শেষ ৭ টেস্ট ম্যাচে ৬ হার। এই বছরের শুরুতেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে নিজেদের মাটিতে টেস্ট সিরিজে হোয়াইটওয়াশ। এমনকি গেল মাসে নিউজিল্যান্ড সফরে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টিতে ৬ ম্যাচে দল দেখেছে করুণ পরাজয়। এক কথায় তিন ফরমেটের ক্রিকেটেই টাইগারদের পিঠ দেয়ালে ঠেকেছিল। তাই শ্রীলঙ্কা সফরে জয়ের কোনো বিকল্প ছিল না। না, ক্যান্ডি টেস্টে জয় আসেনি। হয়েছে ‘ড্র’। এতেই যেন টাইগাররা পেয়েছে মুক্তির নিঃশ্বাস।
২০১৮ তে বাংলাদেশ দল টেস্টে সর্বশেষ ড্র করেছিল চট্টগ্রামে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। ৪ বছর পর একই দলের বিপক্ষে ড্র করলো বাংলাদেশ। তবে এবার লঙ্কার মাটিতে। গতকাল বৃষ্টিবিঘ্নিত শেষ সেশনে দুই অধিনায়কের সম্মতিতে ম্যাচ ড্র ঘোষণা করেন আম্পায়াররা। ম্যাচের শুরুর দুই দিন ব্যাট হাতে রাজত্ব করেছে বাংলাদেশ। এতে জয়ের আশাও জেগেছিল টাইগারভক্তদের মাঝে। তবে পাঁচ দিনের লড়াই শেষে বাংলাদেশ যেন নিয়েছে মুক্তির নিশ্বাস! দাপটে ব্যাটিংয়ে শ্রীলং্কা তাদের প্রথম ইনিংস ঘোষণা করে ৬৪৮/৮ সংগ্রহ নিয়ে। স্বাভাবিকভাবেই মনে হতে পারে শ্রীলঙ্কা আগে ব্যাট করে এ সংগ্রহ দাঁড় করালে কী হতো! প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের সংগ্রহটা এত বড় না হলে (৫৪১/৭) কী হতো! ম্যাচে বাংলাদেশের প্রাপ্তি কম নয়। নাজমুল হোসেন শান্তর ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি, অধিনায়ক মুমিনুল হক সৌরভের দেশের বাইরে প্রথম সেঞ্চুরি, তামিম ইকবালের উভয় ইনিংসে ফিফটি। মুশফিকুর রহীম ও লিটন দাসের ব্যাটে রান। এই সবকিছুই টাইগারদের ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত। শুধু তাই নয়, পেসার তাসকিনের ফেরাটাও তাৎপর্যপূর্ণ। মরা উইকেটেও দুর্বার বোলিংয়ে তার ৩ উইকেট শিকার দেখাচ্ছে আশার আলো। দেশের বাইরে টানা ৯ ম্যাচ হারের পর শেষ পর্যন্ত একটি ম্যাচ বাঁচানো গেছে। এই কারণেই হয়তো টাইগার অধিনায়কের স্বস্তি। দলের ক্রিকেটারদের মনেও হয়তো ফিরেছে বিশ্বাস। যা সিরিজের পরের টেস্টে হবে দলের জন্য অনুপ্রেরণা।
শ্রীলঙ্কার পাল্লেকেলে স্টেডিয়ামে টসে জিতে বাংলাদেশ ব্যাট করতে নামে। টানা হারে দেয়ালে পিঠ ঠেকা দলের অন্যতম দুর্বলতা ব্যাটিং। কিন্তু তামিম ৯০, শান্ত ১৬৩, মুমিনুলের বিদেশের মাটিতে প্রথম সেঞ্চুরি (১২৭), লিটন ও মুশফিকের ফিফটিতে ভর করে হাতে ৩ উইকেট রেখে ৫৪১ রানে ইনিংস ঘোষণা করে বাংলাদেশ। টানা দুই দিন ও তৃতীয় দিনের প্রথম সেশন পর্যন্ত ব্যাট করে বাংলাদেশ দল। তাতেই ধারণা করা হচ্ছিল উইকেট ব্যাটসম্যানদের জন্য স্বর্গ। কিন্তু জবাব দিতে নেমে লঙ্কানরাও হয়তো অবাক হয়েছে। উইকেট এতটাই মরা যে এখানে বোলারদের করার কিছুই ছিল না। শ্রীঙ্কার ওপেনার দিমুথ করুনারত্নে ২৪৪ ও পাঁচ নম্বরে ব্যাট হাতে ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা করেন ১৬৬ রান। তাদের ম্যারাথন জুটিতে শেষ পর্যন্ত শ্রীলঙ্কা ইনিংস ঘোষণা করে ৮ উইকেট হারিয়ে ৬৪৮ রানে। তারা প্রথম ইনিংসে লিড নিয়ে নেয় ১০৭ রানের। শ্রীলঙ্কার প্রথম ইনিংসে ১৫৪ রানে ৫ম দিন শুরু করা ধনাঞ্জয়া ডি সিলভাকে বিদায় করেন তাসকিন আহমেদ। তাতে দিমুথ করুনারত্নের সঙ্গে তার বিশাল জুটি থামে ৩৪৫ রানে। তাসকিন নিজের পরের ওভারে ট্রিপল সেঞ্চুরির স্বপ্ন দেখা করুনারত্নেকে দেখান সাজঘরের পথ। ৩০ ওভার বল করে ১১২ রান খরচ করে এই পেসারের শিকার ৩ উইকেট।
লাঞ্চের পরপরই স্বাগতিকরা ইনিংস ঘোষণা করে। এরপর দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে দ্রুত উইকেট হারায় বাংলাদেশ। তরুণ সাঈফ হাসান দ্বিতীয় ইনিংসেও ব্যর্থ। প্রথম ইনিংসে ‘ডাক’ মারা ওপেনার গতকাল করেন ১ রান। এরপর প্রথম ইনিংসের সেঞ্চুরিয়ার নাজমুল হোসেন শান্ত ০ তেই আউট হন। শেষ বিকালে এমন ব্যাটিংয়ে তৈরি হয় শঙ্কা। তবে তামিম ইকবাল ও মুমিনুল জুটি বেঁধে তা উড়িয়ে দেন। শুরু থেকেই মারকুটে মুডে থাকা তামিম সেঞ্চুরির দিকেই যাচ্ছিলেন। কিন্তু চা বিরতির পরই দিনের শেষ সেশনে শুরু হয় বৃষ্টি। বাংলাদেশ তখন লঙ্কানদের লিড ছড়িয়ে যেতে মাত্র ১ রান দূরে। এরপর আর খেলা হয়নি। প্রথম ইনিংসে ৯০ রান করে নিজের ভুলে সেঞ্চুরি হাতছাড়া করেন তামিম ইকবাল। আর গতকাল বৃষ্টির বাগড়ায় থমকে যায় তার দারুণ ইনিংসটি। হানা। আক্রমণাত্মক ইনিংসে ৭৪ রানে অপরাজিত থাকেন দেশ সেরা ওপেনার। ৯৮ বলের ইনিংসে তামিম হাঁকান ১০ চার ও ৩টি ছক্কা। অন্যদিকে অধিনায়ক মুমিনুল হক অপরাজিত থাকেন ২৯ রানে।