ট্রাউজারেই ভরসা তাইজুল-নাঈমের

করোনাভাইরাস বদলে দিচ্ছে বিশ্বের অনেক নিয়মকানুন। ছাড়তে হচ্ছে অনেক বদ অভ্যাস। জীবনে চলাচলে আনতে হচ্ছে বড় পরিবর্তনও। সেই প্রভাব থেকে বাদ পড়েনি ক্রিকেটও। মাঠে খেলা শুরু হয়নি এখনো। তবে ধীরে ধীরে বেশ কয়েকটি দেশ শুরু করেছে অনুশীলন। সেখানেও একই চিত্র। কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মেনে দূরত্ব বজায় রেখেই মাঠে চলছে ফিটনেস ট্রেনিং।

আবার মাঠে খেলা শুরু হলে সেখানেও থাকবে একই রকম কড়াকড়ি। এর মধ্যে অন্যতম হলো  থুতু  মেখে বল চকচকে রাখতে পারবেন না আর কোনো বোলারই। বিশেষ করে পেসাররা পড়বেন দারুণ চ্যালেঞ্জের মুখে। স্পিনারদের জন্যও তা কম হবে না। বলের চকচকে ভাব না থাকলে দ্রুত পুরাতন হয়ে যাবে। এতে ব্যাটসম্যানরা খেলবে স্বাচ্ছন্দে। আবার স্পিনারদের বল গ্রিপ ও স্কিড করাতেও হবে সমস্যা। তবে এ কথা নিয়ে আলোচনা পুরানো। প্রায় প্রতিটি বোলারই এখন খুঁজছেন থুতু ব্যবহারের বিকল্প। বাংলাদেশের স্পিনাররাও বসে নেই। এ নিয়ে জাতীয় দলের অভিজ্ঞ বাঁহাতি স্পিনার তাইজুল ইসলাম বিকল্প বের করে রেখেছেন। আরেক তরুণ অফস্পিনার নাঈম হাসানও প্রস্তুত হচ্ছেন থুতু বিহীন বোলিং করার কৌশল রপ্ত করতে। দৈনিক মানবজমিনকে তাইজুল বলেন, ‘থুতু বা লালা ব্যবহার ছাড়া অনেক কঠিন হবে আমাদের বল করা। বিশেষ করে পেসাররা পড়বে টেস্টে বড় চ্যালেঞ্জে। আমরা স্পিনাররাও বাদ যাবো না। বলের সাইন ধরে রাখতে পারবো না। দ্রুত পুরানো হয়ে যাবে। গ্রিপ করতে কষ্ট হয়ে যাবে। আবার স্কিড করানো হবে কঠিন। যেহেতু অন্য কিছু ব্যবহার করতে পারবো না। তাই ট্রাউজারে ঘষাই হবে ভরসা।’

বলের সাইন ধরে রাখা বেশি প্রয়োজন হয় টেস্ট ক্রিকেটে। এখানে অনেক লম্বা সময় বল করতে হয়। যদি থুতু ব্যবহার করা না যায় তাহলে ৩০/৩৫ ওভারেই বলটা পুরানো হয়ে যাবে। সেই ক্ষেত্রে স্পিনারদের জন্য চ্যালেঞ্জটা বাড়বে বলেই মনে করেন তাইজুল। তবে বিকল্প চিন্তার সঙ্গে পুরানো বলে অভ্যাস গড়ে তোলার প্রতি জোর দিলেন। তিনি বলেন, ‘এখন যেহেতু কোনো কিছুই ব্যবহার করতে পারবো না থুতুর পরিবর্তে তাহলে পুরোনা বলে অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। নিজেদের কৌশলের ধার বাড়াতে হবে। ব্যাটসম্যান দুর্বলতা নিয়ে আরো বেশি কাজ করতে হবে। এক কথায় করোনার পর এই বিষয়টা প্রতিটি বোলারের জন্য আলাদা অনুশীলন ও ভাবনার অংশ হবে।’

চাইলে বিসিবির নিয়ম ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে মাঠে অনুশীলন করতে পারবে ক্রিকেটাররা। যদিও এখনো এ কার্যক্রম শুরু করেনি বিসিবি। শুধু তাই নয় অনেক ক্রিকেটার মাঠে ট্রেনিং শুরু করতে চাইলেও আবার আছেন ভয় শঙ্কাতে। কেউ কেউ ট্রেনিং শুরু করার পক্ষেই নয়। তবে তাইজুল মনে করেন এখন আর ভয় পেলে হবে না। বাসায় থেকে  থেকে ফিটনেস হারাতে চান না এই অভিজ্ঞ স্পিনার। তিনি বলেন, ‘নাটোরে নিজ বাড়িতে আছি। হয়তো কিছুদিনের মধ্যেই ঢাকায় চলে আসবো। আমি মনে করি বিসিবি যদি সুযোগ সুবিধা দেয় ট্রেনিংয়ের তাহলে আমাদের জন্য ভালোই হবে। কারণ মাঠের কাজ বাসায় বসে হয় না। ঘাসে দৌড়ানো আর ট্রেডমিলে এক হবে না কোনো দিনও। তাই এখন ভয় থাকলেও বাসায় বসে নিজের আরো ক্ষতি করতে চাই না। মানসিক ক্ষতিও হচ্ছে বাসায় থেকে থেকে। বিসিবি স্বাস্থ্যবিধি কঠিনভাবে মেনে আমাদের ট্রেনিং করাবে সে আশাই করি।’

‘পুরনো বলে খেলার অভ্যাস বাড়াতে হবে’
তরুণ অফস্পিনার নাঈম হাসানও মাঠে ফিরতে ব্যাকুল। আর বলে থুতু মাখানোর পরিবর্তে কী করতে হবে তা ভাবাচ্ছে তাকেও। নাঈম বলেন, ‘এটিতো দারুণ চিন্তার বিষয় আমাদের জন্য। আমি দুটি বিষয় ভেবেছি। একটি হলো আমরা যখন নেটে অনুশীলন করবো তখন পুরানো বলে সময় দিতে হবে অনেক বেশি। মানে পুরনো বলে বল করাটা আরো ভালোভাবে রপ্ত করতে হবে। এছাড়াও ট্রাউজারে ঘষে যতটা চকচকে করা যায় বা সাইন বাড়ানো যায় সেই চেষ্টা করতে হবে। এ জন্য আমার মনে হয় ট্রাউজারের কাপড়ে পরিবর্তন আনা দরকার। একটু চকচকে কাপড়ের ট্রাউজার হলে বল সাইন করতে সুবিধা হবে।’

বর্তমানে চট্টগ্রামে নিজের বাসায় অবস্থান করছেন এই তরুণ অফ স্পিনার।  ট্রেনিংয়ের জন্য বেছে নিয়েছেন বাসার সামনের ছোট একটু ফাঁকা জায়গা। জিমের কাজ করছেন রাবার ব্যবহার করে। তাই মাঠে ফিরতে চান তিনি। ঢাকায় নয়, যদি সুযোগটা চট্টগ্রামে করে দেয়া হয় তাহলে  বেশি সুবিধা মনে করেন তিনি। নাঈম বলেন, ‘বাসাতেই নিজের ফিটনেস বাড়ানোর কাজ করছি। কিন্তু মাঠের অভাব পূরণ হবে না এতে। বিসিবি সুযোগ দেবে শুনেছি ট্রেনিংয়ের। এই জন্য ঢাকা যেতে হলে যাবো। তবে যদি চট্টগ্রামে এই সুযোগ দেয়া হয় তাহলে আমার জন্য সুবিধা বেশি হবে।’

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *