নাগোর্নো-কারাবাখে তীব্র সংঘর্ষে লিপ্ত আর্মেনিয়া-আজারবাইজান

সমঝোতার মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই অস্ত্রবিরতি লঙ্ঘন করে নাগোর্নোা-কারাবাখ অঞ্চলে আবারো সংঘর্ষে জড়িয়েছে আর্মেনিয়া ও আজারবাইজান। দুই পক্ষই একে অন্যের প্রতি সমঝোতার শর্ত লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলেছে। ফলে দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে সত্যিকারে অস্ত্রবিরতি কার্যকর হওয়া নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। খবর এএফপি।

সংঘাত বন্ধে জাতিসংঘসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ অনুরোধ জানালেও তাতে রাজি হচ্ছিল না আর্মেনিয়া-আজারবাইজান কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যেই গত বৃহস্পতিবার দুই দেশের নেতাদের কাছে ফোন করেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এ সময় তিনি আর্মেনিয়া ও আজারবাইজানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের মস্কোয় গিয়ে শান্তি আলোচনায় অংশ নেয়ার আমন্ত্রণ জানান। তার এ আহ্বানে সাড়া দিয়েই শনিবার আলোচনায় বসেছিলেন দুই দেশের মন্ত্রীরা। স্থানীয় সময় শনিবার সকাল থেকে মস্কোয় টানা ১০ ঘণ্টার আলোচনা শেষে অস্ত্রবিরতির সিদ্ধান্তে পৌঁছায় আর্মেনিয়া ও আজারবাইজান কর্তৃপক্ষ।

বৈঠক শেষে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সার্গেই ল্যাভরভ জানান, ১০ অক্টোবর মধ্যরাত থেকেই এ অস্ত্রবিরতি কার্যকর হচ্ছে। এ সুযোগে আর্মেনিয়া ও আজারবাইজান সংঘর্ষে নিহতদের মরদেহ এবং বন্দিদের বিনিময় করবে। কিন্তু অস্ত্রবিরতি কার্যকর হওয়ার কয়েক মিনিটের মধ্যেই দুই পক্ষ শর্ত লঙ্ঘনের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ তুলেছে।

রোববার আর্মেনিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, আর্মেনিয়ার একটি স্থাপনায় বোমা হামলা করেছে আজারবাইজান। তাদের দাবি, অস্ত্রবিরতি কার্যকর হওয়ার ৫ মিনিটের মাথায় আজারি বাহিনী আবারো সহিংস পদক্ষেপ শুরু করেছিল। বিপরীতে আজারবাইজান দাবি করেছে, শত্রুপক্ষই শর্ত ভেঙে তাদের এলাকায় হামলা চালিয়েছে। তবে আর্মেনিয়া-আজারবাইজান উভয়ই প্রতিপক্ষের এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

বিতর্কিত নাগোর্নো-কারাবাখ অঞ্চলের নেতা আরাইক হারুতইউনিয়ান রোববার দাবি করেন, পরিস্থিতি তুলনামূলক ‘শান্ত’ রয়েছে, তবে অস্ত্রবিরতি নাজুক অবস্থায় রয়েছে বলে সতর্ক করেন। অঞ্চলটির প্রশাসনিক রাজধানী স্টেপানাকার্ট থেকে বার্তা সংস্থা এএফপির এক সাংবাদিক জানান, ওই এলাকায় ভারী গোলাবর্ষণ হয়েছে এবং সারারাত ধরেই ভারী বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে।

নাগোর্নো-কারাবাখ নেতার মুখপাত্র ভাহরাম পগহোসিয়ান বলেন, স্টেপানাকার্ট এলাকায় রাতব্যাপী হামলা মস্কোতে আসা সমঝোতা ও অস্ত্রবিরতি উদ্যোগের প্রতি অসম্মান। এছাড়া সংঘাত নিরসনে অঞ্চলটির স্বাধীনতাকে স্বীকৃতি দিতে আঞ্চলিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান রাখেন তিনি।

গত ২৭ সেপ্টেম্বর বিবাদপূর্ণ নাগোর্নো-কারাবাখের মালিকানা ঘিরে প্রতিবেশী দুই দেশ আজারবাইজান ও আর্মেনিয়ার সামরিক বাহিনীর মধ্যে সংঘাত শুরু হয়। ৯০-এর দশকের পর এ অঞ্চলে এত বড় সংঘাত আর দেখা যায়নি। গত দুই সপ্তাহে এ সংঘর্ষে প্রাণ হারিয়েছেন প্রায় ৩০০ জন। উভয়পক্ষের গোলা, রকেট ও ড্রোন হামলায় নিখোঁজ রয়েছেন আরো অনেকে। এ সহিংসতার জন্য উভয় পক্ষই একে অন্যকে দায়ী করেছে।

আজারবাইজানের অভ্যন্তরে দেড় লাখ মানুষ অধ্যুষিত বিরোধপূর্ণ অঞ্চলটিকে জাতিগত আর্মেনীয়রা নিয়ন্ত্রণ করে আসছিল। ৯০-এর দশকে সর্বশেষ সংঘাতে ৩০ হাজারেরও বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছিল। নাগোর্নো-কারাবাখের বিচ্ছিন্নতাবাদী সরকারকে মদদ দিয়ে আসছে আর্মেনিয়া। ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পর একই সঙ্গে স্বাধীনতা পেয়েছিল আর্মেনিয়া ও আজারবাইজান।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *