আফগানিস্তানে শান্তির সম্ভাবনা সুদূরপরাহত

কাতারের মধ্যস্থতায় বছরখানেক ধরেই আফগান সরকার ও বিদ্রোহী গোষ্ঠী তালেবানের মধ্যে সমঝোতা প্রক্রিয়া বাস্তবায়নের চেষ্টা চলছে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে গত ফেব্রুয়ারির চুক্তির পর ওয়াশিংটনের হস্তক্ষেপ কমে আসায় অনেকটা বেপরোয়া হয়ে পড়েছে তালেবান। এছাড়া আলোচনার টেবিলে নিজেদের শক্ত অবস্থান জানান দেয়ার জন্য সাম্প্রতিক সময়ে হামলা জোরদার করেছে তারা। এতে সরকারি কর্মকর্তাসহ কয়েকশ বেসামরিক নাগরিকও নিহত হয়েছে। সবচেয়ে কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে ফ্রন্টলাইনে যারা যুদ্ধ করছে তারা। খবর এএফপি।

আফগান সরকারের অনুগত সেনা ও প্যারামিলিটারি সদস্যরা নিয়মিতই তালেবান, ইসলামিক স্টেটসহ (আইএস) বিভিন্ন জঙ্গিগোষ্ঠীর হামলার শিকার হচ্ছেন। এমন একজন প্যারামিলিটারি পুলিশ সদস্য হচ্ছেন জাইনুল্লাহ। ২০ বছর বয়সী এ তরুণ জানান, তালেবানের অতর্কিত হামলার ভয়ে প্রতি রাতে তাদের নোংরা ও দুর্গন্ধময় পরিখাগুলোতে আশ্রয় নিতে হয়। আজি আবাদ গ্রামে দায়িত্বরত এ সেনা বলেন, তালেবান আসলে শান্তি চায় না। তারা ভূমি মাইনের বিস্ফোরণ ঘটাচ্ছে, রাস্তার পাশে বোমা ফেলছে ও রকেট হামলা করছে।

কান্দাহার প্রদেশের মাইওয়ান্দ জেলায় অবস্থিত গ্রামটি যদিও এখনো সরকারি বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, তবে সবসময় তালেবানের হুমকির মধ্যে থাকতে হয়েছে। কারণ ১৯ বছর ধরে যুদ্ধ চললেও আশপাশের বেশ কয়েকটি প্রত্যন্ত গ্রামের নিয়ন্ত্রণ তালেবানের হাতে। কান্দাহারের এ অঞ্চলটিতে উনিশ শতকে লজ্জাজনকভাবে পরাজিত হয়েছিল ব্রিটিশ বাহিনী।

কয়েক মাস ধরে চলা সমঝোতা ও যুক্তরাষ্ট্রের ছাড় দেয়ার মাধ্যমে গত সেপ্টেম্বর আফগান সরকারের সঙ্গে শান্তি আলোচনা শুরুতে রাজি হয় তালেবান। কিন্তু তত্পরবর্তী কয়েক সপ্তাহে হামলা কেবল জোরদার করেছে তারা।

জাইনুল্লাহ বলেন, আমাদের অনেক সহযোদ্ধা নিহত হয়েছে এবং অনেকে আহত হয়েছে। বিভিন্ন ঘরবাড়ি ও মসজিদে আশ্রয় নিয়েছে তালেবান। আত্তা জান নামে ২৮ বছর বয়সী এক কৃষক বলেন, তালেবান যেসব জায়গাতেই ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে, সরকারি বাহিনীর সঙ্গে তালেবানের লড়াইয়ে অনেক গ্রামের ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়েছে এবং অনেক সড়ক পরিত্যক্ত হয়েছে।

সরদার নামে আজিজ আবাদ গ্রামের অপর এক কৃষক জানান, অস্থিতিশীল নিরাপত্তা পরিস্থিতির কারণে তাদের মসজিদে সন্ধ্যাবেলার নামাজ বন্ধ থাকছে। যুদ্ধের কারণে এলাকাগুলো বিভক্ত হয়ে পড়ায় সরদারের পরিবারের সদস্যরা তালেবান নিয়ন্ত্রিত এলাকায় পড়েছেন। তিনি বলেন, আমার পুরো পরিবার আলাদা হয়ে পড়েছে। ১৮ বছর ধরে তাদের সুখ-দুঃখের ভাগিদার হতে পারি। এমনকি অনেকের শেষকৃত্যে অংশ নিতে পারিনি।

গত ফেব্রুয়ারিতে ওয়াশিংটন ও তালেবানের মধ্যে শান্তি চুক্তির পর থেকেই শান্তি আলোচনা শুরু হয়। যুক্তরাষ্ট্র তার সেনা প্রত্যাহার করে নেবে এ অঙ্গীকার আদায় করে এবং বিনিময়ে তারা শান্তি আলোচনায় আন্তরিক সহযোগিতা করবে এ প্রতিশ্রুতি দেয় তালেবান। কিন্তু আহমেদ ইখলাস নামে এক পুলিশ কমান্ডার বলেন, আলোচনা শুরুর পর প্রতিদিন হামলা জোরদার করেছে তালেবান। কয়েক সপ্তাহ আগে এক বিস্ফোরণে আমাদের এক সহকর্মী নিহত হয়েছেন। বিস্ফোরণের পর আমি বধির হয়ে গেছি।

এ ধরনের হামলার ঘটনা আফগানিস্তানজুড়েই হচ্ছে। আফগান সেনা ও পুলিশ ফাঁড়িতে বৃহদাকার হামলা চালাচ্ছে তালেবান। খলিল নামে ২৬ বছর বয়সী এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, আমেরিকানদের চোখে ধুলো দিয়েছে তালেবান। আমেরিকানদের সঙ্গে তারা কিছু চুক্তি করেছে কিন্তু শান্তি চায় না।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *