নতুন বছরে তৃণমূল শক্তিশালী করার মিশন আওয়ামী লীগের

গেল করোনার বছর মাঠের সাংগঠনিক কাজে বেশি মনোযোগ দিতে না পারলেও নতুন বছরে স্থানীয় নির্বাচন ও তৃণমূলের কমিটি গঠনসহ মাঠপর্যায়ে সংগঠনকে শক্তিশালী করতে কাজ করবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দেশের বেশিরভাগ পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এ বছর। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনসহ আরও বেশ কিছু স্থানীয় নির্বাচন এ বছরের মধ্যে করার পরিকল্পনা রয়েছে নির্বাচন কমিশনের। এসব নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দলীয় শৃঙ্খলা যাতে নষ্ট না হয়, সে ব্যাপারে সতর্ক থাকবে ক্ষমতাসীন দল। স্থানীয় পর্যায়ের ভোটের লড়াইয়ে আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি থাকায় ক্ষমতাসীন পক্ষ গভীর দৃষ্টি রেখেছে এ নির্বাচনের দিকে। পাশাপাশি সরকারের উন্নয়ন দেশব্যাপী ছড়িয়ে দিতে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীকে বিজয়ী করতে বিশেষ পরিকল্পনাও নিয়েছে দলটি। এর অংশ হিসেবে যোগ্য, ত্যাগী ও জনপ্রিয় নেতাদের মনোনয়ন দেওয়ার লক্ষ্যে যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। যাতে মানুষের আস্থা অর্জন করে স্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে দলীয় প্রার্থী জয়লাভ করতে পারে। আওয়ামী লীগের বেশিরভাগ সহযোগী সংগঠনে নতুন নেতৃত্ব থাকলেও বছরের পর বছর মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি দিয়ে চলছে তৃণমূলের কার্যক্রম। কোথাও কোথাও দীর্ঘদিনের পুরানো নেতৃত্ব শক্তিশালী সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছে। এসব সিন্ডিকেট ভেঙে আগামী সংসদ নির্বাচনের জন্য মাঠ তৈরি ও গণমুখী নেতৃত্ব তৈরি করতে চায় আওয়ামী লীগ। এই লক্ষ্যে গত বছরই আটটি বিভাগে আটটি সাংগঠনিক টিম করা হয়েছে। তাছাড়া স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালনে নানা কর্মসূচি পালন করার পরিকল্পনা রয়েছে। দলের শীর্ষ নেতারা বলছেন, করোনা মহামারির মধ্যে ভিন্ন এক পরিস্থিতি অতিক্রম করছে দেশ।

সব সেক্টরের পাশাপাশি রাজনৈতিক অঙ্গনেও করোনার প্রভাব অনেক বেশি। মানুষ নিয়েই রাজনীতি। জনসমাগম ছাড়া এক সময় রাজনৈতিক কর্মকান্ড চিন্তাও করা যেত না। কিন্তু করোনার এই সময়ে জনসমাগম না করে কিভাবে রাজনৈতিক কর্মকান্ড পরিচালনা করা যায়, সেটা দেখিয়ে দিয়েছে শেখ হাসিনার নেতৃত্ব। তারা আরও বলছেন, করোনার এই সময়ে ডিজিটাল বাংলাদেশের সুফল উপভোগ করেছে মানুষ। এমন কি যারা সমালোচনা করেছিল, তারও এর বাইরে নয়। নতুন বছরে তৃণমূলে দল গোছানো ছাড়াও প্রধানমন্ত্রীর উন্নয়নের সুফল সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় নিয়ে যেতে কাজ করবেন দলের নেতাকর্মীরা। তাছাড়া আওয়ামী লীগকে গণমানুষের দল হিসেবে জনপ্রিয় করে তুলতে ইতিবাচক কর্মকান্ড পরিচালনা করার চিন্তাও করা হচ্ছে। তবে অনেকে বলছেন, বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রা বাধাগ্রস্ত করতে একটি মহল সব সময়ই অপতৎপরতা চালিয়ে আসছে। তারা নতুন বছরেও নতুনভাবে ষড়যন্ত্র করতে পারে।

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা বলছেন, নতুন বছরেও করোনা পরিস্থিতি সামলিয়ে যেকোনো ষড়যন্ত্র ও প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবিলায় তারা সতর্ক থাকবেন। জানা গেছে, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের ব্যাপক পরিকল্পনা নিয়ে শুরু হয়েছিল আওয়ামী লীগের ২০২০ সাল। সরকারের পাশাপাশি দল হিসেবে আওয়ামী লীগেরও বছরজুড়ে ছিল নানা পরিকল্পনা ও কর্মসূচি। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে জন্মশতবার্ষিকীর কর্মসূচি স্থগিত ও সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে। সেই করোনাভাইরাস সংকট নিয়েই শুরু হয়েছে নতুন বছর ২০২১। এ বছর স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করবে বাংলাদেশ। মহান মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেওয়া দল আওয়ামী লীগ এই বছর নানা কর্মসূচি পালন করবে। এছাড়া স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর এই বছরে যেকোনো ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় সতর্ক থেকে রাজপথ নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখবে দলটি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০২০ সালের শেষ দিকে শুরু হয়েছে পৌরসভা নির্বাচন। আওয়ামী লীগের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপি এই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। ইতোমধ্যে ২৮ ডিসেম্বর প্রথম ধাপের ২৪ পৌরসভার ভোট অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে তিনটি পৌরসভা বাদে সব জায়গায় আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছেন। ১৬ জানুয়ারি দ্বিতীয় এবং ৩০ জানুয়ারি তৃতীয় ধাপের ৬১ ও ৬৪ পৌরসভায় ভোট অনুষ্ঠিত হবে। আওয়ামী লীগ ইতোমধ্যে এই দুই ধাপে পৌর নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে। এরপর ধাপে ধাপে তফসিল ঘোষণার পরে বাকি পৌরসভা নির্বাচনি মাঠেও ব্যস্ত থাকতে হবে দলটিকে।
[১] ম্যারাডোনা ভক্তদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ ≣ [১]বিল গেটস ফের ড. সমীর কুমার সাহা ও তার মেয়ে ড. সেজুঁতি সাহার প্রশংসা করলেন ≣ [১] পতনে চার হাজার পয়েন্টের নিচে নামল ডিএসইর সূচক

এদিকে, ২০২১ সালের প্রথম মাসের শেষে দিকে (২৭ জানুয়ারি) দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী খ্যাত চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া এপ্রিল থেকে শুরু হতে পারে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন। ধাপে ধাপে সারাদেশের প্রায় সাড়ে তিন হাজার ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এই নির্বাচনের বিএনপি অংশগ্রহণ করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান যায়যায়দিনকে বলেন, দলীয় কর্মকান্ড ও নির্বাচনের অংশগ্রহণ চলমান কাজ। নতুন বছরে করোনা মোকাবিলা করে দেশের পদ্মা সেতু-মেট্রোরেল এবং মেগা প্রকল্প উন্নয়ন কর্মকান্ডগুলো সামনে এগিয়ে নিতে হবে। শিশুদের লেখাপড়ায় যে প্রভাব পড়েছে, সেটা পোষানোর বিষয়টাও গুরুত্বের সঙ্গে দেখতে হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রতিটি বছরই আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জের। বিশেষ করে সব বছরই কোনো না কোনো প্রকৃতিক দুর্যোগ আমাদের ক্ষতিগ্রস্ত করে। পাশাপাশি ষড়যন্ত্রকারী মহল আছে, যারা দেশকে ধ্বংস করতে চায় এর সঙ্গে করোনাভাইরাস তো রয়েছেই।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *