নভেল করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছেন বলে ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘোষণা এবং পরিশেষে তার হাসপাতালে ভর্তির খবর যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে এক বিশেষ সতর্কবার্তা দেয়। যদিও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে গুরুতর অসুস্থ হয়েছেন এমন রেকর্ড থেকে এখনো বেশ দূরে ট্রাম্প।
জর্জ ওয়াশিংটন থেকে শুরু করে জর্জ বুশ—যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্টদের রোগব্যাধি, অসুস্থতা কিংবা মৃত্যুর ইতিহাসে চোখ বুলিয়ে নেয়া যাক:
সংবিধানের ২৫তম সংশোধনী
যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের ২৫তম সংশোধনী আনতে হয়েছিল প্রেসিডেন্টের অসুস্থতার কারণে। সেই সংশোধনীবলেই কোলনের অসুখে পড়া প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ তার ভাইস প্রেসিডেন্ট ডিক চেনির হাতে ক্ষমতা দিতে পেরেছিলেন।
সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ কোলনের অসুস্থতায় পড়েছিলেন বলে বাধ্য হয়েই সংবিধানের ২৫তম সংশোধনী আনা জরুরি হয়ে পড়ে। এতে ২০০২ সালে ও ২০০৭ সালে সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা পড়েছিল চেনির কাঁধে।
অবশ্য একই কারণে সংবিধানে সংশোধনী আনা হয়েছিল ১৯৬৭ সালে রোনাল্ড রিগ্যানের সময়ও। তার কোলন থেকে ক্যান্সারের পলিপ অপসারণ করেছিলেন চিকিৎসকরা। সংক্ষিপ্ত সেই সময়ে তার ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হয়েছিল তখনকার ভাইস প্রেসিডেন্ট জর্জ হাওয়ার্ড ওয়াকার বুশের হাতে। রিগ্যান পরে বলছিলেন, সময়টা এতই সংক্ষিপ্ত ছিল যে তিনি মনে করেন না, এজন্য সংবিধান সংশোধনী আনা লাগত।
ইয়টে গোপন অস্ত্রোপচার
বিষয়টি যেন প্রকাশ্যে না আসে সেটি নিশ্চিত করতে ১৯৮৩ সালে এক বন্ধুর ইয়টে সমুদ্রে গিয়ে অস্ত্রোপচার করান সাবেক প্রেসিডেন্ট গ্রোভার ক্লিভল্যান্ড।
ওই সময় অর্থনৈতিক মন্দার মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল যুক্তরাষ্ট্র। প্রেসিডেন্টের অসুস্থতার খবর জনগণকে আরো বেশি আতঙ্কের মধ্যে ফেলে দিতে পারত। এ চিন্তা থেকে আমেরিকানদের আরো বেশি উত্কণ্ঠায় ফেলতে চাননি বলেই প্রেসিডেন্ট গোপনে তার অস্ত্রোপচার সেরেছেন। তিনি এ কাজে সফলই হন বলা যায়।
ওই অস্ত্রোপচারে ক্লিভল্যান্ডের শরীর থেকে টিউমার, পাঁচটি দাত ও বাঁ চোয়ালের একটি অংশ তুলে ফেলে দেন চিকিৎসকরা, পরে সেসব জায়গায় তার আরামের জন্য কৃত্রিম অঙ্গ স্থাপন করা হয়। অস্ত্রোপচার করা হয়েছিল নিউইয়র্কের তীরবর্তী কোনো এক জায়গায়।
স্প্যানিশ ফ্লু
মহামারীর কারণে ডুবতে বসেছেন কিংবা মহামারীকে পাত্তা না নিয়ে সমালোচিত হয়েছেন কিংবা পরিশেষে সংক্রমিত হয়েছেন, এমন প্রথম প্রেসিডেন্ট কিন্তু ট্রাম্প নন। ১৯১৯ সালের এপ্রিলে বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তি টানতে শান্তি আলোচনায় অংশ নিতে প্যারিসে গেলে স্প্যানিশ ফ্লুতে আক্রান্ত হন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন। প্রেসিডেন্টের স্বাস্থ্যের চরম অবনতি ঘটলেও তার প্রশাসন তা আড়াল করার সর্বাত্মক চেষ্টাই করেছে।
অসুস্থ হয়ে পড়েন জর্জ ওয়াশিংটন
১৭৯০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম প্রেসিডেন্ট জর্জ ওয়াশিংটন খারাপ একটি ফ্লুতে আক্রান্ত হলে চরম অনিশ্চয়তায় পড়ে যায় নবীন এ জাতিটি—প্রেসিডেন্ট যদি মারা যান, তবে কী ঘটবে তাদের ভাগ্যে। যদিও যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম প্রেসিডেন্ট ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে ওঠেন।
দুধ খেয়ে মৃত্যু
১৮৫০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে হিমায়িত দুধ ও প্রচুর পরিমাণে চেরি ফল খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন ও এর কয়েকদিন পর মারা যান তত্কালীন প্রেসিডেন্ট জেখরি টেইলর। তার মৃত্যুর জন্য দুধকেই দায়ী করা হয়েছিল। এএফপি