বিটলসের অপেক্ষাকৃত নীরব সদস্যের নাম জর্জ হ্যারিসন। তিনি ইতিহাসের সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যান্ডটির প্রতিষ্ঠাতা সদস্যদের একজন। অবশ্য শুরুটা হয়েছিল জন লেননের হাত ধরে। ১৬ বছর বয়সে তিনি শুরু করেছিলেন একটা ফোক ধারার ব্যান্ড। লেননের সঙ্গে যোগ দেন ১৫ বছরের পল ম্যাকার্টনি। আর পলের হাত ধরে আসেন তার বন্ধু জর্জ হ্যারিসন। অবশ্য ব্যান্ডটির নাম তখনো বিটলস হয়নি।
হ্যারিসন ও ম্যাকার্টনি দুজনই তখন কিশোর। মিউজিকের ভক্ত। তবে নিজেদের ব্যান্ড করার স্বপ্ন পূরণ হয়নি লেননের সেই ব্যান্ড গঠনের আগ পর্যন্ত। লেননের ব্যান্ড শুরুতে লিভারপুল এলাকায় পরিচিতি পেয়েছিল। তখন দলটির নাম ছিল ব্ল্যাকজ্যাকস। কিছুদিন পর এর নাম হয় দ্য কোয়ারিমেন। এ নামে ব্যান্ডটি যাত্রা করে ভারতের সিপাহি বিদ্রোহের ঠিক ১০০ বছর পর—১৯৫৭ সালে। এ বছর মার্চে জন লেনন তার কোয়ারি ব্যাংক হাইস্কুলের বন্ধুদের নিয়ে একটা দল গড়ার কাজ শুরু করেন। লেনন দলে যোগ দিতে আমন্ত্রণ জানান ম্যাকার্টনিকে। এ নিয়ে তাদের মধ্যে আলাপ হয়েছিল চার্চের এক গণজমায়েতে। এরপর পল দেখা করেন হ্যারিসনের সঙ্গে এবং তাকে দলে ভেড়ান।
দ্য কোয়ারিমেনের ড্রামার ছিলেন কলিন হ্যান্টন। তিনি বিবিসিকে বলেছেন পল ম্যাকার্টনি ও জর্জ হ্যারিসনের সাক্ষাৎ প্রসঙ্গে: ‘পল আর হ্যারিসন সাক্ষাৎ করেছিলেন এক ডাবল ডেকার বাসের দ্বিতীয় তলায়। এরপর আমরা জর্জের বাসায় গিয়ে অনেকগুলো ইনস্ট্রুমেন্ট বাজাই এবং তার মায়ের সঙ্গেও আমাদের কথা হয়। তবে ওর বাবার সঙ্গে আমাদের তখন সাক্ষাৎ হয়নি। আমরা বেশির ভাগ সময় পলের বাসায়ই বাজাতাম।’
জর্জ হ্যারিসন নিজেও এক সাক্ষাত্কারে স্মৃতিচারণ করে বলেছিলেন, ‘সেদিন এক বাসযাত্রায় পল ম্যাকার্টনির সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়েছিল। সে আর আমি ছিলাম একই স্কুলের ছাত্র। তাই আমাদের ইউনিফর্ম ও যাত্রাপথ একই ছিল। তাই বাসেই আলাপ জমে গিয়েছিল।’
অন্যদের তুলনায় হ্যারিসনের বয়স কম ছিল। লেনন, পল আর হ্যারিসন একত্রে তাদের প্রথম রিহার্সেল করেছিলেন জর্জের বাড়িতে। তবে কলিন জানাচ্ছেন, বয়সে সবার ছোট হলেও সেই প্রাথমিক সময়ে ব্যান্ডে তার বড় অবদান ছিল। জর্জ আমার চেয়ে দুই বছরের ছোট ছিল। সে ছিল আমাদের গ্রুপের ‘শিশু’। তবে তার একটা বড় গিটার ছিল। তার গিটারটা ছিল খুব দারুণ। শুরুতে জন লেনন একটু দ্বিধায় ছিলেন হ্যারিসনকে দলে নেবেন কিনা। কারণটা জর্জের কম বয়স। কিন্তু তার গিটার বাজানো দেখে লেনন সন্তুষ্ট হয়েছিলেন।
বিটলস ভেঙে যাওয়ার পরও পল ম্যাকার্টনি ও জর্জ হ্যারিসনের মধ্যে বন্ধুত্ব অটুট ছিল। ২০২০ সালে জর্জ হ্যারিসনকে নিয়ে পল নিউইয়র্ক টাইমসকে বলেছিলেন, ক্যান্সারে আক্রান্ত জর্জ চিকিৎসার জন্য বিভিন্ন জায়গায় যাচ্ছিলেন, কিন্তু কোনো লাভ হচ্ছিল না। একদিন তিনি জর্জকে জিজ্ঞেস করেন, আমরা কি শান্ত হয়ে কোথাও বসতে পারি? জবাবে জর্জ বলেছিলেন, ‘অবশ্যই। স্পেক হলে। চলো স্পেক হলে যাই।’ এখানেই তাদের শুরুর দিনগুলোর অনেক রিহার্সেলের স্মৃতি জড়িয়ে ছিল। ২০০১ সালে জর্জ হ্যারিসন ৫৮ বছর বয়সে মারা যান।