ঘাটাইলে সরিষার বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা

কয়েক দফা বন্যায় কৃষকের অপূরণীয় ক্ষতি সাধিত হলেও এবার নতুন করে ঘুরে দাঁড়ানোর প্রচেষ্টায় দিনরাত ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। বুকভরা আশা নিয়ে জমিতে বপন করেছেন সরিষা। সরিষা ফুলের হলুদ রঙে ছেয়ে গেছে টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নের মাঠঘাট। চারপাশে হলুদ ফুল আর সবুজ পাতার সমারোহে প্রকৃতি যেনো সেজেছে নতুন রূপে। এ যেনো ঘন কুয়াশার মাঝে কনকনে শীতে প্রকৃতি হলুদ চাদরে নিজেকে মুড়িয়ে রেখেছে। নয়নাভিরাম এ দৃশ্য চারদিকে এক আবেশি পরিবেশের সঙ্গে মাধুর্যতায় ভরে দিয়েছে সরষে ফুলের ঘ্রাণ। এবার তাই ঘাটাইলে সরিষার বাম্পার ফলনে কৃষকের চোখে মুখেও আনন্দের রেখা ফুঁটে উঠেছে। সরিষার ফুলে আকৃষ্ট হয়ে মৌমাছি মধু আহরণে ব্যস্ত হয়ে গুন গুন শব্দে ছুটে চলেছে এক ক্ষেত থেকে আরেক ক্ষেতে।
সরিষা ফুলের হলুদ রাজ্যে মৌমাছির গুঞ্জনে মুখরিত হয়ে উঠেছে ঘাটাইলের ফসলের মাঠ। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে চলতি মৌসুমে এ অঞ্চলে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করছেন চাষিরা। সরজমিনে ঘুরে উপজেলার ধলাপাড়া, ঘাটাইল সদর, দেউলাবাড়ি, জামুরিয়া ও দিঘলকান্দি ইউনিয়নের বেশকিছু কৃষকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, যেকোনো ফসলের চেয়ে সর্ষের আবাদ অনেক লাভজনক ও খরচ তুলনামূলক অনেক কম। তাছাড়া এ ফসলের বাজার সবসময় ভালো থাকে, ফলনও হয় ভালো। ধলাপাড়া ইউনিয়নের মুসল্লিপাড়া গ্রামের রাধন দেবনাথ জানান, বর্ষার পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অগ্রহায়ণ মাসের প্রথমদিকে কৃষকরা সরিষার বীজ বুনে থাকে। কৃষকরা খুব কম সময়ে সরিষা ঘরে তুলতে পারে। একই এলাকার মনির হোসেন বলেন, আমি দুই একর জমিতে সরিষা চাষ করেছি। প্রচুর ফলন হয়েছে, আশা করি দামও ভালো পাবো। তবে বিভিন্ন কৃষিপণ্যের পাশাপাশি সরিষার ক্ষেত্রে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা অব্যাহত থাকলে এখানকার কৃষকরা আরো বেশি উপকৃত হতো। প্রায় একই কথা বলেছেন বিভিন্ন ইউনিয়নের ডজন খানেক কৃষক। অপরদিকে আবাদি সর্ষে ফুল থেকে মৌমাছি মধু আহরণ করছে। উপজেলার কান্দুলিয়া গ্রামের কৃষক আব্দুল কাদের ও গাংগাইর গ্রামের কৃষক মজনু মিয়া। তারা জানান, এবার চারবিঘা জমিতে সরিষা চাষ করেছেন। প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে বাম্পার ফলনের আশা করছেন। এতে খরচ বাদে প্রতি বিঘায় ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা আয় হবে।
এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দিলশাদ জাহান জানান, উপজেলায় ২ হাজার ২ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ করা হয়েছে। কম খরচে অধিক মুনাফা পাওয়া যায় বলে প্রতি বছরই সরিষা চাষে কৃষকদের আগ্রহ দিন দিন বাড়ছে। গত বছরের তুলনায় এ বছর ৫৫৭ হেক্টর জমিতে আবাদ বৃদ্ধি পেয়েছে। সরকারিভাবে ও বিভিন্ন প্রকল্পের সহায়তায় উচ্চ ফলনশীল জাতের সরিষার আবাদ ভবিষ্যতে আরো বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা যাচ্ছে। কৃষি অফিস থেকে কৃষকদের উচ্চ ফলনশীল সরিষা আবাদের জন্য সব সময়ই উৎসাহ ও সহায়ত করে থাকে। উপযুক্ত বীজ নির্বাচন, সুষম সার প্রয়োগে আমরা প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে থাকি। এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় সরিষার বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন এই কর্মকর্তা।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *