দিনে গড় পরীক্ষা পাঁচটিরও কম

দেশের দক্ষিণাঞ্চলের জেলা পিরোজপুরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্তে দ্বিতীয় দফায় গত ১৭ ডিসেম্বর থেকে অ্যান্টিজেন টেস্ট শুরু হয়। ২৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত নয় দিনে জেলা সদর হাসপাতালে বসানো অ্যান্টিজেন পরীক্ষাগারটিতে কোনো নমুনা পরীক্ষা হয়নি। অন্যান্য জেলায় বসানো অ্যান্টিজেন পরীক্ষাগারে নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা খুবই কম। গত ২৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিদ্যমান ২৯টি অ্যান্টিজেন পরীক্ষাগারে নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা দিনে পাঁচটিরও কম।

২০ মিনিট থেকে আধা ঘণ্টার মধ্যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্তে শুরু থেকে অ্যান্টিজেন টেস্টের কথা বলে আসছিলেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। এর জন্য সুনির্দিষ্ট নীতিমালা তৈরি করে বিনা মূল্যে গত ৫ ডিসেম্বর থেকে দেশে অ্যান্টিজেন পরীক্ষা শুরু হয়। মূলত নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা বাড়ানোর জন্যই অ্যান্টিজেন টেস্ট চালু করা হয়। তবে প্রচার, প্রচারণার অভাব এবং মানুষের আস্থার সংকটের কারণে এসব পরীক্ষাগার সুফল বয়ে আনছে না বলে মনে করছেন ভাইরাস বিশেষজ্ঞরা।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, গত ৫ ডিসেম্বর গাইবান্ধা, পঞ্চগড়, জয়পুরহাট, যশোর, মেহেরপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, পটুয়াখালী, মুন্সীগঞ্জ, মাদারীপুর ও সিলেটের জেলা হাসপাতালে অ্যান্টিজেন পরীক্ষাগার চালু করা হয়। এরপর দ্বিতীয় দফায় ১৭ ডিসেম্বর শরীয়তপুর, রাজবাড়ী, ঢাকা (সাভার ও কেরানীগঞ্জ), বান্দরবান, নেত্রকোনা, পাবনা, নাটোর, নওগাঁ, কুড়িগ্রাম, ঠাকুরগাঁও, লালমনিরহাট, নীলফামারী, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, মাগুরা, পিরোজপুর ও ঝালকাঠিতে এবং সর্বশেষ ২৯ ডিসেম্বর ফেনী, লক্ষ্মীপুর, খাগড়াছড়ি, শেরপুর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, সাতক্ষীরা, নড়াইল, চুয়াডাঙ্গা, বাগেরহাট, ঝিনাইদহ ও বরগুনায় অ্যান্টিজেন পরীক্ষাগার চালু করা হয়েছে।

শুরু থেকে ২৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রথম ও দ্বিতীয় দফায় চালু করা ২৯টি অ্যান্টিজেন পরীক্ষাগারের তথ্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে সংগ্রহ করেছে বণিক বার্তা। এতে দেখা যায়, ৫-১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত ১০ জেলার ১০টি অ্যান্টিজেন পরীক্ষাগারে ৮০৯টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। ১৭ ডিসেম্বর থেকে ১৯টি যুক্ত হয়ে ২৯টি পরীক্ষাগারে ২৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৫৮৯টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। সব মিলিয়ে ২৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট পরীক্ষার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৩৯৮। এতে ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত ১০টি পরীক্ষাগারে গড়ে ৬ দশমিক ২২টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। আর ২৯টি পরীক্ষাগারে দিনে গড় নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪ দশমিক ৯২।

করোনার উপসর্গ না থাকলে ব্যক্তির নমুনা পরীক্ষা অ্যান্টিজেন কিটে করা হয় না। এতে পরীক্ষার সংখ্যা কম বলে দাবি করেছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র ও এমআইএসের পরিচালক ডা. হাবিবুর রহমান। তিনি বণিক বার্তাকে জানান, করোনার সংক্রমণ কমে যাওয়ায় এবং মানুষের মধ্যে পরীক্ষার আগ্রহ না থাকায় অ্যান্টিজেনে নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা কম। অ্যান্টিজেন টেস্টের ফলাফল শতভাগ সঠিক হয় না। যাদের নমুনার ফলাফল নেগেটিভ আসে তাদের নমুনা পুনরায় পরীক্ষার জন্য রিভার্স ট্রান্সক্রিপশন পলিমারেজ চেইন রিঅ্যাকশন বা আরটি-পিসিআর পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়। যেসব জেলায় আরটি-পিসিআর ল্যাব নেই সেসব জেলায় অ্যান্টিজেন টেস্টের ব্যবস্থা করা হয়েছে। অ্যান্টিজেন টেস্টের এক লাখ কিট দক্ষিণ কোরিয়া থেকে আনা হয়েছে।

