চুক্তি কার্যকরে নাগোর্নো-কারাবাখে শান্তিরক্ষী বাহিনী মোতায়েন রাশিয়ার

বিরোধপূর্ণ অঞ্চল নাগোর্নো-কারাবাখকে কেন্দ্র করে গত ছয় সপ্তাহ ধরে যুদ্ধে লিপ্ত আর্মেনিয়া ও আজারবাইজান। বিবদমান দেশ দুটির মধ্যকার সংঘর্ষ থামাতে গতকাল রাশিয়ার মধ্যস্থতায় নতুন করে একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। এছাড়া যুদ্ধবিরতি কার্যকরের লক্ষ্যে গতকাল সেখানে শান্তিরক্ষী বাহিনীও মোতায়েন করেছে রাশিয়া। খবর এএফপি ও রয়টার্স।

যুদ্ধবিরতি চুক্তি অনুসারে, গত মাস দেড়েকের সংঘর্ষে আজারবাইজান বিরোধপূর্ণ অঞ্চলটির যে অংশ দখল করে নিয়েছে, তা তারা রেখে দেবে। এর মধ্যে রয়েছে শুশা শহর, যাকে আর্মেনীয়রা শুশি নামে ডাকে। এছাড়া চুক্তির অধীনে আর্মেনীয় বাহিনীকে আগামী ১ ডিসেম্বরের মধ্যে আরো কয়েকটি অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ ছেড়ে দিতে হবে।

রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, ‘এ চুক্তি বিবদমান দুই দেশকে একটি দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক সমঝোতায় পৌঁছতে সহায়তা করবে। তাদের বিবাদের কারণে হাজার হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছে, ঘরছাড়া হয়েছে আরো অনেকে। দেশ দুটির মধ্যকার সংঘর্ষের কারণে আরো বিস্তীর্ণ অঞ্চল যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।’

রাশিয়ার মধ্যস্থতায় এ যুদ্ধবিরতিতে আজারবাইজান বেশ খুশি। দেশটির রাজধানী বাকুতে এর বহিঃপ্রকাশও দেখা গেছে। শহরটির অধিবাসীরা আলজেরিয়ার জাতীয় পতাকা হাতে নিয়ে রাস্তায় নেমে আনন্দ প্রকাশ করেছেন।

কিন্তু আর্মেনীয়রা এ চুক্তিতে খুশি হতে পারেনি। দেশটির রাজধানী ইয়েরেভানে তারা সরকারি ভবনগুলোর সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তারা বলছেন, সরকার যে চুক্তি করেছে, তা আসলে আর্মেনীয়দের সঙ্গে প্রতারণার শামিল। বিক্ষোভকারীদের অনেকে আর্মেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী নিকোল পাশিনিয়ানের পদত্যাগও দাবি করেন।

তবে প্রধানমন্ত্রী এতে নিজের কোনো দোষ দেখছেন না। পাশিনিয়ান দাবি করেছেন, আর্মেনিয়ার সেনাবাহিনীর চাপেই যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে স্বাক্ষর করতে বাধ্য হয়েছেন তিনি। সেনাবাহিনী বলেছে, নাগোর্নো-কারাবাখে তাদের সব সামরিক পদক্ষেপ আপাতত বন্ধ রয়েছে এবং সেখানকার পরিস্থিতি এখন শান্ত। এদিকে আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভের মতে, চুক্তিতে সম্মত হওয়া ছাড়া পাশিনিয়ানের সামনে আসলে আর কোনো পথই খোলা ছিল না।

আন্তর্জাতিকভাবে নাগোর্নো-কারাবাখ আজারবাইজানেরই একটি অংশ হিসেবে স্বীকৃত। তবে ১৯৯০-৯৪ সালের যুদ্ধের পর থেকেই জায়গাটির নিয়ন্ত্রণ হারায় আজারবাইজান। এরপর থেকে অঞ্চলটি আর্মেনীয় জাতিগোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। তবে সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোয় আজারবাইজানের সশস্ত্র বাহিনী কিছু অংশের নিয়ন্ত্রণ পুনরুদ্ধার করেছে।

আজারবাইজান ও আর্মেনিয়ার মধ্যে সর্বশেষ চুক্তি এটাই প্রমাণ করে যে, এ অঞ্চলে রাশিয়ার প্রভাব কতটা বেশি। এ অঞ্চলকে মস্কো ‘নিজেদের বাড়ির পেছনের উঠান’ বলেই মনে করে। আর্মেনিয়ার সঙ্গে রাশিয়ার একটি সামরিক চুক্তি রয়েছে। সেখানে একটি সামরিক ঘাঁটিও রয়েছে মস্কোর। সাম্প্রতিক সময়ে তুরস্ক সেখানে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা চালালেও রাশিয়ার তত্পরতার সঙ্গে তারা ঠিক পেরে উঠছে না।

রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন জানিয়েছেন, তাদের শান্তিরক্ষী বাহিনী নাগোর্নো-কারাবাখের সীমানাজুড়ে এবং আর্মেনিয়া ও অঞ্চলটির করিডোরে মোতায়েন থাকবে। এ বাহিনী

অন্তত পাঁচ বছর সেখানে থাকবে। এর অর্থ হলো, অঞ্চলটিতে রাশিয়ার প্রভাব আরো দীর্ঘস্থায়ী হবে।

এর আগেও নাগোর্নো-কারাবাখ নিয়ে আর্মেনিয়া ও আজারবাইজানের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তি হলেও তা কার্যকর হতে না হতেই ভেঙে যায়। উভয় দেশই চুক্তি লঙ্ঘনের জন্য পরস্পরের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে এসেছে।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *