ঢাকা উত্তরে এডিস মশার লার্ভা সবচেয়ে বেশি মহাখালীতে

দেশে দেশে চলছে করোনা মহামারী। বাড়ছে মৃত্যু। এরই মধ্যে রাজধানীতে বিস্তার পেতে শুরু করেছে ডেঙ্গু রোগের জীবাণুবাহী এডিস মশার লার্ভা। ডেঙ্গু প্রকোপ ঠেকাতে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন চিরুনি অভিযান পরিচালনা করছে। ঢাকা উত্তরে সবচেয়ে বেশি এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গিয়েছে মহাখালীতে। এলাকাটি এডিস মশার প্রজনন উপযোগী পরিবেশের দিক থেকেও রয়েছে এগিয়ে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) পরিচালিত অভিযানের তথ্যে মহাখালীর এমন চিত্র উঠে এসেছে।

এডিস মশা নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে নগরবাসীকে ডেঙ্গু ও মশাবাহিত অন্যান্য রোগ থেকে সুরক্ষা দিতে ডিএনসিসির চলছে পরিচ্ছন্নতা অভিযান। চারদিন ধরে চলা বিশেষ ওই অভিযানের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, মহাখালী অঞ্চলে (অঞ্চল-৩) মোট ১ হাজার ৬৬৫টি বাড়ি, স্থাপনা ইত্যাদি পরিদর্শন করে ৪২টিতে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যায় এবং ১ হাজার ১৮৫টি বাড়ি ও স্থাপনায় এডিস মশার প্রজনন উপযোগী পরিবেশ পাওয়া যায়।

সংশ্লিষ্টদের মতে, ঘনবসতিপূর্ণ মহাখালী এলাকায় রয়েছে আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল। এলাকাটিতে রয়েছে বিভিন্ন শ্রেণীর মোটর গ্যারেজ। রয়েছে পুরান টায়ার কেনাবেচার বাজার। এসব সরঞ্জাম খোলা পরিবেশে টার্মিনাল এলাকায় ফেলে রাখা হয়। সামান্য বৃষ্টি হলেও এতে পানি জমে। সৃষ্টি হয় এডিস মশার প্রজনন উপযোগী পরিবেশ। এছাড়া টার্মিনাল এলাকায় রয়েছে পরিত্যক্ত গাড়িও। এসব গাড়িতে সামান্য বৃষ্টি হলেই পানি জমে এডিস মশার লার্ভা সৃষ্টি হয়।

ডিএনসিসির অঞ্চল-৩-এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জুলকার নায়ন বণিক বার্তাকে বলেন, মহাখালী বাস টার্মিনাল ও আশপাশের এলাকাগুলোয় গাড়ির ব্যবহূত টায়ারসহ যন্ত্রাংশ পড়ে থাকতে দেখা যায়। এসব সরঞ্জামের মধ্যে বৃষ্টি হলে সহজেই পানি জমে এডিস মশার প্রজননের পরিবেশ তৈরি হয়। বিশেষ পরিচ্ছন্নতা অভিযানে এলাকাটিতে সবচেয়ে বেশি এডিস মশার লার্ভা ও প্রজননের পরিবেশ পাওয়ার পর বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে কার্যক্রম চালানো হচ্ছে।

ডিএনসিসির তথ্যমতে, উত্তরায় (অঞ্চল-১) মোট ১ হাজার ১০টি বাড়ি ও স্থাপনা পরিদর্শন করে সাতটিতে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যায়। এছাড়া ৮৯০টি বাড়ি, স্থাপনায় জমে থাকা পানি পাওয়া যায়। মিরপুর-২ নম্বরে (অঞ্চল-২) মোট ২ হাজার ৯৬৪টি বাড়ি ও স্থাপনা পরিদর্শন করে তিনটিতে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যায় এবং ৩১৬টি বাড়ি, স্থাপনায় এডিস মশার প্রজনন উপযোগী পরিবেশ পাওয়া যায়। মিরপুর-১০ নম্বরে (অঞ্চল-৪) মোট ১ হাজার ৫৩৫টি বাড়ি ও স্থাপনা পরিদর্শন করে ছয়টিতে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যায়। এছাড়া ৮৮০টি বাড়ি ও স্থাপনায় এডিস মশার প্রজনন উপযোগী পরিবেশ পাওয়া যায়।

কারওয়ান বাজারে (অঞ্চল-৫) মোট ২ হাজার ১০০টি বাড়ি ও স্থাপনা পরিদর্শন করে ১৪টিতে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যায়। এছাড়া ১ হাজার ৭৯০টি বাড়ি ও স্থাপনায় এডিস মশার প্রজনন উপযোগী পরিবেশ পাওয়া যায়। হরিরামপুরে (অঞ্চল-৬) মোট ১ হাজার ৪২৬টি বাড়ি ও স্থাপনা পরিদর্শন করে ১২টিতে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যায়। এছাড়া ১ হাজার ২৪৯টি বাড়ি ও স্থাপনায় এডিস মশার প্রজনন উপযোগী পরিবেশ পাওয়া যায়।

দক্ষিণখানে (অঞ্চল-৭) মোট ৮১৬টি বাড়ি ও স্থাপনা পরিদর্শন করে তিনটিতে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যায়। এছাড়া ৬৭৪টি বাড়ি ও স্থাপনায় এডিস মশার প্রজনন উপযোগী পরিবেশ পাওয়া যায়। উত্তরখানে (অঞ্চল-৮) মোট ৮০৮টি বাড়ি ও স্থাপনা পরিদর্শন করে একটি স্থাপনায় এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যায় এবং ৪৯৭টি বাড়ি ও স্থাপনায় এডিস মশার প্রজনন উপযোগী পরিবেশ পাওয়া যায়। ভাটারায় (অঞ্চল-৯) মোট ৫৩৮টি বাড়ি ও স্থাপনা পরিদর্শন করে চারটিতে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যায়। এছাড়া ৩৫২টি বাড়ি ও স্থাপনায় এডিস মশার প্রজনন উপযোগী পরিবেশ পাওয়া যায়।

তবে ডিএনসিসির একটি এলাকার কোনো বাড়ি বা স্থাপনায় এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যায়নি। এলাকাটি হলো সাতারকুল (অঞ্চল-১০)। সেখানে মোট ৬৫৩টি বাড়ি ও স্থাপনা পরিদর্শন করে কোথাও এডিসের লার্ভা পাওয়া পায়নি ডিএনসিসি। এছাড়া ৫০৭টি বাড়ি ও স্থাপনায় এডিস মশার প্রজনন উপযোগী পরিবেশ পাওয়া যায়।

এদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর দেশের সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ছয় শতাধিক রোগী ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। গত বছর আগস্টে দেশের ইতিহাসের সর্বোচ্চ সংখ্যক ৫২ হাজার ৬৩৬ জন আক্রান্ত ও ৭১ জনের মৃত্যু হয়।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *