দেশে দেশে ঋণের পরিমাণ বাড়ছে

নভেল করোনাভাইরাস মহামারীর ফলে বৈশ্বিক অর্থনীতির ওপর দিয়ে যে সুনামি বয়ে গেছে, তার দখল সামলাতে হচ্ছে দেশগুলোকে। মহামারীর ক্ষত থেকে দেশের মানুষ ও অর্থনীতিকে টেনে তুলতে লাগামহীনভাবে ঋণের দিকে ঝুঁকেছে সরকার। একই সঙ্গে ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানগুলোকেও ধার-দেনার পরিমাণ বাড়াতে হয়েছে। এর ফলে গত বছর বিশ্বব্যাপী সরকার, ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান মিলে ২৪ ট্রিলিয়ন ডলারের মতো ঋণ নিয়েছে। বৈশ্বিক জিডিপির বিবেচনায় যার প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩৫৫ শতাংশেরও বেশি। এর মধ্য দিয়ে বৈশ্বিক ঋণের পরিমাণ রেকর্ড ২৮১ ট্রিলিয়ন ডলারে এসে দাঁড়িয়েছে। ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্সের (আইআইএফ) সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে এ তথ্য দেয়া হয়েছে। আর ঋণ নেয়ার এ প্রবণতা চলতি বছরও অব্যাহত থাকবে বলে মনে করছেন খাতসংশ্লিষ্টরা। খবর ব্লুমবার্গ ও দ্য নেশন।

অর্থনৈতিক সংকটে থাকা দেশগুলোর জন্য গত বছরটা ছিল অভিশাপের মতো। তবে কেবল সংকটাপূর্ণ দেশই নয়, অর্থনৈতিক ঝক্কি সামলাতে হয়েছে অনেক উন্নত দেশকেও। অর্থনীতিকে টেনে তুলতে তাই ঋণের দ্বারস্থ হতে হয়েছে এসব দেশকে। আর কভিড-১৯-এর নেতিবাচক প্রভাবে চলতি অর্থবছরের বাজেট ঘাটতি থাকার কারণেও সরকারগুলো আরো বেশি পরিমাণ ঋণ নেবে বলে মনে করা হচ্ছে। যদিও ভ্যাকসিনেশন কার্যক্রম শুরুসহ অন্যান্য কারণে অনেক দেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। ফলে চলতি বছর ঋণ নেয়ার ক্ষেত্রে খুব একটা আগ্রাসী মনোভাব না-ও দেখা যেতে পারে।

আইআইএফের গ্লোবাল ডেবট মনিটরের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২০ সালে বিশ্বব্যাপী ঋণের অর্ধেকেরও বেশি নিয়েছে সরকারগুলো। এ সময় সরকারগুলোর ঋণের পরিমাণ ১২ ট্রিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। যেখানে তার আগের বছরে ঋণের পরিমাণ ছিল ৪ দশমিক ৩ ট্রিলিয়ন ডলারের মতো। আর জিডিপির বিপরীতে সরকারের ঋণের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১০৫ শতাংশের মতো। যেখানে এর আগের বছর প্রবৃদ্ধি ছিল ৮৮ শতাংশ।

অন্যদিকে ঋণের মধ্যে বৈশ্বিক ফার্মগুলো ৫ দশমিক ৪ ট্রিলিয়ন ডলার, ব্যাংক ৩ দশমিক ৯ ট্রিলিয়ন ও ব্যক্তি বা পরিবার পর্যায়ে ঋণ নিয়েছে ২ দশমিক ৬ ট্রিলিয়ন। আর জিডিপির পয়েন্টের হিসাবে ঋণের ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩৫ শতাংশের মতো। এর আগে ২০০৮ ও ২০০৯ সালে বৈশ্বিক আর্থিক মন্দার সময়ে ঋণের ক্ষেত্রে এমন প্রবৃদ্ধি দেখা গিয়েছিল। সে সময় ওই দুই বছরে ঋণের ক্ষেত্রে জিডিপির হিসাবে যথাক্রমে ১০ শতাংশ ও ১৫ শতাংশ পয়েন্ট প্রবৃদ্ধি হয়েছিল।

আইআইএফের প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, মহামারীজনিত কারণে সরকারগুলোর পক্ষ থেকে দেয়া প্রণোদনা প্যাকেজের বেশকিছুর মেয়াদ চলতি বছরই শেষ হয়ে যাবে। তবে এর বিপরীতে মহামারী পূববর্তী সময়ের তুলনায় বাজেট ঘাটতির পরিমাণও বাড়বে। ফলে চলতি বছর সরকারগুলোকে আরো ১০ ট্রিলিয়ন ডলার ঋণ নেয়ার প্রয়োজন হতে পারে। আর সেটি হলে বছর শেষে বিশ্বব্যাপী সরকারগুলোর ঋণের পরিমাণ ৯২ ট্রিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে।

বৈশ্বিক ঋণ পরিস্থিতি নিয়ে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সুরে কথা বলছে আইআইএফও। তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাসের লাগাম টেনে ধরতে অনেক দেশই এখনো ভ্যাকসিন হাতে পায়নি। ফলে এসব দেশে ভ্যাকসিনেশন কার্যক্রম শুরু হতেও বেশ দেরি হবে। ফলে এসব দেশের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে যেমন গতি আসতে দেরি হবে, তেমনি ভ্যাকসিনের প্রাপ্তি নিশ্চিত করতেও ঢালতে হবে অর্থ। এসব কারণেই ঋণগ্রস্ত দেশগুলো আরো বেশি ঋণের জালে আটকা পড়বে।

আর্থিক খাত-বহির্ভূত প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে জিডিপির বিপরীতে ঋণের অনুপাতের দিক থেকে শীর্ষ অর্থনীতির দেশগুলোর মধ্যে ফ্রান্স, স্পেন ও গ্রিসের মতো দেশ রয়েছে। জিডিপির অনুপাতে এসব দেশে ঋণের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৫০ শতাংশ পয়েন্টের মতো। কারণ সরকারগুলো এ খাত থেকে ব্যাপকহারে ঋণ নিয়েছে। অন্যদিকে উদীয়মান দেশগুলোর মধ্যে চীন এ খাতের মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি ঋণ নিয়েছে। এর পরই রয়েছে তুরস্ক, দক্ষিণ কোরিয়া ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো দেশগুলো।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *