ডেমোক্র্যাটদের প্রস্তাবিত পুলিশি সংস্কারের পক্ষে রিপাবলিকানরাও

ডেমোক্র্যাট কংগ্রেস সদস্যদের উত্থাপিত পুলিশ সংস্কার বিলের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে বেশির ভাগ মার্কিন। এমনকি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নিজ দল রিপাবলিকান পার্টির অনেক সমর্থকও দেশের পুলিশি ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানোর পক্ষে মত দিয়েছে। আফ্রো-আমেরিকান জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যু এভাবেই এক সুতায় গেঁথেছে মার্কিনদের। রয়টার্স ও বহুজাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইপসোস পরিচালিত একটি যৌথ মতামত জরিপে এ চিত্র উঠে এসেছে। খবর রয়টার্স।

বৃহস্পতিবার এ জরিপ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। গত ৯ ও ১০ জুন দেশজুড়ে জরিপটি পরিচালনা করা হয়। এতে দেখা যায়, মার্কিনদের বেশির ভাগই ডেমোক্র্যাট আইনপ্রণেতাদের সুরেই কথা বলছেন। তারাও মনে করছেন, যুক্তরাষ্ট্রের পুলিশ বিভাগে বেশকিছু ক্ষেত্রে পরিবর্তন আনা দরকার।

এদিকে হোয়াইট হাউজ ও রিপাবলিকান আইনপ্রণেতারাও পুলিশ ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনতে নিজেদের মতো করে পরিকল্পনা সাজাচ্ছেন। তবে কংগ্রেসে ডেমোক্রেটিক পার্টি ও আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্পের সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বী জো বাইডেনের পক্ষ থেকে যে আমূল পরিবর্তনের দাবি জানানো হচ্ছে, রিপাবলিকানদের সংস্কার পরিকল্পনা তার থেকে ঢের নমনীয়।

উল্লেখ্য, পুলিশি নির্যাতন ও বর্ণবাদের বিরুদ্ধে কয়েক সপ্তাহের বিক্ষোভের পর মার্কিন পুলিশ ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে ৮ জুন কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদে একটি বিল উত্থাপন করেছেন ডেমোক্র্যাটরা। তারা বলছেন, বিলটি আইনে পরিণত হলে তা অসদাচরণের ক্ষেত্রে পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন, গলা ও ঘাড় চেপে ধরা নিষিদ্ধ করা এবং বর্ণবাদ প্রতিহত করার পথ সুগম করবে। অবশ্য রিপাবলিকানদের নিয়ন্ত্রণে কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেটে ‘জাস্টিস ইন পুলিশিং অ্যাক্ট অব ২০২০’ নামে বিলটি সমর্থন পাবে কিনা, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ায় ডেমোক্র্যাটদের এ উদ্যোগের প্রতি বিষোদ্গার করেছেন। টুইটারে এক বার্তায় ট্রাম্প বলেন, ‘চরম বামপন্থী ডেমোক্র্যাটরা আমাদের পুলিশের তহবিল বরাদ্দ বন্ধ ও তাদের বিদায় করে দিতে চাইছে। দুঃখিত, আমি চাই আইন ও শৃঙ্খলা!’

ডেমোক্র্যাটদের বিলটিতে পুলিশের অসদাচরণের ঘটনা নথিভুক্ত করা, গলা ও ঘাড়ে চাপ প্রয়োগ নিষিদ্ধ করা, কোনো ঘোষণা না দিয়ে পুলিশি অভিযান চালানো নিষিদ্ধ এবং নাগরিক অধিকার ভঙ্গে পুলিশকে জবাবদিহির আওতায় আনার কথা বলা হয়েছে। যেসব পুলিশ বাহিনী এসব বিধি মেনে চলবে না, তাদের জন্য ফেডারেল তহবিল বরাদ্দ বন্ধের আহ্বান জানানো হয়েছে। বিলটিতে বিনা বিচারে কাউকে হত্যা করা হলে বিষয়টিকে ফেডারেল আইনে অপরাধ হিসেবে গণ্য করার কথা বলা হয়েছে।

অনলাইনে ১ হাজার ১১৩ জন প্রাপ্তবয়স্ক মার্কিন রয়টার্স-ইপসোসের জরিপে অংশ নিয়েছেন। তারা ডেমোক্র্যাটদের প্রস্তাবিত বিলের কোনো না কোনো সংশোধনীর প্রতি সংহতি জানিয়েছে। যেমন ৮২ শতাংশ উত্তরদাতা মনে করছে, গলা ও ঘাড়ে পুলিশের চাপ প্রয়োগ নিষিদ্ধ করা হোক। ৮৩ শতাংশ উত্তরদাতা জাতি, বর্ণ ও ধর্মের ভিত্তিতে প্রোফাইলিংয়ের বিরুদ্ধে মত জানিয়েছে। আর ৯২ শতাংশ উত্তরদাতা বলেছে, ফেডারেল পুলিশের বডি ক্যামেরা পরিধান বাধ্যতামূলক করা উচিত।

প্রতিবেদনে আরো দেখা গেছে, ৮৯ শতাংশ মার্কিন মনে করছে এমন আইন প্রণয়ন করা উচিত, যেন কোনো পুলিশ কোনো নাগরিককে আটকালে আটককৃত ব্যক্তি যদি ওই পুলিশের নাম, ব্যাজ নম্বর ও আটকানোর কারণ জানতে চায়, তবে তিনি তা জানাতে বাধ্য থাকেন। এছাড়া ৯১ শতাংশ মনে করছে, পুলিশ সাধারণত কী ধরনের অসদাচরণ করে, তা জানার জন্য স্বতন্ত্র তদন্তের অনুমতি দেয়া প্রয়োজন।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *