জাতীয় বাজেট: বাংলাদেশের প্রতি ইঞ্চি জমি চাষের আওতায় আনার সরকারি চিন্তার প্রতিফলন বাজেটে কতটা পড়েছে?

বাংলাদেশে করোনাভাইরাস দুর্যোগে অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার ক্ষেত্রে প্রতি ইঞ্চি জমি চাষের আওতায় আনার কথা বলা হলেও প্রস্তাবিত বাজেটে তার প্রতিফলন নেই বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদের অনেকে।

কৃষি নিয়ে কাজ করেন, তাদের অনেকে বলেছেন, সরকার কৃষিখাত অগ্রাধিকার বললেও আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে বরাদ্দ সেভাবে বাড়েনি এবং প্রান্তিক বা ক্ষুদ্র কৃষকদের স্বার্থ বিবেচনা করা হয়নি।

তবে সরকার বলেছে, কৃষিখাতে ভর্তুকি বহাল রাখার পাশাপাশি শুধু কৃষিতেই ১৫হাজার কোটি টাকার বেশি বরাদ্দ রেখে নতুন নতুন প্রকল্প নেয়া হচ্ছে।

করোনাভাইরাস মহামারিতে রপ্তানিখাতসহ অর্থনীতির বিভিন্ন ক্ষেত্র যে অনিশ্চয়তায় পড়েছে, সেই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ সরকার কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়ার কথা বলছে।

সেজন্য প্রতি ইঞ্চি জমি চাষের আওতায় আনার তাগিদ দেয়া হচ্ছে।

কৃষিজমি কেউ ফেলে রাখলে তা সরকার নিয়ে নেবে, এমন হুঁশিয়ারিও দেয়া হয়েছে।

কিন্তু প্রস্তাবিত বাজেটে কৃষিখাত নিয়ে সরকারের চিন্তার প্রতিফলন কতটা হয়েছে-এই প্রশ্ন অনেকে তুলেছেন।

কৃষি নিয়ে হৃদয়ে মাটি ও মানুষ নামের জনপ্রিয় টেলিভিশন অনুষ্ঠানের নির্মাতা সাইখ সিরাজ বলেছেন, কৃষি নিয়ে সরকারের চিন্তার প্রতিফলন প্রস্তাবিত বাজেটে সেভাবে নাই।

“কৃষি নিয়ে বাজেটের ঐ ফোকাসটা সেভাবে নেই। শুধু বলে ক্ষান্ত হলেই চলবে না যে, আমার কোন জমি খালি রাখা যাবে না। এর জন্য একটা সুষ্ঠু পরিকল্পনা দরকার। ফেজ বাই ফেজ পরিকল্পনা বাজেটে নেই। প্রান্তিক চাষীদের ব্যাপারেও সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা সেভাবে দেখা যাচ্ছে না।”

তিনি মনে করেন, কৃষিতে তরুণদের আকৃষ্ট করতে আইওটি ভিত্তিক কোন পরিকল্পনার কথাও বলা হয়নি।

কৃষিখাতে ভর্তুকি বাবদ এবার সাড়ে নয় হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।

এই ভর্তুকিসহ শুধু কৃষিখাতের জন্য ১৫হাজার কোটি টাকার বেশি বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে।

এবার ধান রোপন করা, ধানা কাটা, এবং মাড়াইয়ের জন্য যন্ত্র কিনতে ঋণ সহায়তা দেয়ার বিষয়ে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।

এই পদক্ষেপকে ইতিবাচক হিসাবে দেখছেন অর্থনীতিবিদ ও গবেষক ড: নাজনীন আহমেদ।

তবে তিনি বলেছেন, কৃষকের জন্য এখন বড় সমস্যা হচ্ছে পণ্য সরবরাহ ব্যবস্থাপনা। এই সরবরাহ চেইন বা ব্যবস্থাপনা উন্নত করার ব্যাপারে প্রস্তাবিত বাজেটে কোন প্রণোদনা বা বক্তব্য নেই বলে তিনি উল্লেখ করেছেন।

“কৃষিখাতে যা দরকার, তার একটা প্রচেষ্টা এই বাজেটে দেখা যাচ্ছে। বিশেষ করে দীর্ঘদিন ধরে কৃষি উৎপাদন বাড়ানোর জন্য এই খাতের যন্ত্রপাতি আমদানির শুল্ক কমানো হয়েছে। এটা ভাল দিক। তবে কৃষিপণ্য সরবরাহ চেইনের সাথে জড়িতদের জন্য প্রণোদনা থাকলে ভাল হতো।”

কৃষিমন্ত্রী ড: আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, এবার করোনাভাইরাস দুর্যোগের অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে সীমাবদ্ধতার মধ্যে কৃষিখাতে যথেষ্ট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।

তিনি বলেছেন, কৃষিখাতে নতুন কিছু প্রকল্প নেয়া হয়েছে, যেগুলো বাজেটে তুলে ধরা হয়নি।

“করোনাভাইরাসকে কেন্দ্র করে আমরা একটি প্রকল্প নিয়েছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যেটা বার বার বলছেন যে, আমরা এক ইঞ্চি জমিও খালি রাখবো না। আমাদের আঙিনাতেও প্রয়োজন হলে আমরা চাষাবাদ করবো বা বাড়ির ছাদে করবো।”

“এজন্য আমরা একটা প্রকল্প নিয়েছি। ১৪ এবং ২০ ফুট জায়গায় সবজি চাষ করার জন্য আমরা মডেল হিসাবে একটা টেকনোলজি উদ্ভাবন করেছি। আগ্রহীদের আমরা তা দেবো। এর সাথে তাদের সার এবং বীজ দেয়া হবে বিনামূল্যে। এই প্রকল্পের বিষয়ও আমরা বাজেটে উল্লেখ করিনি।”

মন্ত্রী ড: রাজ্জাক আরও জানিয়েছেন, এখন বরাদ্দ যাই করা হোক না কেন, করোনাভাইরাস দুর্যোগের প্রেক্ষাপটে কৃষি ও স্বাস্থ্য খাতে নতুন প্রকল্পের জন্য বিশেষ বরাদ্দের পরিকল্পনাও রাখা হয়েছে।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *