গত ১৫ বছরের মধ্যে ১০ বছরই আয়কর দেননি ট্রাম্প

চলতি সহস্রাব্দের শুরু থেকে ১৫ বছরের মধ্যে ১০ বছরই কোনো আয়কর দেননি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। গত দুই দশকে তার ব্যবসা সম্প্রসারিত হলেও কাগজে-কলমে বড় আকারের লোকসান দেখিয়ে আয়কর দেয়া থেকে বিরত থেকেছেন তিনি। এমনকি আইনের বিশেষ সুবিধা নিয়ে সরকারকে প্রদত্ত আয়কর সুদসহ ফেরত নিয়েছেন ট্রাম্প। রোববার নিউইয়র্ক টাইমসের একটি প্রতিবেদনে এমন বিস্ফোরক তথ্য উঠে এসেছে।

যে বছর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমেছিলেন, সেই ২০১৬ সালে এবং প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর হোয়াইট হাউজের প্রথম বছর ২০১৭ সালে ট্রাম্প মাত্র ৭৫০ ডলার করে আয়কর দিয়েছেন। ১৫ বছরের মধ্যে ১০ বছর আয়কর না দেয়ার পেছনে আয়ের চেয়ে লোকসান বেশি করাকে দায়ী করেছে ট্রাম্প ও তার প্রতিষ্ঠানগুলো।

আগামী নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈকিভাবে বেশ চাপের মুখে রয়েছেন ট্রাম্প। বেশির ভাগ জরিপেই তার পরাজয়ের সম্ভাবনা বেশি বলে জানাচ্ছে। ট্রাম্প কিংবা ট্রাম্প পরিবারের মালিকানাধীন অনেক কোম্পানি বড় অংকের লোকসান গোনায় বেশ চাপে রয়েছে তারা। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে এক দশক ধরে ইন্টারনাল রেভিনিউ সার্ভিসের (আইআরএস) সঙ্গে চলা মামলা। ট্রাম্পের ৭ কোটি ২৯ লাখ ডলার আয়কর রিফান্ডের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে আসছে আইআরএস। মামলা ট্রাম্পের বিপক্ষে গেলে ১০ কোটি ডলারেরও বেশি জরিমানা গুনতে হবে।

আইআরএস বলছে, ট্রাম্পের মালিকানায় শতকোটি ডলারের সম্পদ থাকা সত্ত্বেও সেগুলোর প্রকৃত মূল্য প্রকাশ করেননি তিনি।

দুই দশকেরও বেশি সময়ের আয়কর উপাত্ত হাতে এসেছে বলে দাবি যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী সংবাদপত্র নিউইয়র্ক টাইমসের। এর মধ্যে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালনের প্রথম দুই বছরের বিস্তারিত উপাত্ত রয়েছে।

তবে কর ফাঁকিসংক্রান্ত যে নথি নিউইয়র্ক টাইমসের হাতে এসেছে, তাকে ‘ভুয়া’ বলে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এ প্রতিবেদনকে ‘ভিত্তিহীন’ আখ্যায়িত করে ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, প্রকৃতপক্ষে আমি কর পরিশোধ করেছি। আপনারা দেখবেন, যখনই আমি ট্যাক্স রিটার্ন জমা দিয়েছি তখনই এটা অডিটে গেছে। অনেক দীর্ঘ সময় নিয়ে এগুলো অডিট হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, আইআরএস আমার সঙ্গে ভালো আচরণ করেনি, খুব বাজে আচরণ করছে।

ট্রাম্প অর্গানাইজেশনের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যালান গার্টেন নিউইয়র্ক টাইমসকে বলেন, সব না হলেও তথ্যগুলোর অধিকাংশই ভুল বলে মনে হচ্ছে। গত এক দশকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ব্যক্তিগত আয়কর হিসেবে কেন্দ্র সরকারকে কোটি কোটি ডলার দিয়েছেন। এর মধ্যে ২০১৫ সালে প্রার্থিতা ঘোষণার পর থেকে দেয়া কয়েক কোটি ডলারের ব্যক্তিগত আয়করও রয়েছে।

নিউইয়র্ক টাইমস বলছে, নিজের সম্পদ ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানসংক্রান্ত নথি প্রকাশ্যে না আনায় আইনি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। যদিও দেশটির আইন অনুযায়ী ট্রাম্প এ-সংক্রান্ত নথি প্রকাশ্যে আনতে বাধ্য নন, তবু ১৯৭০-এর দশকের পর তিনিই প্রথম মার্কিন প্রেসিডেন্ট, যিনি তার ট্যাক্স রিটার্ন জনসমক্ষে আনতে অনিচ্ছুক।

নিউইয়র্ক টাইমস বলছে, তারা এমন সূত্র থেকে ট্রাম্পের কর ফাঁকির তথ্য পেয়েছেন, যাদের এ-সংক্রান্ত জানার আইনানুগ অধিকার রয়েছে।

আগামী ৩ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন সামনে রেখে বুধবার অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে প্রথম প্রেসিডেন্সিয়াল ডিবেট। এ ডিবেটে রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের মুখোমুখি হবেন ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেন।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *