খরা ও করোনার মধ্যে লিচুর দাম ভাল হলেও বিক্রি নিয়ে চিন্তিত বাগান মালিকরা

আম-কাঠালের পাশাপাশি লিচু চাষও ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। মেহেরপুরের লিচুর কদর হিমসাগর আমের মতোই। মধুমাস জ্যেষ্ট। আছে খরা। তীব্র রোদে বইছে লু-হাওয়া। ভ্যাপসা গরমে ঘাম ছড়াচ্ছে আবহাওয়া। তারপরও রসালো ফল লিচু সবুজের মধ্যে লাল হয়ে ঝাঁকে ঝাঁকে পেকে আছে। এখন লিচু পাড়া এবং বাজারজাত করা নিয়ে ব্যাস্ত সময় পার করছেন বাগান মালিকরা। কিন্তু খরা ও করোনার মধ্যে লিচুর দাম ভাল হলেও বিক্রি নিয়ে চিন্তিত বাগান মালিকরা। কারণ বাইরের ব্যবসায়ীদের আগমন কম এবার।

লিচু ক্ষণকালীন ফল। তবে আগাম উৎপাদন ও অধিক দামের কারণে লিচু চাষে কৃষকরা অধিক উৎসাহী হয়ে পড়েছে। শুরুতেই মেহেরপুর জেলায় ৩০০ হেক্টর জমিতে লিচুর চাষ হত বর্তমানে ৬৮০ হেক্টর জমিতে লিচুর চাষ হচ্ছে । এই জেলায় উৎপাদিত লিচু দেশী ও আটি জাতের (গুটি লিচুও বলা হয়ে থাকে) চাষ আছে। সাধারণত বোম্বাই ও মোজাফফরাবাদ লিচুর স্থানীয় জাতগুলোই এই নামে পরিচিত। তবে প্রখ্যাত লিচুর মধ্যে আতা বোম্বাই সর্বশেষ্ঠ। কারণ মাংসল, রসালো, সুমিষ্ট ও ছোট বিচির ও টকটকে লাল এই লিচু বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ লিচুর অন্যতম। এই লিচুর চাষ ব্যাপক আকারে নয়। ব্যক্তি উদ্যোগে কেউ কেউ বাড়িতে দু একটি গাছ লাগিয়ে থাকে। উদ্যান উন্নয়ন বিভাগ থেকে টিএস-৪ ও চায়না ১৪ প্রজাতির লিচু এখন ব্যাপক। এগুলোও উন্নত জাত এবং বোম্বাই লিচু হিসেবে সর্বত্র পরিচিত।

তবে কিছু কিছু বাগান ব্যবসায়ী বাদুড়, চামচিকা ও ফলভোগ পাখির হাত থেকে লিচুকে রক্ষার জন্য কারেন্ট জাল ব্যবহার করছে।
কারবাইড ও কীটনাশকমুক্ত লিচু মেহেরপুরের গাছে গাছে এখন শোভা পাচ্ছে। ফলনও ভাল হয়েছে। পোকামাকড়, রোগবালাই নেই। ঝড় বৃষ্টি না থাকায় লিচুর ক্ষতি হয়নি। কোন ভাইরাসে ধরেনি। প্রথমদিকে গুটি ভালই হয়েছিল। কিন্তু বৃষ্টি না হওয়ায় পরে গুটি শুকিয়ে ঝড়ে গেছে। তীব্র খরার কারণে এবার লিচু মোটা না হয়ে অনেকটা শুকিয়ে দ্রুতই পেকে গেছে। তারপরও ফলন নিয়ে খুশি বাগান মালিকরা। গতবার করোনার কারণে লিচুর বাজারদর পায়নি। এবার খরার কারণে লিচুর বাজারদর ভাল হলেও বিক্রি কম নিয়ে চিন্তিত চাষীরা। গাছ থেকে লিচু পেড়ে বাজারজাত নিয়ে ব্যাস্ত সময় পার করছেন চাষী ও বাগান মালিকরা। মেহেরপুরে বোম্বাই, চায়না থ্রী, আটি লিচু সহ সব ধরণের জাতের লিচু এখন পেরে বাজারজাত করা নিয়ে ব্যাস্ত সকলে। স্থানীয় বাজারে এবার ভাল এক’শ লিচু ২শ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কাউন বিক্রি হচ্ছে ২১-২৬শ টাকা দরে। বাইরে লিচুর চাহিদা এবং দাম ভাল। কিন্তু করোনায় পরিবহন খরচ বেড়েছে। তাই বাইরের ব্যবসায়ীদের আগমন কম। কৃষি বিভাগ বলছে- এবার মেহেরপুর জেলায় ৬৮০ হেক্টর জমিতে লিচু হয়েছে।
[১] রংপুরে কৃষকের স্বপ্ন কেড়ে নিয়েছে নেক ব্লাস্ট, বোরো ধানে চিটা ≣ [১] আলোচিত আলমগীর হত্যা মামলার আসামি গ্রেপ্তার ≣ [১] নবীগঞ্জের প্রভাষকের বিরুদ্ধে ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগ

মেহেরপুর শহরের বাগান মালিক হাসানুজ্জামান হিলন বলেন, খরার কারণে লিচু ফলন ভাল হয়নি। করোনার কারণে লিচুর কিনতে আসছে না বাইরের ব্যবসায়ীরা। ফলে লিচুর দাম ভাল থাকা সত্বেও লিচু নিয়ে চিন্তিত আছি আমরা। লিচু গাছেই নষ্ট হচ্ছে। বেশির ভাগ বাগানে একবছর লিচু ধরলে পরের বছর লিচু নাও ধরতে পারে। তাই লিচুর গাছ পরিচর্যার খরচ উঠছে না। এনিয়ে আমরা খুর চিন্তাই আছি।

সদরের বন্দর গ্রামের লিচু চাষী সাকিব হোসেন বলেন, আমি দীর্ঘ দিন ধরে লিচুর চাষ করছি। বাগান লীজ নিয়ে এবার লিচুর উৎপাদন ভাল হয়েছে। কিন্তু খরার কারণে লিচু মোটা হয়নি। দাম ভাল হওয়ায় এবছরে লিচু বিক্রি করতে পারলে আমরা ক্ষতি পুষিয়ে তুলতে পারব। তারপরও করোনার কারণে সকল ব্যবসার উপর প্রভাব পড়েছে।

লিচু চাষী তোফিক হোসেন বলেন, এবছরে খরা হওয়ার পরেও লিচু মোটামুটি ভালো হয়েছে। তবে করোনার কারণে দাম একটু কম ছিল কিন্তু বর্তমান বাজার দর ভালো আছে। এখন যদি ঝড়-বৃষ্টি না হয় তাহলে যেগুলো লিচু আছে তা ভালো থাকবে ।
মেহেরপুরের স্থানীয় লিচু ব্যবসায়ী হামিদুল ইসলাম বলেন, মেহেরপরের লিচু ও আম দুটিই ভালো হয়। জেলার বাহিরে মাল পাঠাতে না পেরে লোকসান গুনতে হবে এবছর। তারপরেও বেশির ভাগ ফুটপাতে বেশী লিচু বিক্রয় হয়। করোনার কারনে সেগুলো হচ্ছে না। এভাবে যদি চলতে থাকে তাহলে আমরা যারা ছোট ব্যবসায়ীরা আছি তারা সব লোকসানে পড়ে যাবে।
বগুড়ার থেকে আসা লিচু ব্যবসায়ী এরশাদ আলী বলেন, মেহেরপুরের লিচুর খ্যাতি আছে। সুস্বাধু আছে। বগুড়া থেকে প্রতিবারের মত এবারও লিচুর কিনতে এসেছি। খরার কারণে লিচুর কম হলেও এবার লিচুতে কোন পোকামাকড় হয়নি। ফ্রেস লিচু। মেহেরপুরের লিচুর চাহিদা দেশের সকল স্থানে। আমি বেশির ভাগ লিচু কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, গার্মেন্ট মালিকদের দিয়ে থাকি এবং ভালো দাম পাই। মেহেরপুরের লিচু শুনলে আগের বিক্রয় হয়ে যায়। যার করনে আমাদের টেনশন করা লাগে না।
মেহেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক স্বপন কুমার খাঁ জানান, প্রথমদিকে গুটি ভাল ছিল। বৃষ্টি না হওয়ায় পরে গুটি শুকিয়ে ঝড়ে গেছে। তারপরও ৬৮০ হেক্টর জমিতে লিচুর ভাল ফলন হয়েছে। দামও ভাল। বৃষ্টি না হওয়ায় লিচুর কালার করতে কোন কেমিকেল বা ফরমালিন ব্যহার করা হচ্ছে না। এমনিতেই লিচুর কালার হয়েছে। এখান থেকে দেশের বিভিন্ন জেলায় লিচু সরবরাহ করা হচ্ছে। এতে বাগান মালিক ও ব্যবসায়ীরা উভয়ে লাভবান হচ্ছে। স্বাস্থ্যসম্মত লিচু উৎপাদনে কৃষি বিভাগ সব সময় পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *