যুক্তরাষ্ট্রের পর জার্মানি বৈশ্বিক ই-কমার্স জায়ান্ট অ্যামাজনের দ্বিতীয় শীর্ষ বাজার। নভেল করোনাভাইরাস (কভিড-১৯) অতিমারীর সময়ে দেশটিতে বেশ ভালো ব্যবসা করতে সক্ষম হয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। কিন্তু এ সময়ে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে থার্ড পার্টি ব্যবসায়ীদের কোণঠাসা করার অভিযোগ উঠেছে। এ কারণে দেশটির অ্যান্টিট্রাস্ট অথরিটি এখন মার্কিন খুচরা বিক্রয় প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে তদন্তে নেমেছে। খবর রয়টার্স।
অ্যামাজনের সঙ্গে থার্ড পার্টি ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলোর সম্পর্ক কেমন সেটি যাচাই করার জন্য এবং তাদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ খতিয়ে দেখার জন্যই এ তদন্ত করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে জার্মানির পর্যবেক্ষক প্রতিষ্ঠান ফেডারেল কার্টেল অফিস। প্রতিষ্ঠানটির সভাপতি আন্দ্রিস মুন্ডেট বলেন, বাজারে পণ্যের দাম নির্ধারণের ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের কীভাবে অ্যামাজন প্রভাবিত করছে সেটি আমরা তদন্ত করছি।
অ্যামাজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ, মহামারী শুরু হওয়ার প্রথম কয়েক মাসে জার্মানির বেশির ভাগ দোকান বন্ধ ছিল। এর ফলে নিত্যপণ্য কেনাকাটায় ক্রেতারা সে সময় অনলাইনের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। আর এ সময়ে অ্যামাজন বেশকিছু ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে পণ্যের উচ্চমূল্য ধরার অভিযোগ এনে ব্লক করে দেয়।
সম্প্রতি দেশটির একটি জাতীয় দৈনিককে দেয়া বক্তব্যে কার্টেল প্রধান জানান, অ্যামাজন জার্মানিতে পণ্যের দাম নির্ধারণের কর্তৃপক্ষ বা নিয়ন্ত্রক নয়। এমন অভিযোগ ওঠার পরই কার্টেল অফিস খুচরা বিক্রয় প্রতিষ্ঠানটিকে এ বিষয়ে তথ্য দিয়ে সহযোগিতার অনুরোধ জানায়। পরে তাদের থেকে প্রাপ্ত বিবৃতি ও তথ্য যাচাই-বাছাই করতে থাকে প্রতিষ্ঠানটি।
তবে অ্যামাজনের একজন নারী মুখপাত্র বলছেন, কোম্পানির পলিসি এমনভাবে তৈরি করা, যেন তাদের পার্টনাররা প্রতিযোগিতামূলক মূল্য পেতে পারে। অ্যামাজনের বিক্রয় পার্টনাররা মূলত তাদের পণ্যের দাম আমাদের স্টোরে নির্ধারণ করে দেন। কিন্তু আমাদের তৈরীকৃত সিস্টেম সেটিকে যাচাই করে অতিরিক্ত দাম নির্ধারণের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে থাকে। ফলে যারা এ সমস্যার মুখোমুখি হয়েছেন, তারা ব্যবসায়িক স্বার্থে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন।
অ্যামাজনের দ্বিতীয় শীর্ষ বাজার হলো জার্মানি। দেশটিতে মার্কিন প্রতিষ্ঠানটির ১৩টি লজিস্টিক সেন্টারে প্রায় ১৩ হাজার পূর্ণকালীন কর্মী রয়েছে। এছাড়া কয়েক হাজার খণ্ডকালীন কর্মীও রয়েছে। তবে দেশটিতে ২০১৩ সালের আগ পর্যন্ত অ্যামাজনের সঙ্গে ব্যবসা করছে এমন প্রতিষ্ঠানগুলোকে কম দামে অন্যান্য অনলাইনের মাধ্যমে পণ্য বিক্রি না করতে বাধ্য করা হতো, যা দেশটির পর্যবেক্ষক প্রতিষ্ঠানের নীতিবিরোধী। এসব কারণেই দীর্ঘ সাত মাস অ্যামাজনের বিরুদ্ধে তদন্তের পর গত বছর কার্টেল অফিসের সঙ্গে থার্ড পার্টি ব্যবসাসংক্রান্ত একটি চুক্তিতে পৌঁছায় জায়ান্ট প্রতিষ্ঠানটি।
অ্যামাজন বিশ্বের শীর্ষ খুচরা পণ্য বিক্রেতা ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান। যার বাজার মূল্য ১ দশমিক ৫ ট্রিলিয়ন ডলারের বেশি। তবে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী সমালোচনাও কম নেই। প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে অন্যতম অভিযোগ হলো মার্কেটপ্লেস ও খুচরা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান হওয়ার কারণে এটি ছোট খুচরা ব্যবসায়ীদের ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত করছে।
কভিড-১৯ মহামারীর বিস্তার ঠেকাতে ঘোষিত লকডাউনের মধ্যে হাতে গোনা যে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায় উল্লম্ফন দেখা গেছে অ্যামাজন তার মধ্যে অন্যতম।
নভেল করোনাভাইরাস সংকটের কারণে বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক অবস্থা বেশ খারাপের দিকে গেলেও অ্যামাজন প্রতিষ্ঠাতার ব্যক্তিগত নিট সম্পদ বেড়েছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে অ্যামাজনের বিক্রি বেড়েছে ৪০ শতাংশ, যা প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) জেফ বেজোসের নিট সম্পদ বৃদ্ধির প্রধান কারণ।
অন্যদিকে অ্যাপলের আইফোন ও অন্যান্য হার্ডওয়্যার বিক্রির হারও বেড়েছে। পাশাপাশি ফেসবুকসহ বৈশ্বিক সোস্যাল মিডিয়া প্রতিষ্ঠানটি নিয়ন্ত্রিত হোয়াটসঅ্যাপ ও ইনস্টাগ্রামে মানুষের অন্তর্ভুক্তি ১৫ শতাংশ বেড়েছে। একই সঙ্গে এ প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে বিশ্বের অনেক দেশে অ্যান্টিট্রাস্ট আইন ভঙ্গের অভিযোগে তদন্ত চলছে।
অ্যামাজন, অ্যাপল ও ফেসবুকের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে বাজারে নিজেদের ক্ষমতার অপব্যবহার করার অভিযোগ উঠেছে। এমন অভিযোগের জেরে সম্প্রতি মার্কিন কংগ্রেসের এক শুনানিতে এসব প্রযুক্তি জায়ান্টের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাদের ‘শক্ত কথা’ শুনিয়েছেন খোদ মার্কিন আইনপ্রণেতারা।