বীকৃতির খবর জানালেন ফেসবুকে। লিখেছেন, ‘যাদের জন্য আমরা কাজ করি, তাদের কাছ থেকে সমর্থন, উৎসাহ, ভালোবাসা পাওয়াটা আমাদের জন্য আশীর্বাদ। পুলিশ প্রসাশনে জড়িতদের, বিশেষ করে এ পেশায় নিয়োজিত নারীদের প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মান থেকে গত ঈদে প্রচারিত আলো নাটকটি লিখেছিলাম। তখনো ভাবিনি নাটকটি সাধারণ দর্শকদের ভালোবাসা অর্জনের পাশাপাশি যাদের জন্য লেখা, তাদের মনকেও এভাবে স্পর্শ করবে।
কৃতজ্ঞতা ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কাছে। আজ আপনারা যেভাবে আমাদের আলো নাটকটিকে সম্মান জানিয়ে পুরস্কৃত করলেন, আমরা অভিভূত।’
নাটক লেখা ও অভিনয়ের উদ্দেশ্য নিয়ে বলেন, ‘পুলিশ প্রশাসনে জড়িত, বিশেষ করে এ পেশায় নিয়োজিত নারীদের প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মান থেকে নাটকটি রচনা করি। তাছাড়া আমার ইচ্ছাও ছিল এমন একজন নারীর চরিত্রে অভিনয় করার।
সম্মাননা দেয়ার জন্য ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে কৃতজ্ঞতা জানান ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের প্রতি। লেখেন, ‘বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানাই মনিরুল ইসলাম স্যারকে (স্পেশাল ব্রাঞ্চ প্রধান) আমাদের এই ছোট্ট উদ্যোগকে এভাবে বড় করে দেখার জন্য। ধন্যবাদ আমেনা বেগম স্যারকে, আমাদের ডেকে নিয়ে এমন অনুপ্রেরণা প্রদানের জন্য।’
এছাড়া এ অভিনেত্রী ধন্যবাদ জানান বাংলাদেশ পুলিশ স্পেশাল ব্রাঞ্চ, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ, বাংলাদেশ পুলিশ উইমেন নেটওয়ার্কের সদস্যদের।
কয়েক বছরের মতো গত ঈদটাও দুর্দান্ত কেটেছে মেহজাবীনের। যতগুলো নাটকে অভিনয় করেছেন, তার প্রায় সবগুলোই প্রশংসা কুড়িয়েছে। ঈদের দ্বিতীয় দিন টিভিতে প্রচার হয় ভিকি জাহিদের রচনা ও পরিচালনায় একক নাটক ‘চিরকাল আজ’। আফরান নিশোর সঙ্গে অভিনয় করেন মেহজাবীন। দর্শক নাটকটির প্রশংসা তো করছেই, অনেক পরিচালক ও অভিনেতাও প্রশংসায় ভাসিয়েছেন এ নাটক ও মেহজাবীনকে। নাটকে মেহজাবীনকে দেখা গেছে এমনেশিয়া তথা স্মৃতিলোপ পাচ্ছে এমন এক রোগীর চরিত্রে। নাটকের পাণ্ডুলিপি নিয়ে মেহজাবীন গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, ‘আমার অভিনয় ক্যারিয়ারে এটাই প্রথম কোনো স্ক্রিপ্ট, যেটা আমি টানা দুই থেকে আড়াই দিন পড়েছি। স্ক্রিপ্টটা পড়তে গিয়ে আমি রীতিমতো অসুস্থ হয়ে পড়েছিলাম। এটা এতই ক্রিটিক্যাল যে আমার ব্রেইন সেটা হজম করতে পারছিল না। কোনো কাজ করার আগে আমি জীবনেও এত নার্ভাস, কনফিউজড, ব্ল্যাংক ফিল করিনি।’ নাটকটি দেখে আবেগতাড়িত হয়ে ফেসবুকে পোস্ট দিতে দেখা গেছে দর্শকদের। গল্প ও নির্মাণের পাশাপাশি নিশো-মেহজাবীনের অভিনয়ের প্রশংসা করছেন সবাই। নাট্যকার ইমরাউল রাফাত, দীপন, হাবিব শাকিলসহ অনেকেই ভূয়সী প্রশংসা করে পোস্ট দিয়েছেন ফেসবুকে।
ঈদে প্রশংসা পাওয়া আরেকটি নাটক নির্মাতা ভিকি জাহেদের ডার্ক থ্রিলার ঘরানার পুনর্জন্ম। এ নাটকের প্রধান চরিত্র ছিলেন মেহজাবীন। আফরান নিশোর সঙ্গে তাল মিলিয়ে অভিনয় করেছেন। ঈদের সেরা আলোচিত নাটকগুলোর মধ্যে প্রথম দিকে ছিল পুনর্জন্ম। এক ঘণ্টার নাটকটি থ্রিলার আর সাসপেন্সে ঠাসা। নাটকটি শেষ করার পর অনেকে স্তম্ভিত হয়ে পড়েছেন। এমন অপ্রত্যাশিত এন্ডিং দর্শককে গোলকধাঁধায় ফেলে দেয়। তবে ডার্ক থ্রিলার হওয়ায় অনেকে স্বাভাবিকভাবে নিতেও পারেনি টুইস্টটা। যাই হোক, আফরান নিশোকে যোগ্য সঙ্গ দিয়ে এ নাটকও টেনে নিয়েছিলেন মেহজাবীন। তাকে ঘিরেই তৈরি হয়েছে একের পর এক রহস্য। নাটকটি প্রচারের পর থেকেই আলোচনার কেন্দ্রে উঠে এসেছিল।
একই পরিচালকের ‘দ্বিতীয় সূচনা’ নাটকও বেশ আলোচনায় ছিল। এ নাটকেও মেহজাবীনের সহশিল্পী আফরান নিশো। ব্যক্তিগত সম্পর্ক ও সম্পর্ক পরিবর্তনের আশঙ্কা নিয়ে নির্মিত নাটক দ্বিতীয় সূচনা পছন্দ করেছেন দর্শকরা। তবে সবকিছু ছাপিয়ে মেহজাবীনের লেখা আলো নাটকটাই বড় সম্মান বয়ে আনল। আর তাই এ প্রাপ্তি ঘিরে মেহজাবীনের উচ্ছ্বাসও চোখে পড়ার মতো।