জামানতের বিকল্প হবে কৃষি কার্ড

দুই দশকের ব্যবধানে দেশে ব্যাপক হারে বেড়েছে কৃষিঋণের পরিমাণ। তবে ব্যাংকগুলোর প্রদত্ত মোট ঋণের অনুপাতে কৃষিঋণের পরিমাণ কমেছে। এক্ষেত্রে কৃষকদের প্রাতিষ্ঠানিক ঋণসহায়তা বৃদ্ধিতে আরো জোর দিতে হবে। সেজন্য জামানত হিসেবে কৃষি কার্ড ও কৃষি বিভাগের প্রত্যয়নপত্রে গুরুত্বারোপ করা যেতে পারে। কৃষিঋণ ও কভিড-১৯-এর প্রণোদনার অর্থ দ্রুত কৃষকের মাঝে পৌঁছাতে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।

কৃষকদের প্রাতিষ্ঠানিক ঋণসহায়তা বৃদ্ধির বিষয়ে গতকাল সকালে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মেসবাহুল ইসলাম। কৃষি মন্ত্রণালয় আয়োজিত এ সভা সঞ্চালনা করেন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (পিপিসি) মো. রুহুল আমিন তালুকদার। কৃষকদের প্রাতিষ্ঠানিক কৃষিঋণ সহায়তা বিশেষ করে প্রান্তিক কৃষকের কাছে ঋণসুবিধা কীভাবে আরো বেশি করে পৌঁছে দেয়া যায় তা নিয়ে আলোচনা হয়।

সভায় জানানো হয়, ২০০১ সালে কৃষিঋণ বিতরণ লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩ হাজার ২০ কোটি টাকা, যা ২০২০-২১ অর্থবছরে ২৬ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। তবে ব্যাংকগুলো প্রদত্ত মোট ঋণের অনুপাতে কৃষি ঋণের পরিমাণ কমেছে। ২০০১ সালে মোট ঋণের ৪ দশমিক ৮ শতাংশ ছিল কৃষিঋণ, যা কমে ২০২০-২১ অর্থবছরে ২ দশমিক ৬ শতাংশে নেমেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, চলমান অর্থবছরে মোট কৃষিঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ২৬ হাজার ২৯২ কোটি টাকা। এর মধ্যে জানুয়ারি পর্যন্ত বিতরণ হয়েছে ১৪ হাজার ১৪৮ কোটি টাকা। এছাড়া ৫ হাজার কোটি টাকার বিশেষ প্রণোদনার মধ্যে এখন পর্যন্ত ৩ হাজার ৫১৪ কোটি টাকা বিতরণ হয়েছে।

সভায় জানানো হয়, কৃষকরা কতটুকু প্রাতিষ্ঠানিক কৃষিঋণ পান, সে বিষয়েও ভিন্ন তথ্য পাওয়া যায়। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাবমতে, ২৬ শতাংশ কৃষক প্রাতিষ্ঠানিক কৃষিঋণ সুবিধা পান। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক খাদ্যনীতি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ইপ্রি) ২০১৫ সালের হিসাব অনুযায়ী মাত্র ১২ দশমিক ৫ শতাংশ কৃষক প্রাতিষ্ঠানিক কৃষিঋণ সুবিধা পান।

গতকালের সভায় কৃষি ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব মো. নাসিরুজ্জামান, বিএডিসির চেয়ারম্যান মো. সায়েদুল ইসলাম, কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (সম্প্রসারণ) মো. হাসানুজ্জামান কল্লোল, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আসাদুল্লাহ, কৃষি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, বাংলাদেশ ব্যাংকের কৃষিঋণ বিভাগের মহাব্যবস্থাপক প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

সভায় বক্তারা কৃষিঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে জামানতের পরিবর্তে ‘কৃষি কার্ড’ বা স্থানীয় পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তাদের ‘প্রত্যয়নপত্র’কে আমলে নেয়ার কথা বলেন। পাশাপাশি কৃষিঋণ বিতরণের পরিসংখ্যানকে ঢেলে সাজিয়ে এর সঙ্গে শস্য, কৃষক শ্রেণী ও অঞ্চলভিত্তিক এবং মত্স্য ও প্রাণিসম্পদ খাতে কৃষিঋণ বিতরণের পরিসংখ্যান প্রণয়নের ওপরও গুরুত্বারোপ করা হয়।

কৃষি সচিব মো. মেসবাহুল ইসলাম বলেন, কৃষকের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক ঋণসুবিধা সহজ করতে পারলে তাদের চাহিদা পূরণ হবে। ফলে কৃষির পুরো সম্ভাবনা কাজে লাগিয়ে উৎপাদন বৃদ্ধি করা যাবে।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *