ঝরে পড়ছে লিচুর গুটি

জলবায়ু পরিবর্তন ও প্রচণ্ড খরায় ঝরে পড়ছে পাবনার ঈশ্বরদীর প্রধান অর্থকরী ফল লিচু। এ বছর বাম্পার ফলনের আশা দেখিয়েও খরার কারণে লিচু ঝরে পড়ায় দুঃশ্চিন্তায় পড়েছেন চাষিরা। তীব্র খরায় লিচু ফেটে যাচ্ছে, আকারে ছোট হচ্ছে এবং কালো দাগ দেখা দিয়েছে।

এদিকে দেশে চলমান করোনা মহামারি লকডাউনের কারণে ঈশ্বরদীর লিচুচাষিরা ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলার মহাজনদের কাছে এ বছর তাঁদের লিচুগাছ বিক্রি করতে পারছেন না।
[১] স্বাধীনতার সূবর্ণজয়ন্তী ও জাতীয় দিবস উদ্যাপন করলো বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী ≣ [১] সংক্রমণ ঝুঁকিতে থাকা ৩১তম জেলা কক্সবাজার ≣ কনের উচ্চতা ৪২ ইঞ্চি, বরের ৪০

উপজেলা অতিরিক্ত কৃষি কর্মকর্তা মিতা সরকার জানান, ঈশ্বরদী দেশের অন্যতম বৃহৎ লিচু চাষের এলাকা। অতিরিক্ত খরার কারণে লিচু ঝলসে যাওয়ায় চাষিরা এবার তাঁদের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবেন না। চাষিরা অনুখাদ্য মনে করে অতিমাত্রায় সার ও কীটনাশক প্রয়োগ করার কারণেও লিচু ঝরে পড়তে পারে। পরামর্শ ছাড়া কোনো অনুখাদ্য না দেওয়ার জন্য চাষিদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

উপজেলার বক্তারপুর গ্রামের লিচুচাষি আয়নাল হোসেন জানান, প্রায় ১৫ দিন আগে ঈশ্বরদীতে কয়েক পশলা বৃষ্টি হয়। বৃষ্টির ফলে গাছে লিচু ঝরে পড়া বন্ধ থাকে। কিন্তু বৃষ্টিপাত না হওয়ায় আবারও চাষিরা চিন্তায় পড়ে যান।

পাকশী ইউনিয়নের দিয়াড় বাঘইল গ্রামের চাষি আকাত উল্লাহ্ জানান, এক দুই সপ্তাহ ধরে বৃষ্টিপাত না হওয়ায় এখন গাছের লিচু ঝরে পড়ছে, আকারে ছোট হচ্ছে এবং লিচুতে কালো দাগ দেখা দিয়েছে।

উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ঈশ্বরদী পৌরসভা ও সাতটি ইউনিয়নর বিভিন্ন গ্রামে ৩ হাজার ১৫০ হেক্টর জমিতে লিচু গাছ রয়েছে ২ লাখ ৮৩ হাজার ৫০০টি। বিঘা প্রতি ২০টি থেকে ১৫টি গাছ অর্থাৎ ১ একর জমিতে ৪২টি, ১ হেক্টর জমিতে ৯০টি গাছ হয়।

লিচু আবাদী কৃষকের সংখ্যা ৯ হাজার ৬২০ বাণিজ্যিক আকারে বাগান ২ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে। বিচ্ছিন্নভাবে বসতবাড়িতে আবাদ রয়েছে ৫৫০ হেক্টর। ফলন্ত আবাদি জমির পরিমাণ ২ হাজার ৮৩৫ হেক্টর জমি। লিচু উৎপাদন জমির পরিমাণ ২ হাজার ৮৩৫ হেক্টর। অফলন গাছ রয়েছে ৫৫ হাজার ৫৫০টি।

চাষিরা আরও জানান, কোভিড-১৯ জনিত সংকটকালের পরিবহন সংকটের জন্য অন্য জেলার কোনো মহাজন লিচুবাগান কিনতে ঈশ্বরদীতে আসছেন না। এ কারণে এ বছর চাষিরা আর্থিকভাবে চরম ক্ষতির মধ্যে পড়বেন।

সাহাপুর ইউনিয়নের আওতাপাড়া গ্রামের লিচু চাষি কদম আলী বিশ্বাস জানান, তাঁর ৪০০ লিচুগাছে এবার ভালো ফলন হয়েছে। কিন্তু করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের কারণে তিনি একটি গাছও এ বছর বিক্রি করতে পারেননি।

মানিকনগর গ্রামের চাষি আসাদুল হক জানান, তাঁর বাড়িতে ১৫০টি লিচুগাছ রয়েছে। করোনার কারণে বাইরের কোনো পাইকারি ব্যবসায়ী না আসায় তিনি একটি গাছও বিক্রি করতে পারেননি।

ঢাকার পাইকারি লিচু ব্যবসায়ী মিজান উদ্দিন জানান, বাগান থেকে তুলে আনার পর লিচু এক দিনের বেশি রাখা যায় না। বৈশ্বিক মহামারী করোনা ভাইরাসের মধ্যে বড় ধরনের লোকসানের আশঙ্কায় তাঁরা এবার বাগান কেনা থেকে বিরত আছেন।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *