দক্ষিণ আমেরিকায় অভূতপূর্ব খরা ও দাবানলের হানা

দীর্ঘদিন ধরে খরায় ভোগার পর অনন্য জীববৈচিত্র্যের জন্য পরিচিত দক্ষিণ আমেরিকার মধ্যাঞ্চলীয় বনভূমি ও জলাভূমিতে সাম্প্রতিক সময়ে বিপর্যয়কর দাবানল দেখা যাচ্ছে। খবর এএফপি।

আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, বলিভিয়া ও প্যারাগুয়েতে সাম্প্রতিক সময়ে দাবানলের সংখ্যা বেড়েছে। ২০২০ সালে প্যারাগুয়ে, প্যারানা ও উরুগুয়ে নদীর মধ্যকার অঞ্চলগুলো বেশ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

আর্জেন্টিনার সান মার্টিন ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (ইউএনএসএম) পরিবেশ রাজনীতিবিষয়ক গবেষক এলিজাবেথ মোহলে বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে দাবানলের নাটকীয় বৃদ্ধি ঘটেছে। শুধু আর্জেন্টিনাতেই তা ১৭০ শতাংশ বেড়েছে, যা খুবই শঙ্কাজনক।

বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ক্রমবর্ধমান জলবায়ু ও পরিবেশগত সংকটের অংশ হিসেবে এমনটা হচ্ছে বলে মনে করেন মোহলে। ব্রাজিলের অ্যামাজোনাস রাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, ক্যালিফোর্নিয়া ও অ্যামাজনের পর দক্ষিণ আমেরিকার দ্বিতীয় বৃহত্তম বনাঞ্চল গ্রান চেকোতে সাম্প্রতিক দাবানলগুলোর প্রসঙ্গ টানেন তিনি।

ব্রাজিল, বলিভিয়া ও প্যারাগুয়ের মধ্যকার বিশ্বের সর্ববৃহৎ জলাভূমি পান্তানালে ৪৭ বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ খরা দেখা গেছে। ব্রাজিল থেকে উত্পত্তি হওয়া বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী নদীর একটি পারানার জলপ্রবাহ ১৯৭০ পরবর্তী সর্বনিম্নে দাঁড়িয়েছে। গত আগস্টে পূর্ব আর্জেন্টিনার রোজারিওতে জলপ্রবাহ স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে ৮০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। একই অবস্থা প্যারাগুয়ে নদীর, যাতে অর্ধ শতকের মধ্যে জলপ্রবাহ ছিল সর্বনিম্ন। আসুনসিয়নভিত্তিক প্যারাগুয়ে জাতীয় আবহাওয়া কেন্দ্র এমনটাই জানাচ্ছে।

দক্ষিণ আমেরিকায় দাবানলের আদর্শ পরিবেশ তৈরি হয়েছে। দমকা হাওয়ার পাশাপাশি সেখানকার তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা ১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইটের কাছাকাছি থাকছে। তাছাড়া কৃষকরা শুকনো মৌসুমে ফসল পুড়িয়ে কৃষিজমিকে আবাদযোগ্য করে তুলছে।

এদুয়ার্দো মিঙ্গো নামে প্যারাগুয়ে জাতীয় আবহাওয়া কেন্দ্রের এক কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা এএফপিকে জানান, সেপ্টেম্বরের শেষ ও অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে প্যারাগুয়ের দাবানল সব রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে।

২০২০ সালে প্যারাগুয়েতে দাবানলের ঘটনা ৪৬ শতাংশ বেড়েছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। দাবানলের কারণে কয়েকদিন এমনকি কয়েক সপ্তাহ ধরে গাঢ় কুয়াশায় ঢাকা পড়েছিল প্যারাগুয়ের রাজধানী আসুনসিয়ন, আর্জেন্টিনার উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় বেশ কয়েকটি শহর ও ব্রাজিলের দক্ষিণাঞ্চল। স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের অভাবের কারণে জলাভূমি বিশেষ করে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

পান্তানালের ব্রাজিল অংশে পুড়ে ছাই হওয়া পাখি, সাপ, কুমির ও গাছের ছবি পুরো বিশ্বকে মর্মাহত করেছে। জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে পান্তানালের এক-চতুর্থাংশ অঞ্চল বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। এদিকে প্যারাগুয়ে অংশ ২০১৯ সালের ভয়াবহ দাবানল থেকেই এখনো ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি।

জানুয়ারি থেকে দাবানলে পারানা ডেল্টার প্রাণীজগতের ওপর বিপর্যয় নেমে এসেছে। জাগুয়ার, পাম্পাস বিড়াল ও বেশ কয়েক ধরনের বীবরের জন্য পরিচিত জলাভূমির হাজারো হেক্টর ‘ছাইয়ের মরুভূমিতে’ পরিণত হয়েছে।

আর্জেন্টিনার সান্তা ফে প্রদেশের প্রকৃতিবিদ সিজার ম্যাসি বলেন, সরীসৃপ, ক্ষুদ্র স্তন্যপায়ী ও কচ্ছপ মারা গেছে। ২০০৮ সালের খরার কথাও আমার মনে আছে এবং তখনো দাবানলের ঘটনা ঘটেছিল। কিন্তু এবারের খরা ও দাবানল আগে থেকে তীব্র, শক্তিশালী ও দীর্ঘস্থায়ী হয়েছে।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *