দিনাজপুরে মেশিনে ধান কাটা-মাড়াই উৎসব

উত্তরের শস্যভাণ্ডার দিনাজপুরে করোনা পরিস্থিতিতে শ্রমিক সংকট নিরসনে অত্যাধুনিক পদ্ধতিতে কম্বাইন হারভেস্টার মেশিনে বোরো ধান কাটা, মাড়াই ও ঝাড়াইয়ের উৎসব চলছে। এতে কৃষকের শ্রম, সময় ও আর্থিক সাশ্রয় হচ্ছে। সরকারি ভর্তুকি দিয়ে কম্বাইন হারভেস্টারের মাধ্যমে এই কার্যক্রম চলছে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ। ইতিমধ্যে সরকারিভাবে ধান ক্রয় শুরু হলেও কৃষক ধান দিতে পারছেন না বলে অভিযোগ উঠেছে। কম্বাইন হারভেষ্টার মেশিন দিয়ে বোরো ধান কাটার পর ওই মেশিন দিয়ে ক্ষেতেই চলছে ধান মাড়াই, ঝাড়াই ও বস্তাবন্দির কাজ। এতে করোনা পরিস্থিতিতে শ্রমিক সংকট নিরসনের পাশাপাশি সময় ও অর্থের সাশ্রয় হচ্ছে কৃষকের। দিনাজপুরের ১৩ উপজেলায় এবার এক লাখ ৭১ হাজার ৩শ’ ৫০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হলেও চাষ হয়েছে আরো বেশি জমিতে। ব্রি ধান-২৮ ও ব্রি ধান-২৯-এর আবাদ হয়েছে বেশি। অত্যাধুনিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ ও আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার কৃষক ধানের ভালো ফলন পেয়েছে। উৎপাদিত ধান থেকে এবার ৮ লাখ মেট্রিক টন চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। কিছু কৃষকের অভিযোগ, কৃষি বিভাগ পক্ষপাতিত্ব ও স্বজনপ্রীতির আশ্রয় নিয়েছে। অনেক প্রকৃত কৃষক বঞ্চিত হয়েছে সরকারি এই কম্বাইন হারভেস্টারের সুবিধা থেকে। দিনাজপুরের বিরল উপজেলার পুরিয়া গ্রামের রাষ্ট্রীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত আদর্শ কৃষক মো. মতিউর রহমান জানিয়েছেন, তিনি এবার প্রায় আড়াইশ’ একর জমিতে বোরো ধান লাগিয়েছেন। বিএডিসি’র চুক্তিবদ্ধ কৃষক তিনি। দেশের অন্যতম এই কৃষক বিএডিসিকে ধানের বীজ সরবরাহ করে থাকেন। কিন্তু, করোনা এবং ঘূর্ণিঝড় আম্ফান পরিস্থিতিতে তিনি চরম বিপাকে পড়েন পাকা ধান কাটা, মাড়াই করে ঘরে তোলা নিয়ে। চরম শ্রমিক সংকটের কারণে তাকে এই ধকল পোহাতে হয়। পরে কম্বাইন হারভেস্টার মেশিন চড়ামূল্যে ভাড়া করে তাকে ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজ করতে হচ্ছে। তিনি স্থানীয় প্রশাসন ও কৃষি বিভাগের কাছে বার বার আবেদন করার পরও বরাদ্দ পাননি সরকারি ভর্তুকির কম্বাইন হারভেস্টার মেশিন। সরকার প্রকৃত কৃষকের পাশে নেই বলে তার অভিযোগ।
দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. তৌহিদুল ইকবাল জানান, কৃষি বিভাগ করোনায় শ্রমিক সংকট নিরসনে সরকারি ভর্তুকি দিয়ে জেলায় ৫১টি কম্বাইন হারভেস্টার দিয়ে ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কার্যক্রম চলছে। এতে কৃষক ঝামেলা থেকে একদিকে যেমন বেঁচেছে, তেমনি শ্রম, সময় ও অর্থ সাশ্রয় হচ্ছে। এজন্য কৃষককে সহায়তা ও পরামর্শ অব্যাহত রেখেছে কৃষি বিভাগ। ঝমেলা ছাড়াই ফসল ঘরে তুলছে কৃষক।
এদিকে দিনাজপুর খাদ্য বিভাগের জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. আশ্রাফুল আলম জানান, ইতিমধ্যে সরকারিভাবে ধান-চাল সংগ্রহ অভিযান শুরু হয়েছে। এবার জেলায় ২৬ টাকা কেজি দরে ৩২ হাজার ৭২ মেট্রিক টন ধান এবং ৩৬ টাকা কেজি দরে ৯১ হাজার ৭শ’ মেট্রিক টন চাল সংগ্রহ করা হবে। এই সংগ্রহ অভিযান চলবে ৩১শে আগস্ট পর্যন্ত। কিন্তু কৃষকের অভিযোগ, তারা কোনোভাবেই সরকারি গোডাউনে ঢোকাতে পারছেন না ধান। দক্ষিণ কোতোয়ালীর কৃষক মো. আব্দুর রহমান, বিরল উপজেলার কৃষক মোখলেসুর রহমান, কাহারোলের কৃষক রাজেউল ইসলাম, চিরিরবন্দরের কৃষক আব্দুস সালামের অভিযোগ, তারা শত চেষ্টা করেও সরকারি গোডাউনে ধান দিতে পারছেন না। তাদের এলাকার নামে অ্যাপের মাধ্যমে যাদের নাম উঠেছে, তাদের ধানও নিচ্ছে না সরকার। বরং তাদের বাড়িতে গিয়ে কতিপয় ব্যক্তি কিছু টাকা দিয়ে চুক্তিপত্র ও ব্যাংকের চেকে স্বাক্ষর করে নিয়েছে।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *