শক্তিশালী পাকিস্তানের বিপক্ষে বাজে ব্যাটিং প্রদর্শনীর পর বোলিংয়ের শুরুটা দুর্দান্তই ছিল বাংলাদেশের। ২৪ রানে প্রতিপক্ষের ৪ উইকেট তুলে নিয়ে বোলাররা দলকে দেখাচ্ছিলেন জয়ের আশাও। যদিও ছন্দটা শেষ পর্যন্ত ধরে রাখতে পারলেন না মুস্তাফিজ-শরিফুলরা। তীরে এসে তরী ডুবল স্বাগতিকদের। গতকাল মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে প্রথম টি২০-তে অতিথিদের কাছে ৪ উইকেটে হেরে টি২০ সিরিজ শুরু করল বাংলাদেশ। আজ একই মাঠে একই সময় সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচ। সিরিজে টিকে থাকতে আজ জিততেই হবে বাংলাদেশকে।
টপ অর্ডারের ব্যর্থতায় ৭ উইকেট হারিয়ে ১২৭ রান সংগ্রহ করে বাংলাদেশ। টি২০ বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে গুরুত্বপূর্ণ সময়ে ক্যাচ ছেড়ে সমালোচিত পেস বোলার হাসান আলী নিজেকে প্রমাণে মরিয়া ছিলেন। খুব একটা সময় নিলেন না। পরের ম্যাচেই তিনি নায়ক। গতকাল বাংলাদেশের বিপক্ষে ২২ রানে ৩ উইকেট শিকার করে পাকিস্তানের জয়ের ভিতটা গড়ে দেন এ ডানহাতি বোলার। তিন রানের মাথায় ওপেনার মোহাম্মদ নাইমকে ফিরিয়ে তিনি যে ধাক্কাটা দিয়েছেন বাংলাদেশকে, সেই ক্ষত পুরোপুরি আর কাটিয়ে উঠতে পারেননি মাহমুদউল্লাহ ও তার সতীর্থরা।
অবশ্য স্বল্প পুঁজি নিয়েও এক সময়ে জয়ের আশা জাগিয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু শেষ হাসিটা হাসল পাকিস্তানিরাই। শেষদিকে ছোট্ট কিন্তু কার্যকর ইনিংস খেলে ব্যবধান গড়ে দেন শাদাব খান ও মোহাম্মদ নওয়াজ। তাদের ব্যাটে ভর করেই শেষ ১৮ বলে ৩২ রান তোলার চ্যালেঞ্জে জয়ী হয় পাকিস্তান, তাও জয় আসে ৪ বল বাকি থাকতে। গতকালের এ জয়ে তিন ম্যাচের সিরিজে ১-০-তে এগিয়ে গেল সফরকারীরা।
শেষ ৩ ওভারে পাকিস্তানের প্রয়োজন ছিল ৩২ রান। সম্ভাবনা ভালোভাবেই বেঁচে ছিল বাংলাদেশের। কিন্তু শেষদিকে প্রত্যাশা মেটাতে পারেননি মুস্তাফিজুর রহমান ও শরিফুল ইসলাম। ১৮ ও ১৯তম ওভারে দুই বাঁহাতি পেসারই দেন ১৫ রান করে। শেষ ওভারে পাকিস্তানের লাগে ২ রান। পুরো ইনিংসে বল না পাওয়া আমিনুল ইসলাম বিপ্লবকে শেষ ওভার করতে নিয়ে আসেন মাহমুদউল্লাহ। প্রথম বল ডট দিলেও দ্বিতীয় বল সীমানা ছাড়া করেন শাদাব খান। তাতে পাকিস্তানের স্কোর দাঁড়ায় ১৯.২ ওভারে ৬ উইকেটে ১৩২ রান।
মূলত ১৫ বলে ৩৬ রানের জুটিতে ব্যবধান গড়ে দেন শাদাব ও নওয়াজ। ছক্কায় ম্যাচ শেষ করা শাদাব করেন ১০ বলে ২১ ও নওয়াজ করেন ৮ বলে ১৮। দুজনেরই ইনিংসে দুই ছক্কার পাশে একটি চার।
বাংলাদেশের মতো দ্রুত উইকেট হারিয়ে শুরুতেই চাপে পড়ে পাকিস্তান। পাওয়ার প্লের ৬ ওভারে ২৮ রান তুলতেই ৪ উইকেট হারায় দলটি। মোহাম্মদ রিজওয়ান ১১, বাবর আজম ৮; হায়দার আলী শূন্য ও ডাক মেরে রান আউটের শিকার হয়ে প্যাভিলিয়নে ফেরেন শোয়েব মালিক। কিন্তু পঞ্চম উইকেটে ফখর জামান ও খুশদিল শাহের ৫৬ রানের জুটি পাকিস্তানকে চাপমুক্ত করে। দলীয় ৮০ রানের মাথায় তাসকিনের বল ফখরের ব্যাটের কানায় লেগে সোহানের তালুবন্দি হলে এ জুটি ভাঙে। তখন পাকিস্তানের প্রয়োজন ৩৪ বলে ৪৮ রান। ৩৬ বলে ৩৪ রানের দায়িত্বশীল ইনিংস খেলেন ফখর। ৯৬ রানের মাথায় ফেরেন খুশদিলও। শরিফুল ইসলামের বাইরের বল কানায় লেগে এবারো সোহানের হাতে ক্যাচ। ৩৫ বলে ৩৪ রান আসে খুশদিলের ব্যাট থেকে। কিন্তু শাদাব-নওয়াজের ঝড়ো ইনিংসে সব হিসাব বদলে যায়।
বাংলাদেশের হয়ে তাসকিন ৪ ওভারে ৩১ রানে ২টি, ৪ ওভারে ২৬ রান দিয়ে মুস্তাফিজুর ১টি ও মেহেদী হাসান ৪ ওভারে ১৭ রানে ১টি উইকেট নেন।
এর আগে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে ৪.৪ ওভারে ১৫ রান তুলতেই টপ অর্ডারের ৩ ব্যাটারকে হারায় স্বাগতিকরা। দুই ওপেনার নাইম শেখ ও সাইফ হাসান দুজনই ব্যক্তিগত ১ রান করে সাজঘরে ফেরেন। ওয়ান ডাউনে নামা নাজমুল হাসান শান্ত করেন ৭ রান। এ ব্যর্থতায় পাওয়ার প্লেতে বাংলাদেশের স্কোরবোর্ডে জমা হয় ২৫ রান! যাতে ছিল মাত্র একটি চারের বাউন্ডারি! চারে নামা আফিফ হোসেনই বাংলাদেশকে প্রথম বাউন্ডারির মুখ দেখান। চতুর্থ উইকেটে মাহমুদউল্লাহ-আফিফ হাল ধরার চেষ্টা করলেও দলীয় ৪০ রানের মাথায় ভাঙে এ জুটি। ১১ বলে রিয়াদ ফেরেন ৬ রান করে। দলকে সম্মানজনক সংগ্রহের ভিত গড়ে দেয়া আফিফ ৩৪ বলে ৩৬ রানের ইনিংস খেলেন। পরে নুরুল হাসান সোহানের ২২ বলে ২৮, মেহেদী হাসানের ২০ বলে ৩০ রানে ভর করে ১২৭ রান তোলে বাংলাদেশ। সফরকারীদের হয়ে হাসান আলী ৩টি ও ওয়াসিম জুনিয়র ২টি উইকেট নেন।
হার শেষে বাংলাদেশ দলনায়ক মাহমুদউল্লাহ বলেছেন, আমরা যখন টস জিতে ব্যাটিং নেই তখন উইকেট ভালোই মনে হচ্ছিল, যদিও পরে বোলাররাও এখানে সুবিধা পেয়েছে। স্কোরটা ১২৭-এর জায়গায় ১৪০ হলেই ভালো হতো। আমরা দ্রুত কিছু উইকেট নিতে চেয়েছিলাম, বোলাররা সেটি করেছেও। তাসকিন, ফিজ, মেহেদী দারুণ ছিল। আমরা খুব কাছে ছিলাম, কিন্তু তাদের শেষ দুই ব্যাটারকে কৃতিত্ব দিতে হবে। আশা করি আগামীকাল (আজ) আমরা আরো ভালো পরিকল্পনা নিয়ে হাজির হব।