তারা বলছেন, দ্রুত ও সহজে ফল পেতে অ্যান্টিজেন টেস্ট চালু করা হয়। কারো দেহে ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটেছে কিনা তা দ্রুততম সময়ে জানার পদ্ধতি হলো অ্যান্টিজেন টেস্ট। এজন্য নাক বা মুখগহ্বর থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়। রিভার্স ট্রান্সক্রিপশন পলিমারেজ চেইন রিঅ্যাকশন বা আরটি-পিসিআর পদ্ধতি সংক্রমণ শনাক্তে বিশ্বে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য পদ্ধতি হিসেবে বিবেচিত হলেও এ পদ্ধতিতে নমুনা সংগ্রহের পর ফল পেতে বেশ সময় লেগে যায়। তুলনামূলক খরচ বেশি হয়।

বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সাবেক সভাপতি ডা. রশিদ ই মাহবুব বণিক বার্তাকে বলেন, অ্যান্টিজেন টেস্ট শুরুতে দরকার থাকলেও তখন করা হয়নি। স্থানীয় পর্যায়ে তেমন প্রচার-প্রচারণা না থাকায় অ্যান্টিজেন টেস্ট কম হচ্ছে। টেস্ট কম হওয়া মানে সংক্রমণ কমে যাওয়া নয়।

মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা বলছেন, করোনা পরীক্ষায় মানুষের আগ্রহ না থাকা এবং সংক্রমণ শনাক্ত হলে আলাদা থাকার ভয়ে অ্যান্টিজেনে পরীক্ষা কম হচ্ছে। পিরোজপুরের সিভিল সার্জন ডা. মো. হাসনাত ইউসুফ জাকী বণিক বার্তাকে জানান, জেলায় অ্যান্টিজেন পরীক্ষাগার চালুর ১০ দিন পর একটি মাত্র নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। সেটার ফলাফল নেগেটিভ আসায় বিভাগীয় শহর বরিশালের আরটি-পিসিআর পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়েছে। করোনা পরীক্ষায় মানুষের আগ্রহ না থাকায় পরীক্ষা হচ্ছে না।

দেশে প্রথম শুরু হওয়া অ্যান্টিজেন টেস্টের জেলাগুলোর মধ্যে পঞ্চগড় একটি। সে জেলায় পর্যাপ্ত পরিমাণে অ্যান্টিজেন কিট সরবরাহ এবং মজুদ থাকলেও পরীক্ষায় তেমন সাড়া পড়েনি। ২৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত ২০ দিনে মাত্র ৪০টি নমুনা পরীক্ষা হয়েছে। মানুষের মধ্যে আগ্রহ না থাকায় পরীক্ষার সংখ্যা কম উল্লেখ করে পঞ্চগড়ের সিভিল সার্জন ডা. মো. ফজলুর রহমান বণিক বার্তাকে বলেন, পরীক্ষায় মানুষের আগ্রহ কম। করোনা পজেটিভ এলে আলাদা থাকার ভয়ে মানুষ পরীক্ষা করতে আসে না।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেন, অ্যান্টিজেন টেস্টের ফলাফলই চূড়ান্ত নয়। এতে ফলাফল নেজেটিভ এলে আরটি-পিসিআর ল্যাবে টেস্ট করা হয়। বিদেশ গমন বা অন্য কোনো প্রাতিষ্ঠানিক কাজে অ্যান্টিজেনের ফলাফল ব্যবহার করা হয় না। মূলত তাত্ক্ষণিক করোনা রোগীকে আলাদা করার জন্য অ্যান্টিজেন টেস্ট চালু করা হয়েছিল। মানুষ এখন নমুনা দিতে আগ্রহী কম।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *