নতুন বছরে কয়লা উত্তোলনে বড় প্রবৃদ্ধির প্রত্যাশা ইন্দোনেশিয়ার

বিদায়ী বছরের মাঝামাঝি কয়লা উত্তোলন লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ার পূর্বাভাস দিয়েছিলেন ইন্দোনেশিয়ার নীতিনির্ধারকরা। ওই বছরের শুরুতে অতিবৃষ্টির কারণে দেশটির খনিগুলোয় জ্বালানি পণ্যটির উত্তোলন ব্যাহত হয়। তবে কয়লা উত্তোলন কোম্পানিগুলো চলতি বছর বৈশ্বিক ও স্থানীয় বাজারে পণ্যটির চাহিদা বাড়বে বলে আশাবাদী। কারণ মহামারীর প্রভাব কাটিয়ে অর্থনৈতিক অবকাঠামোয় পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া অব্যাহত আছে। এর মানে হলো চলতি বছর ইন্দোনেশিয়ায় কয়লা উত্তোলনও লক্ষণীয় মাত্রায় বাড়বে।

ইন্দোনেশিয়া কয়লা উত্তোলন ও রফতানিতে বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ স্থান দখল করে আছে। জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, ২০২১ সালে ৬২ কোটি ৫০ লাখ টন কয়লা উত্তোলন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল ইন্দোনেশিয়া। কিন্তু ২১ ডিসেম্বর পর্যন্ত উত্তোলনের পরিমাণ দাঁড়ায় ৫৮ কোটি ৮৫ লাখ ৪০ হাজার টনে। সে হিসাবে লক্ষ্যমাত্রার ৯৪ দশমিক ১৭ শতাংশ কয়লা উত্তোলন করতে সক্ষম হয়েছে দেশটি।

মন্ত্রণালয়টি জানায়, উত্তোলনসংক্রান্ত বিষয় নিয়ে কয়লা উত্তোলন কোম্পানিগুলোর সঙ্গে প্রাথমিক পর্যায়ে আলোচনা হয়েছে। এর ওপর ভিত্তি করে চলতি বছর ৬৩ কোটি ৭০ লাখ থেকে ৬৬ কোটি ৪০ লাখ টন কয়লা উত্তোলন করা হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। জ্বালানি মন্ত্রণালয় মনে করছে, চলতি বছরও তুলনামূলকভাবে ঊর্ধ্বমুখী থাকবে কয়লার দাম। ফলে অতিরিক্ত মুনাফা লাভের প্রত্যাশায় কোম্পানিগুলো উত্তোলন বাড়াবে। তবে এ প্রক্ষেপণ শুধু আলোচনার ভিত্তিতেই করা হয়েছে। এখনো চূড়ান্তভাবে উত্তোলন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়নি। কয়লা উত্তোলকরা অনুমোদনের জন্য তাদের বার্ষিক কর্মপরিকল্পনা জমা দেয়ার পরই জ্বালানি মন্ত্রণালয় তা পর্যালোচনা করে লক্ষ্যমাত্রা চূড়ান্ত করবে।

ইন্দোনেশিয়ান কোল মাইনিং অ্যাসোসিয়েশন জানায়, ২০২২ সালেও কয়লার বাজারে ঊর্ধ্বমুখিতা অব্যাহত থাকবে। উত্তোলকরা অবশ্যই এর সুবিধা নেয়ার চেষ্টা করবেন। ফলে নিশ্চিতভাবেই বলা যায়, জ্বালানি পণ্যটির উত্তোলন বাড়বে।

এদিকে চলতি মাসে কয়লা রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে ইন্দোনেশিয়া। মূলত অভ্যন্তরীণ বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলোয় জ্বালানি পণ্যটির সরবরাহ কমে যাওয়ার আশঙ্কায় এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটির সরকার। জ্বালানি মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক চিঠির বরাত দিয়ে স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো এ তথ্য জানিয়েছে।

দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দেশটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় তাপীয় কয়লা রফতানিকারক। ২০২০ সালে প্রায় ৪০ কোটি টন কয়লা রফতানি করেছে ইন্দোনেশিয়া। দেশটির কয়লার সবচেয়ে বড় ক্রেতা চীন, ভারত, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া।

ইন্দোনেশিয়ায় ডমেস্টিক মার্কেট অবলিগেশন (ডিএমও) নীতিমালা রয়েছে। এ নীতিমালার অধীনে দেশটির কয়লা উত্তোলকদের বার্ষিক উত্তোলনের ২৫ শতাংশ কয়লাই রাষ্ট্রায়ত্ত ইউটিলিটি কোম্পানির কাছে সরবরাহ করতে হয়। সরকার এসব কয়লা টনপ্রতি ৭০ ডলারে ক্রয় করে, যা স্থানীয় বাজারদরের তুলনায় অনেক কম। ওই চিঠিতে জ্বালানি মন্ত্রণালয় সব উত্তোলন প্রতিষ্ঠানকে কয়লা মজুদ করার নির্দেশনা দিয়েছে। দেশটির পোতাশ্রয়গুলোয় এসব কয়লা মজুদ করতে হবে। সেখান থেকে জ্বালানি পণ্যটি সরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র এবং বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদকদের কাছে সরবরাহ করতে হবে।

চিঠিতে বলা হয়, রাষ্ট্রায়ত্ত ও বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলোয় কয়লার মজুদ লক্ষ্যমাত্রা কতটুকু অর্জিত হয়, তার ওপরই নির্ভর করছে রফতানি নিষেধাজ্ঞা। মজুদ পরিস্থিতির ওপর ভিত্তি করেই এ সিদ্ধান্ত পুনর্মূল্যায়ন ও পরীক্ষণ করা হবে।

বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ বিষয়ে জানতে চাইলে তাত্ক্ষণিক কোনো মন্তব্য করেনি জ্বালানি মন্ত্রণালয় ও রাষ্ট্রায়ত্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন কোম্পানি। তবে ইন্দোনেশিয়ান কোল মাইনিং অ্যাসোসিয়েশন জানায়, রফতানি নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে একটি বিবৃতি দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

এর আগে সদ্যবিদায়ী বছরের আগস্টে ৩৪টি উত্তোলন কোম্পানির কয়লা রফতানি স্থগিত করা হয়। কারণ ওই বছরের জানুয়ারি-জুলাই পর্যন্ত মার্কেট অবলিগেশন নীতিমালার অধীনে কয়লা সরবরাহ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হয় দেশটির সরকার।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *