টাইগ্রে অভিযানের ইতি ঘোষণা ইথিওপিয়ার

ইথিওপিয়ার উত্তরাঞ্চলীয় টাইগ্রে শহরে সামরিক অভিযান শেষ হয়েছে এবং সেনাবাহিনী আঞ্চলিক রাজধানী মেকেলের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে বলে দাবি করেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী আবি আহমেদ। প্রায় তিন সপ্তাহ ধরে ওই অঞ্চলে সংঘাত চলছিল। একই সঙ্গে বিদ্রোহী নেতাদের ধরতে অভিযান চলছে বলেও জানান তিনি। খবর বিবিসি ও রয়টার্স।

সাম্প্রতিক সময়ের এ সংঘর্ষে শত শত মানুষ মারা গেছে এবং প্রায় ৪০ হাজার সুদানে আশ্রয় নিয়েছে। এক টুইট বার্তায় প্রধানমন্ত্রী আবে বলেন, আমি এটা আপনাদের জানাতে পেরে আনন্দিত যে টাইগ্রে অঞ্চলে সামরিক অভিযান সম্পন্ন হয়েছে। ফেডারেল সরকার এখন মেকেলে শহরের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে বলেও নিশ্চিত করেন তিনি। তবে টাইগ্রের পিপলস লিবারেশন ফ্রন্টের (টিপিএলএফ) নেতা দেব্রেতসিওন গেব্রেমাইকেল জানান, তাদের সহযোদ্ধারা এখনো লড়াই থামায়নি। বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে টিপিএলএফের ওই নেতা বলেছেন, তারা স্বাধিকার বজায় রাখার অধিকার প্রতিষ্ঠা করবেন এবং শেষ পর্যন্ত হামলাকারীদের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাবেন। চলতি মাসের শুরুতেই বিরোধপূর্ণ ওই অঞ্চলে সংঘাতের সূত্রপাত হয়।

মেকেলেতে আক্রমণের জন্য ইরিত্রিয়া সরকারের বিরুদ্ধেও অভিযোগ তুলেছে টিপিএলএফ। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, টিপিএলএফের সদস্যরা এখন পাহাড়ে পালিয়ে গিয়ে পরবর্তী সময়ে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে গেরিলা আক্রমণের প্রস্তুতি নিতে পারে। টিপিএলএফের যোদ্ধারা মূলত স্থানীয় মিলিশিয়া এবং প্যারামিলিটারি ইউনিটের সদস্য ছিলেন। তাদের সংখ্যা আনুমানিক ২ লাখ ৫০ হাজার।

দাতব্য সংস্থাগুলো আশঙ্কা করছে যে এ সংঘাতের কারণে মানবাধিকার সংকট তৈরি হতে পারে এবং হর্ন অব আফ্রিকা অঞ্চলকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে। প্রতিবেশী ইরিত্রিয়ায় মার্কিন দূতাবাস থেকে জানানো হয়, তারা রাজধানী আসমারায় শনিবার রাতে ছয়টি বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছেন। এর আগেও ইথিওপিয়ার বিদ্রোহীরা ইরিত্রিয়াকে লক্ষ করে রকেট হামলা চালিয়েছে।

২০১৮ সালে আবি ক্ষমতা গ্রহণের আগ পর্যন্ত কয়েক দশক ধরে ইথিওপিয়ার সেনা এবং রাজনৈতিক অঙ্গনে টিপিএলএফের কর্তৃত্ব বজায় ছিল। গত বছর আবি ক্ষমতাসীন জোট ভেঙে দেন এবং একাধিক নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীভিত্তিক আঞ্চলিক দল গঠন করেন এবং তাদের নিয়ে একটি দল গঠন করেন। টিপিএলএফ ওই দলে যোগ দিতে অস্বীকৃতি জানায়।

সেপ্টেম্বরে টাইগ্রেতে আঞ্চলিক নির্বাচনের পর ওই দ্বন্দ্ব আরো বৃদ্ধি পায়। যদিও কভিড-১৯ মহামারীর কারণে সে সময় পুরো দেশে সব ধরনের ভোটগ্রহণ বন্ধ ছিল। আবি সে সময় ভোটকে অবৈধ বলে ঘোষণা করেন। টাইগ্রের প্রশাসন আবির সংস্কার কার্যক্রমকে নেতিবাচকভাবে দেখে। তারা মনে করে, তিনি কেন্দ্রীয় সরকারকে বেশি ক্ষমতা দিয়ে আঞ্চলিক রাজ্যগুলোর ক্ষমতা সীমিত করতে চান।

আবি গতকালের বিবৃতিতে বলেন, ফেডারেল পুলিশ তল্লাশি চালিয়ে টিপিএলএফের অপরাধীদের আটক করবে এবং তাদের আদালতে উপস্থাপন করবে। এখন পর্যন্ত টিপিএলএফের কোনো নেতা আত্মসমর্পণ করেছেন কিনা সে বিষয়টি এখনো নিশ্চিত নয়। টিপিএলএফ মুখপাত্র জানান, সরকারি বাহিনীর নির্মমতা আমাদের লড়াইকে শক্তিশালী করবে মাত্র।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *