দীর্ঘতম বিরতির পর ডানা মেলার অপেক্ষায় ৭৩৭ ম্যাক্স

৭৩৭ ম্যাক্স জেট বিমান নিয়ে গত দুই বছর কম ভোগান্তি পোহাতে হয়নি মার্কিন উড়োজাহাজ নির্মাতা বোয়িংকে। ভয়াবহ দুটি দুর্ঘটনার তদন্ত, আকাশসেবা সংস্থাগুলোর আস্থা হারানো ও বৈশ্বিক নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হওয়ায় জেটগুলো শেষ পর্যন্ত গ্রাউন্ডেড রাখতে বাধ্য হয় তারা। তবে দীর্ঘ অচলাবস্থার পর অবশেষে কিছুটা স্বস্তির বাতাস পেতে শুরু করেছে বোয়িং। যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফএএ) বোয়িংয়ের ৭৩৭ ম্যাক্স উড়োজাহাজগুলোকে ফের উড্ডয়নের অনুমতি দিয়েছে। খবর রয়টার্স।

২০১৮ সালে মাত্র পাঁচ মাসের মধ্যে ইন্দোনেশিয়া ও ইথিওপিয়ায় দুটি ৭৩৭ ম্যাক্স বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনা ঘটে, যাতে ৩৪৬ জনের প্রাণহানি ঘটে। এর জেরে পরের বছর বেশ কয়েক দফা তদন্তের মধ্য দিয়ে যেতে হয় বোয়িংকে। এমনকি ওই দুটি দুর্ঘটনার কারণে বৈশ্বিক এভিয়েশন খাতে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বস্থানীয় ভূমিকাই হুমকির মুখে পড়ে যায়। বোয়িংকেও প্রায় ২ হাজার কোটি ডলারের লোকসান গুনতে হয়।

বছর দুয়েক আগের ওই ঘটনার পর ৭৩৭ ম্যাক্স জেটগুলোকে প্রায় ২০ মাস বসিয়ে রাখতে বাধ্য হয় বোয়িং। বাণিজ্যিক আকাশসেবা খাতের ইতিহাসে আর কোনো মডেলের উড়োজাহাজকে এত দীর্ঘ সময় গ্রাউন্ডেড রাখা হয়নি।

এই দীর্ঘ বিরতির পর আবার আকাশে ডানা মেলতে চলেছে ৭৩৭ ম্যাক্স। তবে বোয়িংয়ের সবচেয়ে বেশি বিক্রীত জেটগুলোকে বাণিজ্যিক সেবায় ফিরতে গিয়ে বেশকিছু চ্যালেঞ্জের মোকাবেলা করতে হবে। সবার আগে সফটওয়্যার হালনাগাদ ও প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ প্রদান নিশ্চিত করতে হবে বোয়িংকে। এ বিষয়ে এফএএকে বিস্তারিত প্রতিবেদনও দিতে হবে তাদের। এর সঙ্গে নভেল করোনাভাইরাসের প্রকোপ বেড়ে যাওয়া, ইউরোপের নতুন শুল্ক ও হারানো আস্থা পুনরুদ্ধারের চ্যালেঞ্জ তো রয়েছেই।

বোয়িংয়ের ৭৩৭ ম্যাক্স হলো ১৯৬০-এর দশকে তাদের আনা প্রথম জেটগুলোর হালনাগাদ মডেল। এভিয়েশন খাতে ম্যাক্স ও এয়ারবাসের এ৩২০-এর মতো সিঙ্গেল আইল জেটগুলোর ভূমিকা অনেক। স্বল্পপাল্লার বাণিজ্যিক ফ্লাইটে এগুলোর সঙ্গে পাল্লা দেয়ার সক্ষমতা আর কারো নেই। এভিয়েশন কোম্পানিগুলোর আয়ের বড় একটি উৎসও এ জেটগুলো।

এফএএর অনুমোদনের পরিপ্রেক্ষিতে আগামী ২৯ ডিসেম্বর ৭৩৭ ম্যাক্স দিয়ে বাণিজ্যিক ফ্লাইট পরিচালনা পুনরায় শুরু করতে যাচ্ছে আমেরিকান এয়ারলাইনস। আর বিশ্বে ম্যাক্সের সবচেয়ে বড় অপারেটর সাউথওয়েস্ট এয়ারলাইনস জানিয়েছে, আগামী বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকের আগে এগুলো আকাশে ওড়ানোর কোনো পরিকল্পনা তাদের নেই।

ওয়াকিবহাল তিনজন ব্যক্তি জানিয়েছেন, ম্যাক্সগুলো যখনই বাণিজ্যিক ফ্লাইটে ফিরবে, সেগুলোর সুরক্ষাসংক্রান্ত বিষয়গুলো নিশ্চিত করতে তখন থেকেই ২৪ ঘণ্টার মনিটরিং কার্যক্রম শুরু করবে বোয়িং। আসলে কোম্পানিটি চায় না, কোনো ত্রুটির কারণে নতুন করে ৭৩৭ ম্যাক্সকে ঘিরে সংকট তৈরি হোক।

অবশ্য এফএএ অনুমোদন দেয়ার অর্থ এই নয় যে বিশ্বের সব জায়গায় ৭৩৭ ম্যাক্স দিয়ে বাণিজ্যিক ফ্লাইট পরিচালনা করা যাবে। ইউরোপ, ব্রাজিল ও চীনের নিজস্ব নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষগুলোও আলাদাভাবে তদন্ত চালাচ্ছে। এই তদন্ত শেষে তারা অনুমোদন দিলেই কেবল যুক্তরাষ্ট্রের বাইরেও আকাশে ডানা মেলার সুযোগ পাবে ম্যাক্স।

একটা সময় ছিল, যখন এভিয়েশন খাতে সুরক্ষা ব্যবস্থা বলতেই যুক্তরাষ্ট্রের একচ্ছত্র আধিপত্য ছিল। দশকের পর দশক ছোট-বড় নির্বিশেষে সব দেশের নিয়ন্ত্রক সংস্থাই এফএএর স্ট্যান্ডার্ড অনুসরণ করত। কিন্তু ইন্দোনেশিয়া ও ইথিওপিয়ায় প্রাণঘাতী দুটি দুর্ঘটনা যুক্তরাষ্ট্রের এই নেতৃত্বস্থানীয় অবস্থান নড়বড়ে করে দিয়েছে।

মঙ্গলবার মার্কিন কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদে সর্বসম্মতিক্রমে একটি বিল পাস হয়েছে, যেখানে এফএএর এয়ারপ্লেন সার্টিফিকেশন কাঠামো ঢেলে সাজানোর কথা বলা হয়েছে।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *